নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ ফরিদপুরের নগরকান্দায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত জাতীয়তাবাদী কৃষক দল নেতা কবির ভূঁইয়া (৫০) হত্যা মামলায় হুকুমের আসামি করা হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (পদ স্থগিত) শামা ওবায়েদকে। মামলায় নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাসহ ৩৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

শনিবার (২৪ আগস্ট) সকালে কবির ভূঁইয়ার স্ত্রী মোনজিলা বেগম বাদী হয়ে নগরকান্দা থানায় হত্যা মামলাটি করেন।

মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিবুর রহমান বাবুল তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান মুকুল, সালথা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান তালুকদার, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খন্দকার খায়রুল আলম আজাদ, জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান তৈয়ব ও সালথা উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান আসাদ।

মামলার এজাহারে বলা হয়, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের (পদ স্থগিত) নিজ এলাকায় আগমন উপলক্ষে গত ২১ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে নগরকান্দা পেট্রোল পাম্পের সামনে পথসভার আয়োজন করে থানা কৃষক দল, যুবদল ও ছাত্রদল। এই সংবাদ পেয়ে বিএনপি নেত্রী শামা ওবায়েদ রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ওই পথসভা পণ্ড করার জন্য তার লোকজনকে নির্দেশ দেন।

তার নির্দেশ পাওয়ার পর আসামিরা ঘটনার সময় নগরকান্দা বেইলি ব্রিজের পশ্চিম পাড়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় কবির ভূঁইয়া বাজার করার জন্য নগরকান্দায় এলে শামা ওবায়েদের নির্দেশে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

ওই সংঘর্ষ-সহিংসতার ঘটনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের সব দলীয় পদ স্থগিত করে বিএনপি।

মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল-নগরকান্দা) মো. আসাদুজ্জামান শাকিল বলেন, ‘সংঘর্ষে নিহত কবিরের স্ত্রী বাদী হয়ে সকালে হত্যা মামলাটি করেন। আমরা মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেব। পাশাপাশি জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলবে।’

স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (পদ স্থগিত) শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক (পদ স্থগিত) শহিদুল ইসলাম বাবুলের বাড়ি নগরকান্দায়। তারা দুজনই ফরিদপুর-২ (সালথা-নগরকান্দা) আসনে এমপি পদে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল।

আওয়ালী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২১ আগস্ট সকালে বিশাল গাড়িবহর নিয়ে মহড়া দিয়ে নিজ এলাকা নগরকান্দায় আসেন বাবুল। তার আসা উপলক্ষে নগরকান্দা পেট্রোল পাম্পের সামনে পথসভার আয়োজন করা হয়। অন্যদিকে শামা ওবায়েদের সমর্থকরাও সেখানে জড়ো হন। একপর্যায় উভয় পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ। এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বেলা ১১টার দিকে বাবুল গ্রুপের সমর্থকদের ধাওয়া দিয়ে নগরকান্দা পৌর সদর বাজার নিয়ন্ত্রণে নেয় শামার সমর্থকরা। সংঘর্ষে উভয় পক্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হন। তাদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও নগরকান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

কবির ভূঁইয়া নামে এক কৃষক দল নেতা হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। তিনি শহিদুল ইসলাম বাবুলের সমর্থক। নিহত কবির সদরের ছাগলদী গ্রামের মৃত আবুল বাসার ভূঁইয়ার ছেলে ও উপজেলা কৃষক দলের সদস্য।

সংঘর্ষে নিজের সমর্থক নিহতের ঘটনায় ওই দিন বিকালে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে শহিদুল ইসলাম বাবুল অভিযোগ করেন, এই খুনের মদদদাতা ও নির্দেশদাতা শামা ওবায়েদ।

তবে শহিদুল ইসলামের বক্তব্যকে নির্জলা মিথ্যাচার বলে অখ্যায়িত করেন শামা ওবায়েদ। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বৈরাচারকে হটিয়েছি। এখন হাসপাতালের শয্যায় অসংখ্য আহত ভাই কাতরাচ্ছে। প্রতিদিন মারাও যাচ্ছে। এ অবস্থায় তোরণ বানিয়ে উৎসব করা আমাদের সাজে না। এ বিষয়টিই হয়তো এলাকার মানুষ মেনে নিতে পারেনি।’