০৯:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

অবহেলিত এক জনপদের নাম মাগুরার বৈখোলা

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট: ০৩:৫৪:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
  • / ৮৭

স্বপন বিশ্বাস, শালিখা মাগুরা প্রতিনিধিঃ অবহেলিত একটি জনপদ শালিখা উপজেলার শতখালী ইউনিয়নের বৈখোলা গ্রাম। যেখানে কম-বেশি উন্নয়ন হলেও অবহেলিত রয়ে গেছে সড়ক ব্যাবস্থা।স্বাধীনতার পর আজ পর্যন্ত উন্নয়ন বঞ্চিত এই গ্রামের গ্রামীণ সড়ক ব্যাবস্থা।যার কারনে চলাচলের জন্য দূর্ভোগে রয়েছেন অত্র এলাকার হাজারও মানুষ। জরুরি ভিত্তিতে রাস্তাটি সংষ্কারসহ পাকা করনের দাবী করেছে এলাকাবাসী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গ্রামের বেহাল রাস্তা সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। এই কর্দমাক্ত রাস্তা দিয়েই চলাচল করছে সাধারণ কৃষক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার পড়ুয়া শিক্ষার্থী। কোথাও রাস্তার অংশ বৃষ্টির কাঁদা পানিতে ভেঙ্গে গেছে। এরকম অনেক চিত্র চোখে পড়েছে। নির্বাচন আসলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অবহেলায় এখনও এলাকার চেহারা মান্ধাতার আমলের মত রয়েছে।

এখানে শত শত স্থায়ী পরিবারের প্রায় ১হাজার মানুষের বসবাস। গ্রামটিতে ২টি জামে মসজিদ, ১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হলেও গ্রামের মাটির রাস্তায় ইটের সোলিং বা কার্পেটিং হয়নি। বৃষ্টির সময় থাকে হাঁটু কাঁদা। রেহাই পায় না এই এলাকা সহ অন্য গ্রামের মানুষ।

প্রতি বছর বৃষ্টি মৌসুমে গ্রামের মানুষের পড়তে হয় সীমাহীন দুর্ভোগে, বিপাকে পড়তে হয় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় সমস্যায় পড়তে হয় ইমারজেন্সি রুগী নিয়ে।হঠাৎ কোন ব্যাক্তি অসুস্থ হলে দ্রুত উপজেলা সদরে নেওয়া সম্ভব হয়না। এমনকি পল্লী চিকিৎসকেরাও অনুপযোগী রাস্তার জন্য সহজে কোন রোগীর বাড়িতে আসতে চায় না। শালিখা উপজেলার মূল কেন্দ্র আড়পাড়া বাজার যশোর মাগুরা প্রধান সড়কের রামকান্তপুর গ্রাম থেকে পূর্বদিকে ৩ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাটি বৈখোলা গ্রামের ভিতর দিয়ে যেয়ে কাতলী-জুনারী সড়কের সাথে মিলিত হয়েছে।

বৈখোলা গ্রামের আলাউদ্দিন বলেন, ১৯৬৫ সালে আমার দাদা ও আরো কয়েকজন ভারতের থেকে বিনিময় করে বাংলাদেশে চলে আসে।সেই পাকিস্তান আমল থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের গ্রামে কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে নাই। তিনি আরো বলেন, গ্রামের কয়েকজনের বাড়িতে অটোভ্যান আছে, অনেক ব্যক্তির নিজস্ব মটর সাইকেল, ইজিবাইক, নসিমন, করিমন ভ্যান গাড়ী আছে। যারা এ বাহন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। এসকল যান রেখে আসতে হয় অন্য গ্রামে। নাহলে রাস্তার পার্শ্বে পলিথিন কাগজ দিয়ে ঢেঁকে রাখতে হয়। অনেক সময় চুরির ঘটনা ঘটে। চলতি মাসে ভারি বৃষ্টিতে এ গ্রামের কয়েক জায়গা মাটির রাস্তা নিচু ও অবহেলিত রাস্তার উপর দিয়ে পানি ছাপিয়ে কালার বিলে চলে যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, কাঁচা রাস্তা অবহেলিত থাকায় উত্তর পাড়ার আলম হোসেনের বাড়ির সামনে নিঁচু থাকায় রাস্তার উপর জাল ফেলে মাছ ধরছে তারা।

একই গ্রামের ইনসান আলী বলেন, বছরের ৬ থেকে ৭ মাস রাস্তায় কাঁদা পানি জমে থাকে। যার ফলে প্রাইমারির গণ্ডি পেরোলেও স্কুল এবং কলেজে পড়ালেখা আর হয় না। এজন্য আমাদের গ্রামে অশিক্ষিতর হার ও বাল্য বিবাহ অনেক বেশি।

বৈখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক মিতা রানী বিশ্বাস বলেন, গ্রামে চলাচলের একমাত্র রাস্তা কাঁদা মাটি থাকার কারণে স্কুলের শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে চায় না। আমরা শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি যেয়েও স্কুল মুখি করতে পারছিনা। তিনি আরো বলেন আমরা শিক্ষকরাই রাস্তায় কাঁদার জন্য স্কুলে আসতেই হিমশিম খেয়ে যায়। স্কুলের শিশু শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা দ্রুতই রাস্তাটি পাকা করনের জন্য অনুরোধ জানান।

শতখালী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক সুমন মিয়া বলেন,বৈখোলা নামে একটি গ্রাম আছে তার জানা নাই।গ্রামবাসীদের ইউনিয়ন পরিষদে একটি আবেদন করার পরামর্শ দেন এবং বরাদ্দ সাপেক্ষে তিনি ব্যবস্থা নিবেন।

জানতে চাইলে শালিখা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ বনি আমিন বলেন,নতুন প্রকল্পের তালিকায় বৈখোলা গ্রামের রাস্তাটির নাম দেওয়া আছে। আশা করি এই অর্থবছরে রাস্তাটি হয়ে যাবে।

এলাকাবাসী অবহেলিত কাঁচা রাস্তাটিতে ইটের সোলিং অথবা কার্পেটিং করে চলাচলের উপযোগীর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

অবহেলিত এক জনপদের নাম মাগুরার বৈখোলা

আপডেট: ০৩:৫৪:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

স্বপন বিশ্বাস, শালিখা মাগুরা প্রতিনিধিঃ অবহেলিত একটি জনপদ শালিখা উপজেলার শতখালী ইউনিয়নের বৈখোলা গ্রাম। যেখানে কম-বেশি উন্নয়ন হলেও অবহেলিত রয়ে গেছে সড়ক ব্যাবস্থা।স্বাধীনতার পর আজ পর্যন্ত উন্নয়ন বঞ্চিত এই গ্রামের গ্রামীণ সড়ক ব্যাবস্থা।যার কারনে চলাচলের জন্য দূর্ভোগে রয়েছেন অত্র এলাকার হাজারও মানুষ। জরুরি ভিত্তিতে রাস্তাটি সংষ্কারসহ পাকা করনের দাবী করেছে এলাকাবাসী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গ্রামের বেহাল রাস্তা সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। এই কর্দমাক্ত রাস্তা দিয়েই চলাচল করছে সাধারণ কৃষক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার পড়ুয়া শিক্ষার্থী। কোথাও রাস্তার অংশ বৃষ্টির কাঁদা পানিতে ভেঙ্গে গেছে। এরকম অনেক চিত্র চোখে পড়েছে। নির্বাচন আসলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অবহেলায় এখনও এলাকার চেহারা মান্ধাতার আমলের মত রয়েছে।

এখানে শত শত স্থায়ী পরিবারের প্রায় ১হাজার মানুষের বসবাস। গ্রামটিতে ২টি জামে মসজিদ, ১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হলেও গ্রামের মাটির রাস্তায় ইটের সোলিং বা কার্পেটিং হয়নি। বৃষ্টির সময় থাকে হাঁটু কাঁদা। রেহাই পায় না এই এলাকা সহ অন্য গ্রামের মানুষ।

প্রতি বছর বৃষ্টি মৌসুমে গ্রামের মানুষের পড়তে হয় সীমাহীন দুর্ভোগে, বিপাকে পড়তে হয় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় সমস্যায় পড়তে হয় ইমারজেন্সি রুগী নিয়ে।হঠাৎ কোন ব্যাক্তি অসুস্থ হলে দ্রুত উপজেলা সদরে নেওয়া সম্ভব হয়না। এমনকি পল্লী চিকিৎসকেরাও অনুপযোগী রাস্তার জন্য সহজে কোন রোগীর বাড়িতে আসতে চায় না। শালিখা উপজেলার মূল কেন্দ্র আড়পাড়া বাজার যশোর মাগুরা প্রধান সড়কের রামকান্তপুর গ্রাম থেকে পূর্বদিকে ৩ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাটি বৈখোলা গ্রামের ভিতর দিয়ে যেয়ে কাতলী-জুনারী সড়কের সাথে মিলিত হয়েছে।

বৈখোলা গ্রামের আলাউদ্দিন বলেন, ১৯৬৫ সালে আমার দাদা ও আরো কয়েকজন ভারতের থেকে বিনিময় করে বাংলাদেশে চলে আসে।সেই পাকিস্তান আমল থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের গ্রামে কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে নাই। তিনি আরো বলেন, গ্রামের কয়েকজনের বাড়িতে অটোভ্যান আছে, অনেক ব্যক্তির নিজস্ব মটর সাইকেল, ইজিবাইক, নসিমন, করিমন ভ্যান গাড়ী আছে। যারা এ বাহন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। এসকল যান রেখে আসতে হয় অন্য গ্রামে। নাহলে রাস্তার পার্শ্বে পলিথিন কাগজ দিয়ে ঢেঁকে রাখতে হয়। অনেক সময় চুরির ঘটনা ঘটে। চলতি মাসে ভারি বৃষ্টিতে এ গ্রামের কয়েক জায়গা মাটির রাস্তা নিচু ও অবহেলিত রাস্তার উপর দিয়ে পানি ছাপিয়ে কালার বিলে চলে যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, কাঁচা রাস্তা অবহেলিত থাকায় উত্তর পাড়ার আলম হোসেনের বাড়ির সামনে নিঁচু থাকায় রাস্তার উপর জাল ফেলে মাছ ধরছে তারা।

একই গ্রামের ইনসান আলী বলেন, বছরের ৬ থেকে ৭ মাস রাস্তায় কাঁদা পানি জমে থাকে। যার ফলে প্রাইমারির গণ্ডি পেরোলেও স্কুল এবং কলেজে পড়ালেখা আর হয় না। এজন্য আমাদের গ্রামে অশিক্ষিতর হার ও বাল্য বিবাহ অনেক বেশি।

বৈখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক মিতা রানী বিশ্বাস বলেন, গ্রামে চলাচলের একমাত্র রাস্তা কাঁদা মাটি থাকার কারণে স্কুলের শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে চায় না। আমরা শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি যেয়েও স্কুল মুখি করতে পারছিনা। তিনি আরো বলেন আমরা শিক্ষকরাই রাস্তায় কাঁদার জন্য স্কুলে আসতেই হিমশিম খেয়ে যায়। স্কুলের শিশু শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা দ্রুতই রাস্তাটি পাকা করনের জন্য অনুরোধ জানান।

শতখালী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক সুমন মিয়া বলেন,বৈখোলা নামে একটি গ্রাম আছে তার জানা নাই।গ্রামবাসীদের ইউনিয়ন পরিষদে একটি আবেদন করার পরামর্শ দেন এবং বরাদ্দ সাপেক্ষে তিনি ব্যবস্থা নিবেন।

জানতে চাইলে শালিখা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ বনি আমিন বলেন,নতুন প্রকল্পের তালিকায় বৈখোলা গ্রামের রাস্তাটির নাম দেওয়া আছে। আশা করি এই অর্থবছরে রাস্তাটি হয়ে যাবে।

এলাকাবাসী অবহেলিত কাঁচা রাস্তাটিতে ইটের সোলিং অথবা কার্পেটিং করে চলাচলের উপযোগীর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।