খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, যশোর | তারিখঃ ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 6971 বার
আসাদুজ্জামান আসাদ : ‘ফুলের রাজধানী’ খ্যাত যশোরের গদখালিতে গোলাপ ফুলের দাম এবার রেকর্ড ভেঙেছে বলে চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
ফাগুন ও ভালবাসার উত্তাপ ফুলের বাজারে গত সপ্তাহে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৮-১০ টাকায়; রোববার বিক্রি হয় ২৫-৩০ টাকায়।
চাষিরা পাইকারদের কাছে প্রতিটি গোলাপ ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করছেন। চায়না গোলাপ বা লংস্টিক রোজ প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। আর গ্রাহক পর্যায়ে খুচরা বিক্রি হচ্ছে রংভেদে ৪০-৪৫ টাকা।
জানুয়ারির শেষে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৩-৪ টাকায়।
সপ্তাহখানেক আগে প্রতিটি গোলাপ ৮-১০ টাকায় বিক্রি হলেও রোববার তা বিক্রি হয়েছে ২৫-৩০ টাকায়। রংভেদে প্রতিটি গোলাপের দাম ৪০ টাকা ছাড়াতে পারে।
ফাগুন ও ভালবাসা দিবস উপলক্ষে গদখালি থেকে রোববার ৩০০ জন ফুলচাষি অন্তত ৩ লাখ বিভিন্ন রঙয়ের গোলাপ ফুল নিয়ে হাটে আসেন। শুধু গোলাপই গড়ে ৬৬ লাখ টাকা বেচাবিক্রি হয়েছে বলে জানান যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম।
গোলাপের দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে গদখালির পাইকারি ফুল ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন বলেন, “এবার গোলাপ ফুলে রোগ দেখা দেওয়ায় উৎপাদন কম হচ্ছে। আবার এই সময় বাজারে চাহিদা বেশি। তাই দামও চড়া। ফুলের ব্যবসা করছি পনেরো বছর। এত বেশি দামে কখনও গোলাপ বেচাবিক্রি করিনি।”
এত কিছুর পরও চির আকাঙ্ক্ষিত দিনটিতে তরুণ-তরুণীদের হাতে পছন্দের ফুল তুলে দিতে ব্যস্ততার কমতি নেই ফুল ব্যবসায়ীদের।
গোলাপ ফুলের উৎপাদন কম হওয়ায়
‘ভালবাসা ও ফাগুনের উত্তাপ পড়েছে ফুলের বাজারে’ এ সম্পর্কে যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, গদখালিতে এবার গোলাপ ফুলের উৎপাদন কম হওয়ায় কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন। ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে এমন চড়া দামে ফুল বিক্রি হচ্ছে বলে তারা একটু ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছেন। এ বছর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসবকে কেন্দ্র করে ৪০কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আশা করছি।
সৈয়দপাড়া গ্রামের ফুল চাষি সোহেল রানা বলেন, এ বছর অন্যান্য ফুল খুব ভালো হলেও গোলাপে কুঁড়ি পচা রোগ দেখা যাচ্ছে। ৮২ শতক জমিতে দেশি গোলাপ ও চায়না গোলাপ চাষ করেছি। রোববার বিক্রি করেছি ২৭ হাজার টাকার গোলাপ। প্রতিটি দেশি গোলাপ বিক্রি করেছি ৩০ টাকা; আর চায়না গোলাপ ৩৮ টাকা।
আশা করছি এবার আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার ফুল বিক্রি হবে।
গদখালি গ্রামের ফুল চাষি ইব্রাহিম হোসেন বলেন, “এবার গোলাপের উৎপাদনে ধস নেমেছে। কাঁচাপাতা ঝরা ও কুঁড়ি পচা রোগ চাষিদের শেষ করে দিয়েছে। এজন্য গোলাপের দাম রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ১০ বছর ধরে ফুলচাষ করছি, কখনও ১৮ টাকা পিসও গোলাপ বিক্রি করতে পারিনি।”
এবার ফুলের দাম আরও বাড়বে এবং রেকর্ড পরিমাণ দামে গোলাপ বিক্রি হবে বলে তিনি মনে করেন।
হাড়িয়া নিমতলা গ্রামের ফুল চাষি ফারুক হোসেন ৬৬ শতক জমিতে এবার গোলাপ চাষ করেছেন। গদখালির ফুল বাজারে ৩০০পিস গোলাপ নিয়ে এসেছেন তিনি।
ফারুক বলেন, ২৫শ’ টাকা শ’ হিসেবে গোলাপ বিক্রি করিছি। পেয়েছি সাড়ে ৭ হাজার টাকা। এবছর পঁচন রোগের কারণে উৎপাদন কম। তবে দাম বেশি হওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে।
বসন্তে উত্তাপ ফুলের বাজারে
‘ফুলের বাজার ডটকম’ নামের অনলাইনের তরুণ উদ্যোক্তা মো. আল আমিন বলেন, গত সপ্তায় প্রতিটি গোলাপ ফুল বিক্রি হয়েছে ৮-১০ টাকায়; রোববার বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়। চায়না গোলাপ লংস্টিক রোজ গত সপ্তাহে ২৫-৩০ টাকা এবং এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। রজনীগন্ধা স্টিক ৮-১০ টাকার প্রতিটি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। গ্লাডিওলাস রংভেদে ভেদে ১২-১৫ টাকার ফুল বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। প্রতিটি ১০ টাকার জারবেরা বিক্রি হচ্ছে ২০টাকায়।
এ ছাড়া চন্দ্রমল্লিকা প্রতিটি ৫ টাকা, গাঁদা প্রতিহাজার ৭০০ টাকা, লিলিয়াম প্রতিটি ১০০ টাকা, রডস্টিক প্রতি বান্ডিল ১৫০ টাকা, জিপসি প্রতি আঁটি ৩০ টাকা ও কামিনী পাতা প্রতি আঁটি ২৫টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
গত তিন দিনে ৫০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছেন বলে আল আমিন জানান।
নন্দীর ডুমুরিয়া গ্রামের গোলাপ চাষি শাহাবুদ্দিন এবার ৩০শতক জমিতে গোলাপের চাষ করেছেন। সাইকেলে করে ৪০০পিস গোলাপ ফুল নিয়ে এসেছেন গদখালির ফুল বাজারে।
শাহাবুদ্দিন বলেন, গোলাপের ক্ষেতে ছত্রাক ও ভাইরাস আক্রমণ করেছে। অধিকাংশ গাছে ফুল আসেনি। তাই উৎপাদনও অনেক কম। এর পরও যা উৎপাদন হয়েছে, বাজারে ভালোই দাম পাচ্ছি।
যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, “এবার ভালোবাসা দিবসের বড় আকর্ষণ নেদারল্যান্ডসের সুগন্ধি ফুল ‘লিলিয়াম’। এছাড়া রঙিন গ্লাডিউলাস, জারবেরা, রজনীগন্ধা ও নানা রঙের গোলাপ তো রয়েছেই।”