আসাদুজ্জামান আসাদ।।
যশোরের শার্শা উপজেলার সীমান্তঘেঁষা গ্রাম কাশিপুর। ওপারে ভারতের চব্বিশ পরগনার বয়রা। কাশিপুরের এক পুকুরপাড়ে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদসহ সাত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা।

যশোরের সীমান্তবর্তী শার্শা উপজেলা সদর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার উত্তরে সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম কাশিপুর। ওপারে ভারতের চব্বিশ পরগনার বয়রা। এপারে বাংলাদেশের গোবিনাথপুর আর কাশিপুর মৌজার সীমানার কাশিপুর পুকুর পাড়ে চিরতরে ঘুমিয়ে আছেন শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ, শহীদ সিপাহী আব্দুস ছাত্তার বীরবিক্রম (প্রাক্তন ইপিআর), শহীদ সিপাহী এনামুল হক বীরপ্রতিক (প্রাক্তন ইপিআর), শহীদ সৈয়দ আতর আলী (তদানিন্তন গণপরিষদ সদস্য), শহীদ সুবেদার মনিরুজ্জামান (প্রাক্তন ইপিআর), শহীদ বাহাদুর আলী এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আহাদ (এই মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীনতার পরে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন)।

যশোরের এই অঞ্চলটি ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেষা হওয়ায় তখন ‘মুক্ত এলাকা’ হিসেবে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযুদ্ধাদেরকে এখানে সমাহিত করা হয়।

শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের স্মৃতিস্তম্ভসহ সাত শহীদের সমাধিস্থল সারা বছরই অযতœ-অবহেলায় পড়ে থাকে। এখানে নেই কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী, দর্শনার্থীদের বসার বা বিশ্রামের কোনো ব্যবস্থা। নেই তদারকি কিম্বা দেখভালের কেউ। বিষয়টি একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনো সুরাহা না হওয়ার অভিযোগ মুক্তিযোদ্ধাদের।
তাদের দাবি, কাশিপুরে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের স্মৃতিস্তম্ভসহ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিস্তম্ভ গুলি সরকারিভাবে সংরক্ষণ করে এখানে একটি মুক্তিযোদ্ধা মিউজিয়াম স্থাপন করা হোক।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ-শার্শা উপজেলা কমান্ড কাউন্সিলের তথ্য, উইকিপিডিয়া ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নাসির উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গফুর মাস্টার, মুক্তিযোদ্ধা আহম্মদ আলি, মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন মাস্টার, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুর ইসলাম মল্লিক, মুক্তিযোদ্ধা আনছার আলি, মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলি ও শহীদদের স্বজনদের সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। কাশিপুরে সমাহিত এই শহীদদের সম্পর্কে তারা জানান সেদিনের সেই বীরত্বগাথা কথা।
কাশীপুর অনেকটা মুক্ত এলাকার মতো ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষুদ্র একটি দল কাশীপুরে গোপনে অবস্থান করত। এই সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশে অণুপ্রবেশ করতেন। ভারতে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা প্রায়ই সীমান্ত অতিক্রম করে অ্যাম্বুশ করতেন।

শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ
১৯৭১ সালের ৫সেপ্টেম্বর যশোর জেলার ঝিকরগাছা থানার ছুটিপুরে নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যুহের পাশের গোয়ালহাটি গ্রামে নূর মোহাম্মদকে অধিনায়ক করে পাঁচ জনের একটি টিম টহলের জন্য পাঠানো হয়। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে হঠাৎ পাকবাহিনী টহলটিমের তিন দিক থেকে ঘিরে গুলিবর্ষণ শুরু করে। পেছনে মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা থেকে পাল্টা গুলিবর্ষণ করা হয়। তবু টহলটিমকে নিরাপদে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে সিপাহী নান্নু মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।তখন নূর মোহাম্মদ সহযোদ্ধা নান্নু মিয়াকে কাঁধে তুলে নেন। এসময় নূর মোহাম্মদ হাতের এলএমজি দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করলে শত্রুপক্ষ পিছু হটতে বাধ্য হয়। হঠাৎ করেই শত্রুর মর্টারের একটি গোলা এসে লাগে তার ডান কাঁধে। এতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন।

তখন আহত নান্নু মিয়াকে বাঁচানোর জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেন নূর মোহাম্মদ। তিনি তার এলএমজি সিপাহী মোস্তফাকে দিয়ে মোস্তফার রাইফেলটি নিয়ে নান্নু মিয়াকে নিয়ে যেতে বললেন। এরপর ওরা যাতে নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে পারে সেজন্য ঐ রাইফেল চালিয়ে শত্রুসেনাদের অগ্রসারতা ঠেকিয়ে রাখলেন। শত্রুর মনোযোগ তার দিকে রাখতে শত্রুর দিকে অনবরত গুলি ছুঁড়তে শুরু করলেন। তখন অন্য সঙ্গীরা অনুরোধ করলেন তাদের সাথে যাওয়ার জন্যে কিন্তু তাকে বহন করে নিয়ে যেতে গেলে সবাই মারা পড়বে এই আশঙ্কায় তিনি রণক্ষেত্র ত্যাগ করতে রাজি হলেন না। বাকিদের আদেশ দিলেন তাকে রেখে চলে যেতে। শেষ পর্যন্ত আদেশ অনুসরণ করে তাকে রেখেই নিরাপদে যেতে পারলেন সহযোদ্ধারা।

এদিকে সমানে গুলি ছুড়তে লাগলেন রক্তাক্ত নূর মোহাম্মদ। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে নূর মোহাম্মদ নিস্তেজ হয়ে পড়েন। এই অসম যুদ্ধে তিনি শত্রুপক্ষের এমন ক্ষতিসাধন করেন যে তারা এই মৃত্যুপথযাত্রী বীর যোদ্ধাকে বেয়নেট চার্জ করে চোখ দুটো উপড়ে ফেলে এবং মস্তক বিদীর্ন করে ঘিলু ছড়িয়ে ফেলে। পরে সহযোদ্ধারা এসে পাশের একটি ঝোপের মাঝ থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে কাশিপুর সীমান্তের মুক্ত এলাকায় তাকে সামরিক মর্যাদায় দাফন করেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করেন।

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইলের মহেশখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম জেনাতুননেছা। বাবা আমানত শেখ। নূর মোহাম্মদ ছিলেন বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান।দারিদ্রতার কারণে শিক্ষাক্ষেত্রে তার অগ্রগতি হয়নি। ছোট বেলায় তিনি তার বাবা-মাকে হারান।
ইপিআর সিপাহী শহীদ আব্দুস ছাত্তার বীরবিক্রম ইপিআর সিপাহী শহীদ আব্দুস ছাত্তার বীরবিক্রম চৌগাছা উপজেলার যাদবপুর বিওপিতে কর্মরত ছিলেন। ভারতে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা প্রায়ই সীমান্ত অতিক্রম করে অ্যাম্বুশ করতেন শার্শা ও ঝিকরগাছার বিভিন্ন এলাকায়। এরই ধারাবাহিকতায় ৭১ এর ২১ সেপ্টেম্বর ঝিকরগাছার রাজাপুর এলাকায় আব্দুস সাত্তারসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর টহল দলকে অ্যাম্বুশ করেন। তারা জঙ্গলের ভিতর সুবিধাজনক একটি স্থানে অবস্থান নেন। আশপাশে কোন বাড়িঘর বা মানুষজন ছিল না। মুক্তিযোদ্ধাদের সেখানে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। অপেক্ষার প্রায় এক পর্যায়ে পাকিস্থানি সেনা টহল দল সেখানে হাজির হয়।

ফাঁদের মধ্যে আসামাত্র মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র গর্জে ওঠে। পাকিস্তানি সেনারা এমন আক্রমণের জন্য প্রস্তুতই ছিল। তারাও পাল্টা আক্রমণ চালায়।এলাকাটা নিমেষে পরিণত হয় রণক্ষেত্রে।গোলাগুলিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা।তারা ব্যাপক গোলাগুলি করে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে।
মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান ও প্রস্তুতি ছিল যথেষ্ট ভালো। তাই তারা বিচলিত না হয়ে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। এসময় পাকিস্তানি সেনারা কিছুক্ষণের মধ্যেই কোণঠাসা ও পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে। এরপর তারা পালানোর পথ খুঁজতে থাকে। কিন্তু সে পথও ছিল প্রায় রুদ্ধ। এ অবস্থায় তারা মরিয়া হয়ে যুদ্ধ শুরু করে।এদিকে সাফল্য ও জয়ের নেশায় আব্দুস সাত্তার ও তার কয়েক সহযোদ্ধা ক্রল করে পাকিস্তানি সেনাদের দিকে এগিয়ে যান। চড়াও হন শত্রুর ওপর। তাঁদের অস্ত্রের গুলিতে হতাহত হয় বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। এমন সময় পাকিস্তানিদের এলএমজির বুলেট বিদীর্ণ করে দেয় অদম্য সাহসী আব্দুস সাত্তারের দেহ। রক্তে ভেসে যায় মাটি।সঙ্গে সঙ্গে নিভে যায় তার জীবনপ্রদীপ। শহীদ হন তিনি।

এদিনের যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর টহল দলের প্রায় সবাই নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে আব্দুস সাত্তারসহ দুজন শহীদ ও তিন-চারজন আহত হন। যুদ্ধ শেষে সহযোদ্ধারা আব্দুস সাত্তারকে সমাহিত করেন শার্শা উপজেলার কাশীপুরে।
মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার প্রাক্তন ইপিআর সিপাহী আব্দুস ছাত্তারকে বীরবিক্রম খেতাবে ভূষিত করেন। শহীদ আবদুস সাত্তারের পৈতৃক বাড়ি নেত্রকোনার মদন উপজেলার তালুককানাই গ্রামে। তার বাবার নাম মো. আবদুল বারী এবং মায়ের নাম আছিয়া খাতুন। তার স্ত্রীর নাম মহিমা খাতুন। তাঁদের সন্তান নেই।

ইপিআর সিপাহী শহীদ এনামুল হক বীরপ্রতিক :
ইপিআর সিপাহী শহীদ এনামুল হক বীরপ্রতিক চৌগাছা উপজেলার মাকাপুর বিওপিতে কর্মরত ছিলেন।

শার্শা উপজেলার ডিহি ইউনিয়নের অন্তর্গত ছিল কাশীপুর। এটি ছিলো ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের অদূরে। কপোতাক্ষ নদ কাশীপুরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত। সেখানে নদের ওপর একটি সেতু আছে। চৌগাছা থানার পশ্চিমে সীমান্ত এলাকায় যাওয়ার পথ এই সেতু দিয়ে।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সামরিক কৌশলগত কারণে মুক্তিবাহিনী ও পাকিন্তান সেনাবাহিনী, উভয়ের কাছেই কাশীপুর ছিল সমান গুরুত্বপূর্ণ। কাশীপুরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কোনো ঘাঁটি ছিল না। অদূরে ঝিকরগাছা ও চৌগাছা থানায় ছিল তাদের ঘাঁটি।

১৯৭১ সালের ১৭ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খবর আসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল কাশিপুর এলাকায় অবস্থান করছে।এসময় ভারত থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে এনামুল হকসহ মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত রওনা হলেন বাংলাদেশের ভেতরে। তারা সেনাবাহিনীর ওই দলকে আক্রমণ করবেন। একটু পরই তারা মুখোমুখি হলেন পাকিস্তানি সেনাদের। কাছাকাছি গিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে আক্রমণ শুরু করেন।

পাকিস্তানি সেনারাও ছিল সতর্ক। তারা পাল্টা গুলিবর্ষণ করে। তুমুল যুদ্ধ চলতে থাকে। গোলাগুলিতে গোটা এলাকা প্রকম্পিত। এনামুল হক ও তার সহযোদ্ধারা বিপুল বিক্রমে পাকিস্তানি সেনাদের পাল্টা আক্রমণ মোকাবিলা করেন। একপর্যায়ে তিনি কয়েকজন সহযোদ্ধা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তানি সেনাদলের উপর।

মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতায় পাকিস্তানি সেনারা হতবিহ্বল হয়ে পিছু হটে। অসীম সাহসী এনামুল হক এ সময় আরও এগিয়ে যান। তখন হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হন তিনি। আহত হয়েও দমে যাননি। বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ অব্যাহত রাখেন। তার অদম্য মনোবলে সহযোদ্ধারা উৎসাহিত ও উজ্জীবিত হন। কিন্তু মারাত্মক আহত এনামুল হক একটু পর ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে। নিভে যায় তার জীবন প্রদীপ।

পরে সহযোদ্ধারা তার মৃতদেহ উদ্ধার করে কাশিপুর সীমান্তের মুক্ত এলাকায় তাকে সামরিক মর্যাদায় দাফন করেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার তাঁকে বীরপ্রতিক খেতাবে ভূষিত করেন।

এনামুল হকের জন্ম বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলার আটজুরি ইউনিয়নের বাসাবাড়ি গ্রামে। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তার বাবার নাম আবদুল হাকিম গাজী এবং মায়ের নাম ফুলজান বিবি।

শহীদ সুবেদার মনিরুজ্জামান খান (প্রাক্তন ইপিআর):
সুবেদার মনিরুজ্জামান খান মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা চৌগাছা উপজেলার যাদবপুর, আন্দুলিয়া, হিজলী এবং বর্ণী বিওপির কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৭মে ছুটিপুর ঘাটিতে অবস্থানরত পাক ২৪ এলএল রেজিঃ কাশিপুর আক্রমন করলে বয়রা সাব সেন্টারের কমান্ডার ক্যাপ্টেন এমএন হুদার নির্দেশে এক প্লাটুন সৈন্য নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করেন। এক পর্যায়ে হাতাহাতি যুদ্ধের সুচনা হলে তিনি বীরবিক্রমে শত্রুর উপর ঝাপিয়ে পড়েন।কিন্তু ৪/৫ গজ দূরে লুকিয়ে থাকা শত্রুর আকর্ষিক বুলেটের আঘাতে তিনি ঘটনাস্থলেই শাহাদাত বরন করেন।

মনিরুজ্জামান খানের জন্ম টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতীর বাথুলিসাদী গ্রামে। বাবার নাম আকমল খান, মা আমেনা বেগম। স্ত্রী জাহানারা বেগম। তাঁদের এক ছেলে ও পাঁচ মেয়ে।

সাবেক গণপরিষদ সদস্য সৈয়দ আতর আলি :
মাগুরার একজন ক্রীড়া সংগঠক
সৈয়দ বারিক আনজাম বারকি তার দাদু সৈয়দ আতর আলি সম্পর্কে জানান, মাগুরার আপামর মানুষের ভালোবাসার পাত্র ছিলেন সৈয়দ আতর আলী। সৈয়দ আতর আলী রাজনীতিতে ছিলেন অত্যন্ত শান্ত ও নিষ্ঠাবান প্রকৃতির। রাজনীতিতে মানুষকে সঠিক নেতৃত্ব প্রদান ছিল তার অন্যতম লক্ষ্য। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি ছাত্র ও যুব সমাজকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সংগঠিত করতে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভারতের বনগাঁয় বাংলাদেশ মিশনের একটি শাখার কনভেনারের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখানে স্বাধীনতার জন্য মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া বাংলাদেশিদের ভারতে থাকা, খাওয়া, ট্রেনিং, চিকিৎসার ব্যবস্থা তিনি করতেন। একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন সৈয়দ আতর আলী। স্বাধীনতার জন্য দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করেও তিনি স্বাধীনতার লাল রক্তিম সূর্যটাকে দেখে যেতে পারেননি। শরীরের প্রতি যত্ন না নিয়ে দিনরাত একাধারে কাজ করতে যেয়ে তিনি সেখানেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আতর আলীকে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কল্যাণী জওহরলাল নেহরু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর গভীর রাতে তিনি পরলোক গমন করেন।

তার শেষ ইচ্ছা অনুয়ায়ী স্বাধীন বাংলার মাটিতে তার দাফন করা হয়। যশোর জেলার শার্শা থানার কাশিপুর গ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদের সঙ্গে ঘুমিয়ে আছেন নির্লোভ মানুষটি।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বাহাদুর আলী
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের শুচনালগ্নে ইপিআর বাহিনীর সাথে বিভিন্ন প্রতিরোধ যুদ্ধে সক্রিয় অংশ গ্রহন করেন। যশোর ঝিনেদা সড়কে পাকসেনাদের সাথে এক সন্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। সেই যুদ্ধে পাকবাহিনীর বিপুল সংখ্যক সেনা নিহত হয়। ওই যুদ্ধ পাকিস্থান সেনাদের গোলায় মারাতœক ভাবে আহত হন তিনি। সহযোদ্ধারা আহত বাহাদুর আলিকে বয়রা সাবসেন্টারের আওতায় এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু শতচেষ্টার পরও তাকে বাঁচানো যায় নি। চিকিৎসাধিন অবস্থায় সেখানে তার মৃত্যু হয়।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আহাদ:
আব্দুল আহাদ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে ইপিআর বাহিনীর সাথে বিভিন্ন প্রতিরোধ যুদ্ধে সক্রিয় অংশ গ্রহন করেন। বিহারের চাকুলিয়া হতে উচ্চতর প্রশিক্ষন গ্রহন করতঃ বয়রা সাব সেন্টারের অধিন বিভিন্ন যুদ্ধে অত্যান্ত সাহসিকতার সাথে অংশ গ্রহন করেন।নির্ভীক ও স্পষ্টভাষী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ১৯৮৮সালের ২৭অক্টোবর আততায়ীর হাতে নির্মম ভাবে নিহত হন।
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কেন্দ্রিয় কমান্ড কাউন্সিলের নির্বাহী সদস্য ফারুক হোসেন উজ্জল বলেন, এগুলো বাঙালির সংগ্রামের চিহ্ন। আর পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর নির্মমতার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। এগুলো সংরক্ষণ করা সম্ভব না হলে আগামী প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ভুলে যাবে।

শার্শা উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু বলেন, ইতোমধ্যে উপজেলা থেকে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবি সাত শহীদের স্মৃতিস্তম্ভ সরকারিভাবে সংরক্ষণ করে এখানে একটি মুক্তিযোদ্ধা মিউজিয়াম স্থাপন করা হলে আগামী প্রজন্মের সন্তানেরা দেশ স্বাধীনের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবেন।

(কৈফিয়তঃ-যশোরের শার্শার কাশিপুরে একজন বীরশ্রেষ্ঠ, একজন বীরবিক্রম, একজন বীর প্রতিকের স্মৃতিস্তম্ভসহ সাত সূর্যসন্তানের সমাধিস্থল রয়েছে। তাদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে যেয়ে অনেকটা সময় কেটে গেছে। এই ইতিহাস সংগ্রহ ও বিশিষ্টজনদের মতামত, সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে আমাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। শ্রম দিতে হয়েছে।

সাক্ষাৎকারগুলো গ্রহণ করতে বারবার ছুটে যেতে হয়েছে সেইসব মানুষদের কাছে ; যা ছিল আমার জন্য কষ্টসাধ্য। তার পরেও আমি আনন্দচিত্তে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জিীবিত মন নিয়ে এ কাজ করার চেষ্টা করেছি।

লেখকঃ-আসাদুজ্জামান আসাদ, কলেজ শিক্ষক ও কলামিস্ট।