০৮:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

বাঘারপাড়ায় বড় হচ্ছে (বিএনপির) দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব : তৃণমূলে চলছে সমালোচনা

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট: ০৯:৫৪:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫
  • / ৩১

সাঈদ ইবনে হানিফ : যশোরের বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলার বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে দলীয় কোন্দল ও সাংগঠনিক বিরোধ চরম আকার ধারণ করছে।

ইতিমধ্যে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কর্মকাণ্ড, মিছিল মিটিং, উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত স্পষ্ট গ্রুরুপিং লক্ষ্য করা গেছে। যা নিয়ে সাধারণ কর্মী সমর্থকদের মধ্যে চলছে আলোচনা সমালোচনা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যশোর-৪ (অভয়নগর-বাঘারপাড়া ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) সংসদীয় আসনে বিএনপির অন্যতম সম্ভাব্য প্রার্থী কেন্দ্রীয় কৃষক দল নেতা ‘প্রকৌশলী টিএস আইয়ুব হোসেনকে ঠেকাতে এককাট্টা হয়েছেন আসনটির দুই উপজেলার শীর্ষ নেতারা।

গত শনিবার (১৪ জুন) দুপুরে বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলার শীর্ষ নেতারা এক অনুষ্ঠানে টিএস আইয়ুবকে হটাতে এককাট্টা হওয়ার ঘোষণা দেন। একই মঞ্চে দুই উপজেলার নেতারা হাত উঁচিয়ে টিএস,আইয়ুব হোসেন এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন বক্তব্য দেন। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে আসনটিতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।

আইয়ুব হোসেন সমর্থকদের দাবি, জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি পক্ষ তাঁর বিরোধিতা করছে। আর আইয়ুব বিরোধীদের ভাষ্য, তিনি দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে ভালো আচরণ করেননি। বেশিরভাগ পদপদবি নিজের অনুগতদের মধ্যে ভাগাভাগি করে দিয়েছেন। যা নিয়ে বাঘারপাড়া উপজেলাসহ অভয়নগরে বিভিন্ন সময়ের ত্যাগী কর্মীদের চরম অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।

দলীয় সূত্র বলেছে, যশোর-৪ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। দেশ স্বাধীনের পর থেকে ১২টি সংসদ নির্বাচনের ৮টিতেই বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এই আসনে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক প্রকৌশলী টিএস আইয়ুব। অপরদিকে রয়েছেন, অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারাজী মতিয়ার রহমান, বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র আবদুল হাই মনা, জাতীয়তাবাদী যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগও রয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায়।

অভিযোগ রয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আসনটিতে অন্যান্য উপজেলার চেয়ে বেশি চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। একক আধিপত্য বিস্তার করতে আসনটির দুই উপজেলাতেই কমিটি গঠনে একক নিয়ন্ত্রণ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা টিএস আইয়ুব হোসেন। তাছাড়া ৫ তারিখের পর পলাতক আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান ও নেতা এবং ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনেরও অভিযোগ ওঠে টিএস আইয়ুব ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা টিএস আইয়ুবের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন, তাঁরাই এখন বিরোধিতা করে রাজপথে নেমেছেন। এই ধারাবাহিকতায় তারা বিভিন্ন দিবস ও দলীয় কর্মসূচি আলাদা আলাদা ভাবে পালন করে চলেছেন।

সম্প্রতি লক্ষ্য করা গেছে, এতদিন টিএস আইযুবের জন্মস্থান বাঘারপাড়ার কিছু নেতা-কর্মীরা তার বিরোধিতা করে সভা সমাবেশ করলেও গত শনিবার এই সংসদীয় আসনের আরেক উপজেলা অভয়নগরেও শুরু হয়েছে দলীয় বিরোধ।

জানা গেছে, ১৪ই জুন শনিবার দুপুরে আসনটিতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঈদ পুনর্মিলনী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মনোনয়ন প্রত্যাশী শ্রমিক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ফারাজী মতিয়ার রহমান। অভয়নগরের একতারপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এই ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠান থেকে ফারাজী মতিয়ার রহমানকে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার দাবি জানানো হয়। এই অনুষ্ঠানে অভয়নগর ও বাঘারপাড়া উপজেলার বিএনপির যেসব নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন, তার মধ্যে বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র আবদুল হাই মনা ও অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ মতিয়ার রহমান ফারাবী অন্যাতম।

একই দিন একই মঞ্চে তারা হাত উঁচিয়ে ঘোষণা দেন টিএস আইযুবের দলীয় মনোনয়ন ঠেকাতে দরকার হলে নেতা-কর্মীরা ঢাকায় গিয়ে অবস্থান নেবেন। এসময় টিএস আইয়ুবের বিরুদ্ধে (আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের সাথে গোপন আঁতাত এবং জুলাই আন্দোলনের বিরুদ্ধাচরণ কারীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলার অভিযোগ তুলে) দলের ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

বাঘারপাড়ায় বড় হচ্ছে (বিএনপির) দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব : তৃণমূলে চলছে সমালোচনা

আপডেট: ০৯:৫৪:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫

সাঈদ ইবনে হানিফ : যশোরের বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলার বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে দলীয় কোন্দল ও সাংগঠনিক বিরোধ চরম আকার ধারণ করছে।

ইতিমধ্যে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কর্মকাণ্ড, মিছিল মিটিং, উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত স্পষ্ট গ্রুরুপিং লক্ষ্য করা গেছে। যা নিয়ে সাধারণ কর্মী সমর্থকদের মধ্যে চলছে আলোচনা সমালোচনা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যশোর-৪ (অভয়নগর-বাঘারপাড়া ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) সংসদীয় আসনে বিএনপির অন্যতম সম্ভাব্য প্রার্থী কেন্দ্রীয় কৃষক দল নেতা ‘প্রকৌশলী টিএস আইয়ুব হোসেনকে ঠেকাতে এককাট্টা হয়েছেন আসনটির দুই উপজেলার শীর্ষ নেতারা।

গত শনিবার (১৪ জুন) দুপুরে বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলার শীর্ষ নেতারা এক অনুষ্ঠানে টিএস আইয়ুবকে হটাতে এককাট্টা হওয়ার ঘোষণা দেন। একই মঞ্চে দুই উপজেলার নেতারা হাত উঁচিয়ে টিএস,আইয়ুব হোসেন এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন বক্তব্য দেন। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে আসনটিতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।

আইয়ুব হোসেন সমর্থকদের দাবি, জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি পক্ষ তাঁর বিরোধিতা করছে। আর আইয়ুব বিরোধীদের ভাষ্য, তিনি দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে ভালো আচরণ করেননি। বেশিরভাগ পদপদবি নিজের অনুগতদের মধ্যে ভাগাভাগি করে দিয়েছেন। যা নিয়ে বাঘারপাড়া উপজেলাসহ অভয়নগরে বিভিন্ন সময়ের ত্যাগী কর্মীদের চরম অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।

দলীয় সূত্র বলেছে, যশোর-৪ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। দেশ স্বাধীনের পর থেকে ১২টি সংসদ নির্বাচনের ৮টিতেই বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এই আসনে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক প্রকৌশলী টিএস আইয়ুব। অপরদিকে রয়েছেন, অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারাজী মতিয়ার রহমান, বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র আবদুল হাই মনা, জাতীয়তাবাদী যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগও রয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায়।

অভিযোগ রয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আসনটিতে অন্যান্য উপজেলার চেয়ে বেশি চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। একক আধিপত্য বিস্তার করতে আসনটির দুই উপজেলাতেই কমিটি গঠনে একক নিয়ন্ত্রণ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা টিএস আইয়ুব হোসেন। তাছাড়া ৫ তারিখের পর পলাতক আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান ও নেতা এবং ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনেরও অভিযোগ ওঠে টিএস আইয়ুব ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা টিএস আইয়ুবের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন, তাঁরাই এখন বিরোধিতা করে রাজপথে নেমেছেন। এই ধারাবাহিকতায় তারা বিভিন্ন দিবস ও দলীয় কর্মসূচি আলাদা আলাদা ভাবে পালন করে চলেছেন।

সম্প্রতি লক্ষ্য করা গেছে, এতদিন টিএস আইযুবের জন্মস্থান বাঘারপাড়ার কিছু নেতা-কর্মীরা তার বিরোধিতা করে সভা সমাবেশ করলেও গত শনিবার এই সংসদীয় আসনের আরেক উপজেলা অভয়নগরেও শুরু হয়েছে দলীয় বিরোধ।

জানা গেছে, ১৪ই জুন শনিবার দুপুরে আসনটিতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঈদ পুনর্মিলনী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মনোনয়ন প্রত্যাশী শ্রমিক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ফারাজী মতিয়ার রহমান। অভয়নগরের একতারপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এই ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠান থেকে ফারাজী মতিয়ার রহমানকে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার দাবি জানানো হয়। এই অনুষ্ঠানে অভয়নগর ও বাঘারপাড়া উপজেলার বিএনপির যেসব নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন, তার মধ্যে বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র আবদুল হাই মনা ও অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ মতিয়ার রহমান ফারাবী অন্যাতম।

একই দিন একই মঞ্চে তারা হাত উঁচিয়ে ঘোষণা দেন টিএস আইযুবের দলীয় মনোনয়ন ঠেকাতে দরকার হলে নেতা-কর্মীরা ঢাকায় গিয়ে অবস্থান নেবেন। এসময় টিএস আইয়ুবের বিরুদ্ধে (আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের সাথে গোপন আঁতাত এবং জুলাই আন্দোলনের বিরুদ্ধাচরণ কারীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলার অভিযোগ তুলে) দলের ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।