আশিকুল ইসলাম, ঝিকরগাছা প্রতিনিধি : যশোরের ঝিকরগাছা বাজারে রাত দশটা বাজলেই সকল ফার্মেসী বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনেও কোনো ফার্মেসী খোলা থাকে না। ফলে রাত-বেরাতে দুর দরান্ত থেকে হাসপাতালে আগত রুগীরা জরুরী বিভাগে ডাক্তার দেখাতে পারলেও ঔষধ কিনতে না পেরে অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরে যাচ্ছে অথবা গভীর রাতে জেলা সদর যেয়ে ঔষধ সংগ্রহ করে আনতে হচ্ছে। ঔষধের অভাবে রুগীকে যশোর সদর হাসপাতালে রেফার করার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। দীর্ঘদিন ধরে ঝিকরগাছার সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই দাবি নিয়ে সোচ্চার থাকলেও প্রশাসনের শক্ত কোনো পদক্ষেপ না থাকায় আজ পর্যন্ত সারারাত একটা ঔষধের দোকান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি।

সদর ইউনিয়নের সাগরপুর গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী ইসমাইল হোসেন বলেন, তার পুত্র ইয়াছির হাসান সান (১২) গত ১৮ নভেম্বর রাত ১২ টার দিকে জ্বর, পেটেব্যাথা ও ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে তাকে ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। সেখানে জরুরি বিভাগে ডাক্তার কিছু ঔষধ কিনতে বলেন। কিন্তু সারা ঝিকরগাছা বাজার ঘুরে একটাও ঔষধের দোকান খোলা না পেয়ে ওই অবস্থাতেই তার সন্তানকে বাড়িতে নিয়ে যান। মিশ্রিদেয়াড়া গ্রামের মামুন হোসেন বলেন, গত ২০ নভেম্বর রাতে তার মা রেশমা বেগম (৪০) এর প্রচন্ড বুকে ব্যাথা সেইসাথে বমি হচ্ছিল। রাত ১২টার দিকে মাকে নিয়ে সে ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার দেখালে ডাক্তার তাকে কয়েকটি ঔষধ কিনতে বলে। কিন্তু সারাবাজার ঘুরেও কোনো দোকান খোলা পাননি। হাসপাতালের সামনে অবস্থিত দোকানে যেয়ে ডাকাডাকি করে বা মোবাইল করলেও কেউ সাড়া দেয়নি। ঐ অবস্থায় সারারাত কেটে গেছে। মামুন বলেন আমি ভয় পাচ্ছিলাম ঔষধের অভাবে আমার মায়ের কোনো ক্ষতি না হয়ে যায়। এরকম ঘটনা নিত্যদিনের।

ঝিকরগাছার ঐতিহ্যবাহী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেবা’র সহ সভাপতি আলীশাহ বলেন, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে কয়েকবার স্মারকলিপি প্রদান করেছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদেরকে একটা চিঠিও পাঠিয়েছিলো। যেখানে লেখা ছিলো মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রতিদিন একটা করে ঔষধের দোকান খোলা থাকবে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত আমরা বাস্তবায়িত হতে দেখিনি। প্রশাসনের গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়াটা অত্যান্ত লজ্জাস্কর বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক মখলেছুর রহমান কেটি বলেন, আমরা সমিতির পক্ষ থেকে বহুভাবে চেষ্টা করেছি কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার কারণে বাজারে দোকান সারারাত খুলে রাখা সম্ভব হয়নি। তবে মানুষের কল্যাণে এই কাজটা করা উচিৎ বলে তিনি জানান।

ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার রশিদুল আলম বলেন, ঝিকরগাছা বাজারে প্রায় ১০০ ঔষধের দোকান আছে। তাদের সাথে এ বিষয় নিয়ে আমরা বহুবার কথা বলেছি। তারা আমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। পরবর্তীতে মোবারকপুর ডালমিল এলাকায় নুরজাহান ফার্মেসীর আহসান হাবীব সারারাত দোকান খুলে রাখতে সম্মত হয়েছে। এখন থেকে তার কাছে রাতের বেলা প্রয়োজনীয় ঔষধ পাওয়া যাবে।