আতিকুর রহমান, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ নির্মান কাজ শেষ হওয়ার আগেই ধ্বসে পড়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর। এ নিয়ে উপজেলা জুড়ে হৈ চৈ শুরু হয়েছে। গ্রামবাসি নির্মান কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী তুলেছেন। প্রাচীর ধ্বসে পড়ার ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

স্থানীয়রা বলছেন প্রাচীর নির্মাণে বালির পরিবর্তে মাটি ও নতুন রডের পরিবর্তে পুরাতন রড ব্যবহার করা হয়েছে। কালীগঞ্জ এলজিইডি সুত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচীর (পিইডিপি-৪) আওতায় উপজেলার ১৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেটসহ বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এ কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ২৮ লাখ ৮৯ হাজার ২৯১ টাকা। ৪টি প্যাকেজে ১৩টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৯টি বিদ্যালয়ের কাজ পায় ঝিনাইদহের প্রমা ট্রেডার্স। বাকি ৪টি বিদ্যালয়ের কাজ কালীগঞ্জের হাবিব এন্টার প্রাইজ পায়। তিনজন ঠিকাদার দুটি লাইসেন্সের মাধ্যম্যে কাজগুলো শুরু করেন। নিয়ামতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেটসহ বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২ লাখ ৩১ হাজার ৭৩৯ টাকা ও ত্রিলোচনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৫ লাখ ৩৮ হাজার ১৯০ টাকা। এরমধ্যে ঝিনাইদহের প্রমা ট্রেডার্সের মালিক কাজগুলো স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রাজু আহমেদ রনি লস্করের কাছে বিক্রি করে দেন।

সরজমিন দুটি বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার নিয়ামতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাচীর নির্মাণের জন্য তৈরি বিম-কলামে পুরাতন রড ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষয়টি জানতে পেরে কালীগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বিম-কলামের ঢালাই কাজ বন্ধ ও পুরাতন রড সরিয়ে নতুন রড লাগানোর নির্দেশ দেন। এদিকে একই ঠিকাদারের করা উপজেলার ত্রিলোচনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই বাউন্ডারি প্রাচীর ধ্বসে পড়েছে। প্রাচীর নির্মাণে বালির পরিবর্তে মাটি ও সিমেন্ট না দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী। এই দুটি বিদ্যালয়ের কাজ করছেন ইউপি চেয়ারম্যান রাজু আহমেদ রনি লস্কর। এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী আল-আমিন জানান, আমি বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ কাজের তদারকি করতে ত্রিলোচনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। কাজের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে এসেছি।

ত্রিলোচনপুর গ্রামের একাধিক ব্যক্তি পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, প্রাচীর নির্মাণে বালির পরিবর্তে মাটি ব্যবহার করা হয়েছে। আর সিমেন্টের পরিমান খুবই কম। এখনো কাজ শেষ হয়নি, অথচ তার আগেই প্রাচীর ধ্বসে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে নিয়ামতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা এলজিইডির সাব এ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার জুলহাস উদ্দিন জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর পুরাতন রড সরিয়ে নতুন রড লাগানো হয়েছে। আর প্রচীর ভাঙ্গার অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ঠিকাদারের গাফলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে ঠিকাদার রাজু আহমেদ রনি লস্কর দাবী করেন, পানি পড়ে রডগুলোতে মরিচা পড়েছে। পুরানো রড ব্যবহারের কোন প্রশ্নই আসে না। তিনি বলেন, কেউ ষড়যন্ত্র করে স্কুলের সীমানা প্রাচীর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। কাজে কোন ত্রæটি বা অনিয়ম হয়নি।