‘শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে বলামাত্রই গুলি ছোড়ে পুলিশ’
- আপডেট: ০৮:১০:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
- / ৩

গ্রামের সংবাদ ডেস্ক : গত বছরের ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা পালানোর খবর পেলে আমরা বিজয় মিছিল বের করি। তখন আশুলিয়া থানার সামনে অনেক গোলাগুলি হচ্ছিলো। আমরা সেখানে গিয়ে পুলিশকে বলি, হাসিনা তো পালিয়ে গেছে- আপনারা কেন এখনও গুলি করছেন। এরপর পুলিশ আমাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়া শুরু করে। সেখানে আমি ও সঙ্গে থাকা অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যাই। সাক্ষ্যের জবানবন্দিতে এমন তথ্য জানিয়েছেন গুলিবিদ্ধ সোহান মৃধা।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থ্যান চলাকালে ৫ই আগস্ট আশুলিয়া থানার সামনে ছয়জনের মরদেহ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে তিনি এ জবানবন্দি দিয়েছেন। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৫ই নভেম্বর দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন ধার্য করেন। এদিন বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ২১তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দিতে পুলিশের গুলিতে নিজে আহত হওয়ার কথা জানান সানি। একই সঙ্গে গত বছরের ৫ই আগস্ট আশুলিয়ার নির্মমতার দৃশ্যের বিবরণ দেন। পরে তাকে জেরা করেন স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
এ মামলায় মোট আসামি ১৬ জন। এদের মধ্যে ৮ আসামি গ্রেপ্তার আছেন। গতকাল তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল মালেক, আরাফাত উদ্দীন, কামরুল হাসান, শেখ আবজালুল হক ও সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার। এছাড়া সাভারের সাবেক এমপি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ মামলার বাকি আট আসামি পলাতক।
জবানবন্দিতে সোহান মৃধা বলেন, গত বছরের ৫ই আগস্ট আমিসহ আন্দোলনকারীরা সাভার বাইপাইল এলাকায় অবস্থান করি। বেলা আড়াইটায় জানতে পারি শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। তখন আমরা বিজয় মিছিল বের করি। তখন আশুলিয়া থানার দিক থেকে অনেক গোলাগুলির শব্দ আসছিল। ছাত্র-জনতা সবাই আশুলিয়া থানার সামনে গেলে, পুলিশ আশুলিয়া থানার কাছে গলির মধ্যে চলে যায়। এ সময় পুলিশের উদ্দেশ্যে বলতে থাকি যে, হাসিনা পালিয়ে গেছে, আপনারা কেন এখনো গুলি করছেন। এরপর পুলিশ পুলিশ আমাদের উপর এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। চাইনিজ রাইফেলের গুলি আমার ডান উরুতে লেগে ভেদ করে বাম উরু দিয়ে বের হয়ে যায় এবং হাত ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে শটগানের ছররা গুলি লাগে। এ সময় প্রকাশ্য ট্রাইব্যুনালে ক্ষত স্থান প্রদর্শন করেন এই ভুক্তভোগী। ছররা গুলির মধ্যে ১৭টি পিলেট বের করা হয়েছে এবং ডান হাতে কনুই এ ১টি পিলেট এখনো রয়েছে। আমার সঙ্গে আরও অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। যার মধ্যে আমার পরিচিত একজন ছিল, তার নাম সজল। পরে জানতে পারি পুলিশ আশুলিয়া থানার সামনে সজলকে ভ্যানে উঠিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে আন্দোলনরত ভাইসহ আন্দোলনকারী অন্যান্যরা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমি গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালে প্রায় ৫ মাস চিকিৎসা গ্রহণ করি। আমি এখনো স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারি না, আমাকে এখনো ফিজিওথেরাপি নিতে হয়। আমার ডান পায়ে সাপোর্টিং ডিভাইস (এএফও) ব্যবহার করতে হয়।
ওয়াসিম হত্যায় কারাগারে সিএমপি’র সাবেক কমিশনার সাইফুল: জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদল নেতা ওয়াসিমসহ তিনজনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সাবেক কমিশনার সাইফুল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। শহীদ ওয়াসিম ছাড়া অন্যরা হলেন- শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্ত ও মো. ফারুক। এর আগে হত ১৫ই অক্টোবর তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছিলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। প্রসিকিউশন জানায়, জুলাই-আগস্টের আন্দোলন ঘিরে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন মুরাদপুর এলাকায় তিনজনকে হত্যার ঘটনায় সাবেক সিএমপি কমিশনারের সরাসরি সম্পৃক্ততা প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এ ছাড়া ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে ২৫টিরও বেশি মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের প্রাথমিক অভিযোগ পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, চান্দগাঁও থানার মামলায় চলতি বছরের ১২ই ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন সাবেক এই সিএমপি কমিশনার।
গুমের অভিযোগে সাবেক র্যাব কর্মকর্তা মশিউর কারাগারে: আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে বিরোধী মতাদর্শের লোকদের গুমের অভিযোগে সিআইডি’র এডিশনাল এসপি মো. মশিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর আগে পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী মামুনও তার সাক্ষ্যের জবানবন্দিতে মশিউর রহমানের গুমের সম্পৃক্ততার অভিযোগে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।
সুত্র : দৈনিক মানব জমিন।

















