১২:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫

শৈত্যপ্রবাহে জবুথবু যশোরের সীমান্তঞ্চলের মানুষ

নিউজ ডেস্ক

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ শৈত‌্যপ্রবাহে জবুথবু অবস্থা যশোরের সীমান্তঞ্চলের মানুষের।চরম বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। তাই শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে যশোরের সীমান্তঞ্চলের মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন ফুটপাতের কম দামী কাপড়ের দোকানে।

যশোরের শার্শা উপজেলার ছোট-বড় শপিংমল ও ফুটপাতে গরম কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে। শিশু ও বয়স্কদের কাপড় কেনার চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে শপিংমলগুলোতে দাম বেশি হওয়ায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ ঝুঁকছে ফুটপাতের দোকানগুলোতে।

উপজেলার বেনাপোল, নাভারন, শার্শা, বাগআচড়ার বাজারে ফুটপাতের দোকানগুলোতে বেড়েছে কেনা-বেচা। তবে দাম চড়া হওয়ায় শীতবস্ত্র কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন দরিদ্র মানুষ। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে তাদের বেচা-কেনা। এ বছর আগে ভাগেই ক্রেতার ভিড় বাড়ায় বিক্রেতারা বেশ খুশি।

নাভারন সাতক্ষীরা মহাসড়কের ধারে বাগআচড়া ফুটপাতে গরম কাপড়ের পশরা সাজিয়ে বসে আছে ব্যবসায়ীরা।

বাগআচড়া বাজারের ফুটপাতের দোকানি আরাফাত আলি বলেন, এখানে দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষই বেশি আসে। তবে কিছু মধ্যবিত্তও বর্তমানে আমাদের কাছে আসছেন।

বাগআচড়া ফুটপাতে ইজিবাইক চালক মফিজুর রহমান,ভ্যানচালক সামটা গ্রামের সুলতান আলি, কৃষক মোহাম্মদ আলি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জামতলার তুহিন হোসেন, দিনমজুর মনিরুল ইসলামসহ অনেকের সাথে কথা হয় গ্রামের সংবাদের এই প্রতিবেদকের।

তুহিন হোসেন বলেন, শপিংমল ও শোরুমে সুন্দর সুন্দর কাপড় রয়েছে তবে তার দাম আমাদের সামর্থ‌্যের বাইরে।এজন্য ফুটপাতের দোকানে আছি। এখানে পুরাতন কাপড়ও মেলে-সেই সঙ্গে কিছু কিছু সুন্দর নতুন কাপড়ও পাওয়া যায়।

সুলতান আলি বলেন, উত্তরে বাতাস বচ্ছে শরীরটা অবশ হয়ে যাচ্ছে। ভ্যান চালায় জাম্পার গাঁয় না থাকলি ভ্যান চালানো যায় না। তাই ঘুরেফিরে দেখছি ‘এখনো কিনতি পারিনি’।

বেনাপোলের লালমিয়া সুপার মার্কেটের ‘আর ফ্যাশন কর্নারের’ মালিক তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, “শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে গরম কাপড়ের বেচাবিক্রি জমজমাট হয়ে উঠেছে। বেচাবিক্রি মোটামুটি ভাল। শীত যত বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড় তত বাড়ছে।”

বেনাপোল বন্দরের হ্যান্ডেলিং শ্রমিক বরকত আলি বলেন, ‘ছেলের জন্যি একটা সোয়েটার কিনিছি। আর আমার জন্য একটা জাম্পার কিনবো।ঘুরেফিরে দেখছি। এখনও পছন্দ মত হয়নি।’

নাভারন বড় মসজিদের সামনে ফুটপাতের ওপর পুরাতন কাপড়ের স্তুপ সাজিয়ে বসে আছেন দোকানি সায়েদ আলি।
ফুটপাতের এই দোকানি সায়েদ আলি বলেন, পুরাতন কাপড়ের মধ্যে জ্যাকেট, সোয়েটার, চাদর, কোর্ট, মাফলার, হাত মোজা ও পা মোজা বেশি বিক্রি হচ্ছে। কম মূল্যের নতুন কাপড়ও তিনি বিক্রি করেন। কৃষক, দিনমজুর, কৃষি শ্রমিক,  নির্মাণ শ্রমিক, রিকশা-ভ্যান চালকরাই বেশি আসেন। এছাড়াও মধ্যম ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষও আসেন।

জহুরুল হক নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, ক্রেতাদের ভিড় শুরু হয়ে গেছে। আমরাও চাহিদা মতো কাপড় রাখার চেষ্টা করছি। তবে এ বছর দোকানে উপচেপড়া ভিড় থাকলেও দাম বেশি হওয়ায় অনেক ক্রেতাই ফিরে যাচ্ছেন।

নাভারন বড় মসজিদের সামনের ফুটপাত থেকে একটি পুরাতন জ্যাকেট কিনে ফিরছিলেন বাগআচড়ার টেংরা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘কুয়াশার ও শীতের ভেতরে ভোরবেলায় ইজিবাইক নিয়ে বের হই। শীতে একেবারে কাহিল হয়ে যাই। ভাবছিলাম দেড় থেকে দুইশোর মধ্যে একটা জাম্পার কিনব। এসে দেখি দাম বেশি। শীতের মধ্যেও কাজ করাই লাগবে। তাই সাড়ে ৩০০ টাকা দিয়ে জাম্পারটা কিনেছি।’

একজন কলেজ শিক্ষক এসেছেন ছেলের জন্য জ্যাকেট কিনতে। নাভারন নিউমার্কেটে কথা হয় তার সাথে।
খলিলুর রহমান নামের ওই কলেজ শিক্ষক বলেন,ছেলের শীতের কাপড় কিনেছি। একটি জ্যাকেট, একটি মাফলার ও একটি হাতমোজা কিনলাম। দাম অন্যান্য বারের চাইতে এবার একটু বেশি।

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ০৯:৩২:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫
৫৪

শৈত্যপ্রবাহে জবুথবু যশোরের সীমান্তঞ্চলের মানুষ

আপডেট: ০৯:৩২:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ শৈত‌্যপ্রবাহে জবুথবু অবস্থা যশোরের সীমান্তঞ্চলের মানুষের।চরম বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। তাই শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে যশোরের সীমান্তঞ্চলের মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন ফুটপাতের কম দামী কাপড়ের দোকানে।

যশোরের শার্শা উপজেলার ছোট-বড় শপিংমল ও ফুটপাতে গরম কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে। শিশু ও বয়স্কদের কাপড় কেনার চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে শপিংমলগুলোতে দাম বেশি হওয়ায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ ঝুঁকছে ফুটপাতের দোকানগুলোতে।

উপজেলার বেনাপোল, নাভারন, শার্শা, বাগআচড়ার বাজারে ফুটপাতের দোকানগুলোতে বেড়েছে কেনা-বেচা। তবে দাম চড়া হওয়ায় শীতবস্ত্র কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন দরিদ্র মানুষ। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে তাদের বেচা-কেনা। এ বছর আগে ভাগেই ক্রেতার ভিড় বাড়ায় বিক্রেতারা বেশ খুশি।

নাভারন সাতক্ষীরা মহাসড়কের ধারে বাগআচড়া ফুটপাতে গরম কাপড়ের পশরা সাজিয়ে বসে আছে ব্যবসায়ীরা।

বাগআচড়া বাজারের ফুটপাতের দোকানি আরাফাত আলি বলেন, এখানে দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষই বেশি আসে। তবে কিছু মধ্যবিত্তও বর্তমানে আমাদের কাছে আসছেন।

বাগআচড়া ফুটপাতে ইজিবাইক চালক মফিজুর রহমান,ভ্যানচালক সামটা গ্রামের সুলতান আলি, কৃষক মোহাম্মদ আলি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জামতলার তুহিন হোসেন, দিনমজুর মনিরুল ইসলামসহ অনেকের সাথে কথা হয় গ্রামের সংবাদের এই প্রতিবেদকের।

তুহিন হোসেন বলেন, শপিংমল ও শোরুমে সুন্দর সুন্দর কাপড় রয়েছে তবে তার দাম আমাদের সামর্থ‌্যের বাইরে।এজন্য ফুটপাতের দোকানে আছি। এখানে পুরাতন কাপড়ও মেলে-সেই সঙ্গে কিছু কিছু সুন্দর নতুন কাপড়ও পাওয়া যায়।

সুলতান আলি বলেন, উত্তরে বাতাস বচ্ছে শরীরটা অবশ হয়ে যাচ্ছে। ভ্যান চালায় জাম্পার গাঁয় না থাকলি ভ্যান চালানো যায় না। তাই ঘুরেফিরে দেখছি ‘এখনো কিনতি পারিনি’।

বেনাপোলের লালমিয়া সুপার মার্কেটের ‘আর ফ্যাশন কর্নারের’ মালিক তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, “শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে গরম কাপড়ের বেচাবিক্রি জমজমাট হয়ে উঠেছে। বেচাবিক্রি মোটামুটি ভাল। শীত যত বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড় তত বাড়ছে।”

বেনাপোল বন্দরের হ্যান্ডেলিং শ্রমিক বরকত আলি বলেন, ‘ছেলের জন্যি একটা সোয়েটার কিনিছি। আর আমার জন্য একটা জাম্পার কিনবো।ঘুরেফিরে দেখছি। এখনও পছন্দ মত হয়নি।’

নাভারন বড় মসজিদের সামনে ফুটপাতের ওপর পুরাতন কাপড়ের স্তুপ সাজিয়ে বসে আছেন দোকানি সায়েদ আলি।
ফুটপাতের এই দোকানি সায়েদ আলি বলেন, পুরাতন কাপড়ের মধ্যে জ্যাকেট, সোয়েটার, চাদর, কোর্ট, মাফলার, হাত মোজা ও পা মোজা বেশি বিক্রি হচ্ছে। কম মূল্যের নতুন কাপড়ও তিনি বিক্রি করেন। কৃষক, দিনমজুর, কৃষি শ্রমিক,  নির্মাণ শ্রমিক, রিকশা-ভ্যান চালকরাই বেশি আসেন। এছাড়াও মধ্যম ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষও আসেন।

জহুরুল হক নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, ক্রেতাদের ভিড় শুরু হয়ে গেছে। আমরাও চাহিদা মতো কাপড় রাখার চেষ্টা করছি। তবে এ বছর দোকানে উপচেপড়া ভিড় থাকলেও দাম বেশি হওয়ায় অনেক ক্রেতাই ফিরে যাচ্ছেন।

নাভারন বড় মসজিদের সামনের ফুটপাত থেকে একটি পুরাতন জ্যাকেট কিনে ফিরছিলেন বাগআচড়ার টেংরা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘কুয়াশার ও শীতের ভেতরে ভোরবেলায় ইজিবাইক নিয়ে বের হই। শীতে একেবারে কাহিল হয়ে যাই। ভাবছিলাম দেড় থেকে দুইশোর মধ্যে একটা জাম্পার কিনব। এসে দেখি দাম বেশি। শীতের মধ্যেও কাজ করাই লাগবে। তাই সাড়ে ৩০০ টাকা দিয়ে জাম্পারটা কিনেছি।’

একজন কলেজ শিক্ষক এসেছেন ছেলের জন্য জ্যাকেট কিনতে। নাভারন নিউমার্কেটে কথা হয় তার সাথে।
খলিলুর রহমান নামের ওই কলেজ শিক্ষক বলেন,ছেলের শীতের কাপড় কিনেছি। একটি জ্যাকেট, একটি মাফলার ও একটি হাতমোজা কিনলাম। দাম অন্যান্য বারের চাইতে এবার একটু বেশি।