১০:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

মুক্তি পেলেন ১ হাজার ৯৬৮ ফিলিস্তিনি ও ২০ ইসরায়েলি বন্দি: ট্রাম্পের ভাষণে বাধা, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির দাবি

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট: ০৯:১৯:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
  • / ১০০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত বন্দিবিনিময় সম্পন্ন হয়েছে। হামাসের হাতে থাকা জীবিত ২০ জিম্মিকে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা রেডক্রসের মাধ্যমে ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর পরপরই ইসরায়েল ১ হাজার ৯৬৮ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন, এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয় গাজায়। সেই হামলার পর থেকেই গাজায় নির্বিচার অভিযান চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। প্রায় দুই বছরে নিহত হন ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।

হামাস জানিয়েছে, গাজায় সর্বশেষ ৪৮ জন ইসরায়েলি বন্দি ছিলেন, যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত এবং ২৮ জন ইতিমধ্যে মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে চারজনের মরদেহও ফেরত দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

ইসরায়েলের কারা কর্তৃপক্ষের বিবৃতিতে বলা হয়, সোমবার রাতে ওফের ও কেতজিওত কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয় ১ হাজার ৯৬৮ ফিলিস্তিনি বন্দিকে। তাঁদের পশ্চিম তীরের রামাল্লা, পূর্ব জেরুজালেম ও কেরেম সালোম এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এদিকে সোমবার ইসরায়েলের পার্লামেন্ট ‘নেসেট’-এ ভাষণ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভাষণের এক পর্যায়ে কয়েকজন সংসদ সদস্য হট্টগোল শুরু করলে কিছু সময়ের জন্য বাধাগ্রস্ত হয় তাঁর বক্তব্য।

একজন সংসদ সদস্য ট্রাম্পের সামনে ‘ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিন’ লেখা একটি কাগজ উঁচিয়ে ধরেন। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সংসদকক্ষে। পরে স্পিকার আমির ওহানার নির্দেশে ওই সংসদ সদস্যকে বের করে দেওয়া হয়। স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, দুজন সদস্যকে পার্লামেন্ট থেকে বের করে দেওয়া হয়।

ভাষণ পুনরায় শুরু করে ট্রাম্প বলেন, “ওটা ছিল খুব কার্যকর ব্যবস্থা।” তিনি আরও বলেন, “এটি নতুন মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহাসিক ভোর।”

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে “অসাধারণ সাহসী নেতা” আখ্যা দিয়ে প্রশংসা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এ সময় সংসদ সদস্যরা ‘বিবি’ (নেতানিয়াহুর ডাকনাম) স্লোগান দিতে থাকেন।

ট্রাম্প বলেন, “ইসরায়েলসহ পুরো অঞ্চলের জন্য এটি হবে এক স্বর্ণযুগ।” তিনি বলেন, “আজ আমরা গভীর আনন্দ ও প্রত্যাশার এক দিনে একত্রিত হয়েছি। দুই বছরের বন্দিদশা শেষে ২০ জন সাহসী জিম্মি ফিরে পেয়েছেন তাঁদের পরিবারকে, আর আরও ২৮ জন তাঁদের চিরনিদ্রার ঠিকানায় ফিরেছেন।”

নেসেটে ভাষণের পর ট্রাম্প মিসরের শারম আল–শেখে ‘শান্তি সম্মেলনে’ যোগ দেন। এতে উপস্থিত ছিলেন ২৮টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান। গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল–সিসি, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি প্রমুখ।

এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মের্ৎস, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোও সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনে গাজা যুদ্ধবিরতিতে ভূমিকার জন্য মিসর, কাতার ও তুরস্কসহ সংশ্লিষ্ট আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের ধন্যবাদ জানান ট্রাম্প। তিনি মিসরের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘দ্য অনার অব দ্য নিল’ পাওয়ায় প্রেসিডেন্ট সিসিকে ধন্যবাদ দেন এবং সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের নামও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।

বিশ্বনেতাদের উপস্থিতিকে “একটি ঐতিহাসিক স্বীকৃতি” উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, “গাজা যুদ্ধবিরতি এমন একটি ঘটনা, যা বিশ্ব ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”

Please Share This Post in Your Social Media

মুক্তি পেলেন ১ হাজার ৯৬৮ ফিলিস্তিনি ও ২০ ইসরায়েলি বন্দি: ট্রাম্পের ভাষণে বাধা, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির দাবি

আপডেট: ০৯:১৯:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত বন্দিবিনিময় সম্পন্ন হয়েছে। হামাসের হাতে থাকা জীবিত ২০ জিম্মিকে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা রেডক্রসের মাধ্যমে ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর পরপরই ইসরায়েল ১ হাজার ৯৬৮ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন, এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয় গাজায়। সেই হামলার পর থেকেই গাজায় নির্বিচার অভিযান চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। প্রায় দুই বছরে নিহত হন ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।

হামাস জানিয়েছে, গাজায় সর্বশেষ ৪৮ জন ইসরায়েলি বন্দি ছিলেন, যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত এবং ২৮ জন ইতিমধ্যে মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে চারজনের মরদেহও ফেরত দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

ইসরায়েলের কারা কর্তৃপক্ষের বিবৃতিতে বলা হয়, সোমবার রাতে ওফের ও কেতজিওত কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয় ১ হাজার ৯৬৮ ফিলিস্তিনি বন্দিকে। তাঁদের পশ্চিম তীরের রামাল্লা, পূর্ব জেরুজালেম ও কেরেম সালোম এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এদিকে সোমবার ইসরায়েলের পার্লামেন্ট ‘নেসেট’-এ ভাষণ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভাষণের এক পর্যায়ে কয়েকজন সংসদ সদস্য হট্টগোল শুরু করলে কিছু সময়ের জন্য বাধাগ্রস্ত হয় তাঁর বক্তব্য।

একজন সংসদ সদস্য ট্রাম্পের সামনে ‘ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিন’ লেখা একটি কাগজ উঁচিয়ে ধরেন। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সংসদকক্ষে। পরে স্পিকার আমির ওহানার নির্দেশে ওই সংসদ সদস্যকে বের করে দেওয়া হয়। স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, দুজন সদস্যকে পার্লামেন্ট থেকে বের করে দেওয়া হয়।

ভাষণ পুনরায় শুরু করে ট্রাম্প বলেন, “ওটা ছিল খুব কার্যকর ব্যবস্থা।” তিনি আরও বলেন, “এটি নতুন মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহাসিক ভোর।”

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে “অসাধারণ সাহসী নেতা” আখ্যা দিয়ে প্রশংসা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এ সময় সংসদ সদস্যরা ‘বিবি’ (নেতানিয়াহুর ডাকনাম) স্লোগান দিতে থাকেন।

ট্রাম্প বলেন, “ইসরায়েলসহ পুরো অঞ্চলের জন্য এটি হবে এক স্বর্ণযুগ।” তিনি বলেন, “আজ আমরা গভীর আনন্দ ও প্রত্যাশার এক দিনে একত্রিত হয়েছি। দুই বছরের বন্দিদশা শেষে ২০ জন সাহসী জিম্মি ফিরে পেয়েছেন তাঁদের পরিবারকে, আর আরও ২৮ জন তাঁদের চিরনিদ্রার ঠিকানায় ফিরেছেন।”

নেসেটে ভাষণের পর ট্রাম্প মিসরের শারম আল–শেখে ‘শান্তি সম্মেলনে’ যোগ দেন। এতে উপস্থিত ছিলেন ২৮টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান। গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল–সিসি, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি প্রমুখ।

এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মের্ৎস, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোও সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনে গাজা যুদ্ধবিরতিতে ভূমিকার জন্য মিসর, কাতার ও তুরস্কসহ সংশ্লিষ্ট আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের ধন্যবাদ জানান ট্রাম্প। তিনি মিসরের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘দ্য অনার অব দ্য নিল’ পাওয়ায় প্রেসিডেন্ট সিসিকে ধন্যবাদ দেন এবং সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের নামও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।

বিশ্বনেতাদের উপস্থিতিকে “একটি ঐতিহাসিক স্বীকৃতি” উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, “গাজা যুদ্ধবিরতি এমন একটি ঘটনা, যা বিশ্ব ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”