জেলা প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থীকে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন, ঝিনাইদহ-১ আসন (শৈলকূপা উপজেলা) মো. আব্দুল হাই ও ঝিনাইদহ-২ ( হরিণাকুন্ডু-ঝিনাইদহ সদর) তাহজীব আলম সিদ্দিকী ও ঝিনাইদহ-৪ আসনের আনোয়ারুল আজীম আনারসহ ৫জন।

একই সঙ্গে তাদের আগামি ১৭ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ঝিনাইদহ জেলা দায়রা জজ আদালত ভবনে অবস্থিত যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এর কার্যালয়ে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মো. রোকুনুজ্জামান এ খবর নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ১৩ ডিসেম্বর শৈলকূপা উপজেলার ৯ নং হাকিমপুর ইউনিয়নে পাইকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ধলোহরাচন্দ্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম আহমেদ নৌকা প্রতীকের পক্ষে জনসভা করেন এবং শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়াসহ সভায় যোগদান করেন।

এছাড়াও ১২ ডিসেম্বর বিকেলে উপজেলার কাতলাগাড়ি বাজারে সারুটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মামুন ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিমের নেতৃত্বে জনসভা হয় এবং সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টদের হুমকি দেন তারা। ১০ ডিসেম্বর উপজেলার ভাটই বাজারে প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে নেতাকর্মীরা নৌকা প্রতীকের স্লোগান দেন। শুধু তাই নয় প্রার্থী আব্দুল হাইয়ের ছেলে উপজেলার শেখপাড়া হাজি মার্কেটের সামনে জনসভা করেন।

কারণ দর্শানোর নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, আপনার (আব্দুল হাই) বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন নির্বাচন কমিশনে সুপারিশ প্রেরণ করা হবে না সেই বিষয়ে ১৭ ডিসেম্বর বেলা ১১টার মধ্যে সশরীরে হাজির হয়ে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি নির্বাচনী এলাকা ৮১ ( ঝিনাইদহ-১ শৈলকূপা উপজেলা) বিচারক (যুগ্ম জেলা জজ ) ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল মো. গোলাম নবী নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি নির্বাচনী এলাকা ৮২ ( ঝিনাইদহ-২ আসন) এর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মো. তৌফিকুল ইসলাম আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকীকে বৃহস্পতিবার পৃথকভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসের শাহরিয়ার জাহিদীর (মহুল) সমন্বয়ক শরীফ মাহমুদুল হাসান নির্বাচন আচরণ বিধি ভঙ্গের অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকীর নৌকা প্রতীকের বিজয় অর্জনে সভা সভা-সমাবেশ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসের শাহরিয়ার জাহিদীর (মহুল) কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এবং কটাক্ষ করে আসছেন। বিচারক তাহজীব আলম সিদ্দিকীকে সশরীরে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে আদালতের কাছে ব্যাখ্যা প্রদানে ১৮ ডিসেম্বর সকাল ১১টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন।

এদিকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ঝিনাইদহ-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুল আজীম আনারসহ ৫ জনকে তলব করেছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।

একই সঙ্গে তাদের আগামী ১৭ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় ঝিনাইদহ জেলা দায়রা জজ আদালত ভবনে অবস্থিত যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এর কার্যালয়ে সশরীরে উপস্থিত হয়ে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার নির্বাচনী এলাকা ৮৪ ও ঝিনাইদহ-৪ আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান এবং যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এর বিচারক সোহাগ তালুকদারের এক চিঠিতে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ১০ ডিসেম্বর জেলার কালীগঞ্জ পৌর অডিটোরিয়াম কক্ষে আয়োজিত এক সভায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুল আজীম আনারের উপস্থিতিতে রাজনৈতিক সহকর্মী মো. রাশেদ শমসের বলেছেন, মুজিব কোট পরে যদি নৌকার বিরুদ্ধে ভোট চান, এই মুজিব কোট জনতার মাঝে খুলে নেওয়া হবে।

মোবারকগঞ্জ সুগার মিলস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. গোলাম রসূল তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেন, আওয়ামী লীগ এর মানুষ হয়ে নৌকায় ভোট না দিলে ভোটের মাঠে যাওয়ার দরকার নেই।

কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. ওহিদজ্জাামান বলেন, নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করলে ক্ষমা করা হবে না।

উপজেলা পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. ইমদাদলু হক সোহাগ বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বাইরে কেউ ভোট দিলে তাকে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে এবং আমার ইউনিয়নে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আপনি উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদ শমসের, মোবারকগঞ্জ সুগার মিলস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. গোলাম রসূল, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. ওহিদজ্জুামান ওদু, উপজেলা পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদলু হক সোহাগ, উপজেলা পুলিশিং এবং ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্যা ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুল আজীম আনার সেখানে উপস্থিত থেকে ও প্রদত্ত উক্ত বক্তব্য দাতাদের প্রতি বাধা প্রদান করেননি। যা আপনাদের প্রত্যেকের একক ও সামষ্টিকভাবে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৪(১), ১১(ক) এবং ১২ এর লঙ্ঘন।