গোমনতী মডেল একাডেমির অধ্যক্ষ মিজান মব জাস্টিসের শিকার হয়ে ২৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ নীলফামারীর তোমার উপজেলার গোমনাতী মডেল একাডেমির অধ্যক্ষ মিজান আহমেদ (৪২)) মব জাস্টিসের শিকার হয়ে ২৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে অধ্যক্ষ মিজান আহমেদের ওপর মব জাস্টিসের ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীরা তাকে বস্ত্রহীন করে, মাথার চুল ও মুখের দাড়ি কেটে রঙ মাখিয়ে, গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে বেধড়ক মারধর করে হত্যা চেষ্টা করে। পুরো ঘটনাটি তারা ফেসবুকে লাইভ সম্প্রচার করে, যেন তাকে ধর্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায়।
খবর পেয়ে ডোমার থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অধ্যক্ষ মিজানকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এরপর আসল ঘটনা প্রকাশ পেলে হামলাকারীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় শিক্ষক মিজানকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পর, অধ্যক্ষ মিজান আহমেদ নিজেই বাদী হয়ে গ্রীণ স্টার একাডেমির অধ্যক্ষ রকিবুল ইসলাম বাবুকে প্রধান আসামি করে নামীয় ৮ জন ও অজ্ঞাত আরও প্রায় আড়াইশ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ডোমার থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুল ইসলাম জানান, শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। রোববার রাতে (২০ এপ্রিল) মামলা দায়ের করা হয়। আসামিরা পলাতক থাকলেও গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, একটি মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটিয়ে এই হামলা চালানো হয়।
ওসি আরও বলেন, যাকে ধর্ষণের শিকার বলে দাবি করা হয়েছিল, সেই ছাত্রীর পরিবার থানায় এসে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন।
স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, গোমনাতী মডেল একাডেমির অধ্যক্ষ মিজান আহমেদ একজন সৎ ও জনপ্রিয় শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। তার প্রতিষ্ঠানে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। এ জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একই এলাকার গ্রীণ স্টার একাডেমির অধ্যক্ষ রকিবুল ইসলাম বাবু পরিকল্পিতভাবে মিজান আহমেদের সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে চেয়েছেন।
ঘটনার দিন, গ্রীণ স্টার একাডেমির লোকজন মিথ্যা ধর্ষণের অভিযোগ ছড়িয়ে গোমনাতী মডেল একাডেমিতে হামলা চালায় এবং শিক্ষক মিজানকে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে এনে পাশবিকভাবে নির্যাতন করে। এরপর বাজার এলাকায় তাকে জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানো হয় ও ফেসবুক লাইভে ‘ধর্ষক’ বলে প্রচার চালানো হয়।
যে ছাত্রীকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়ানো হয়েছিল, তার পিতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমার মেয়েকে জড়িয়ে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে আমাদের সম্মানহানি করা হয়েছে। আমি নিজেই থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”