আসাদুজ্জামান আসাদ।৷ ইলিশ রপ্তানির মেয়াদ শেষ ও ইলিশের প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেল।

সময় স্বল্পতা, বাজারে ইলিশ সংকট ও অস্বাভাবিকভাবে মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকে ইলিশ রপ্তানি করতে না পারায় ১২অক্টোবর রাত ৮টা পর্যন্ত ৫৩৩ মেট্রিকটন ইলিশ গেল ভারতে।

এবার নিয়ে গত ছয় বছর দুর্গাপূজায় ভারতে ইলিশ যাচ্ছে তবে একবারও অনুমোদন পাওয়া পুরো ইলিশ ভারতে রপ্তানি করতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। ভারতের ব্যবসায়ীদের অনুরোধেই এই ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয় বাংলাদেশ সরকার।

ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পাওয়া ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০টি প্রতিষ্ঠান রপ্তানি করতে পেরেছে। অনুমোদন পাওয়া ২৯টি প্রতিষ্ঠান কোন ইলিশ রপ্তানি করতে পারেনি বলে জানান বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) রাশেদুল সজীব নাজির।

২৬সেপ্টেম্বর থেকে ১২অক্টোবর পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া ২হাজার ৪৫০ মেট্রিকটনের স্থলে ৫৩৩ মেট্রিকটন ইলিশ ভারতে গেছে। যার রপ্তানি মূল্য ৫৩ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার বলে জানান বেনাপোল বন্দরের মৎস্য কোয়ারেন্টাইন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, ইলিশ চেয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের অনুরোধ আর বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া অনুমতির মধ্যকার সময় স্বল্পতার কারনে পুরো ইলিশ রপ্তানি করা যাচ্ছে না। পূজা শুরুর পর ভারতীয় অংশে আমদানি বন্ধ এবং রপ্তানির জন্য হাতেগোনা মাত্র কয়েকটা দিন থাকায় ইলিশ রপ্তানিতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ বছরই কেবল নয়, বিগত পাঁচ বছরেও রপ্তানির অনুমতি পাওয়া পুরো ইলিশ পাঠানো যায়নি।

ইলিশ রপ্তানিকারক বেনাপোলের ‘সততা ফিসে’র ম্যানেজার রকি মাহামুদ বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার বেনাপোল থেকে সড়ক পথে ভারতে সব ধরনের পণ্য রপ্তানি বন্ধ থাকে। তবে শনিবার খোলা থাকে। অন্যদিকে রোববার আবার আমদানি বন্ধ রাখে ভারত। সপ্তাহের এই দু’দিন বাদ দিলে ২৬ অক্টোবর থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১২দিন ভারতে ইলিশ পাঠানোর সুযোগ পেয়েছে ব্যবসায়ীরা।

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) রাশেদুল সজীব নাজির বলেন, দুর্গাপূজায় ভারতে এবার দুই হাজার ৪২০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয় সরকার। ১২অক্টোবর পর্যন্ত রপ্তানির অনুমোদন পায় ৪৯টি প্রতিষ্ঠান।

২১সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে তিন হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়। তবে পরে সেখান থেকে সরে এসে ২৫ সেপ্টেম্বর শেষ পর্যন্ত দুই হাজার ৪২০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতির ছাড়পত্র দেয় অন্তবর্তীকালীন সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বেশির ভাগ ইলিশ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি হয়। এবছর ইলিশ রপ্তানির শেষ দিন আজ রাত ৮টা পর্যন্ত ৫৩৩ মেট্রিকটন ইলিশ গেছে ভারতে।

পদ্মার ইলিশ পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের কাছে প্রিয় হলেও দেশের চাহিদা বিবেচনায় বিভিন্ন সময় তা রপ্তানি বন্ধ রাখে বাংলাদেশ সরকার।

২০১২ সালের আগে ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা হত। ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়ায় ২০১২ সালের পর ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় সরকার।

ইলিশ রপ্তানি বন্ধ থাকলেও দুর্গোৎসবে ভারতের বাঙালিদের এই মাছের স্বাদ দিতে বিশেষ বিবেচনায় গতবছর ২০২৩ সালে ৭৯ প্রতিষ্ঠানকে ৩৫০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদনের অনুকূলে বেনাপোল দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৬৩১দশমিক ২৪টন।২০২২ সালে ৫৯ প্রতিষ্ঠানকে ২৯০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিলেও রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ১৩০০ টন।২০২১ সালে ১১৫ প্রতিষ্ঠানকে ৪ হাজার ৬শ’ মেট্রিকটন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমোদন দেয় সরকার।রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৬৯৯ মেট্রিক টন ইলিশ।২০২০সালে দুর্গাপূজা উপলক্ষে এক হাজার ৪৫০ টন এবং ২০১৯ সালে ৫০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছিল সরকার।ওই বছর রপ্তানি হয়েছিল ৪৭৬ মেট্রিক টন ইলিশ।