১১:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫

জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট হতে হবে: মির্জা ফখরুল

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট: ০৯:২১:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫
  • /

যশোর অফিস ॥ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট হতে হবে। এ বিষয়ে আমরা একমত। সংসদ নির্বাচনের আগে কোনো গণভোট হতে দেওয়া হবে না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।

কিছু সংখ্যাক রাজনৈতিক মহল, অযথা অন্যায়, অপ্রয়োজনীয়ভাবে দেশে একটা গোলযোগ সৃষ্টির পায়তারা করছে। আবার একটা চক্রান্ত করে নির্বাচনকে বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে, এটা দেশের জনগণ মেনে না। দয়া করে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করবেন, দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবেন না। মানুষকে অশান্তিতে ফেলার চেষ্টা করবেন না।

আমরা অনেক লড়াই সংগ্রাম করেছি, আপনারা নতুন করে শুরু করতে যাচ্ছেন। আপনাদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করার জন্য, সেটা এই দেশের মানুষ কোন মতেই মেনে নেবে না। অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের পরিষ্কার ভাবে বলতে চাই আর কোন তালাবাহানা না করে অবিলম্বে নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করার ব্যবস্থা করুন। ঐক্যমতে যে গুলো সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো সামনে নিয়ে এগিয়ে যান। অন্যথায় আপনারা কিন্তু ব্যর্থ সরকারের পরিণত হবেন। এর জন্য আপনাদের জবাব দিহি করতে হবে।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম জনপদের উন্নয়নের কাগির খ্যাত তরিকুল ইসলামের সপ্তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার যশোর জেলা বিএনপি আয়োজিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় এ সময় তরিকুল ইসলামের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মুনাজাত করা হয়। মুনাজাত পরিচালনা করেন মুফতি আমানুল্লাহ কাসেমী। সভায় উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য রাজনীতিক তরিকুল ইসলামের সহধর্মিণী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগম, জেষ্ঠ্য পুত্র দৈনিক লোকসমাজ পত্রিকার প্রকাশক শান্তনু ইসলাম সুমিত, কনিষ্ঠ পুত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।

বক্তব্যের শুরুতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তরিকুল ইসলাককে দলের পক্ষ থেকে এবং দলের চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, তরিকুল ইসলাম বাংলাদেশকে একটি শক্তিশাল গণতান্ত্রি রাষ্ট্রে পরিণত করার নিরন্তর সংগ্রামের অন্যতম পুরোধা, কিংবন্দতী নেতা ছিলেন। তরিকুল ইসলাম একটা ইনস্টিটিউশন নিজে একটা প্রতিষ্ঠান। নেতা সবাই হতে পারেন না, নেতা তারাই হতে পারেন যারা জনগণের হৃদয়কে ছুঁয়ে যান। যাদের জন্য জনগণ কাঁধে, পরবর্তী প্রজন্ম বলে এই মানুষ আমাদের মানুষ ছিলেন।

তরিকুল ইসলাম একজন সেই ধরণের মানুষ। তরিকুল ইসলাম বারবার জন্মায় না। তিনি ক্ষণজন্মা রাজনৈতিক নেতৃত্ব, তিনি সাধারন মানুষের মতো রাষ্ট্র এবং রাজনীতিটাকে বুঝতেন। সঠিক সিধান্ত ও পরামর্শ দিতেন। এ জন্য বেগম খালেদা জিয়া যেন কোন সংকটময় মুহুর্তে তরিকুল ইসলামকে ডাকতেন তার কাছ থেকে পরামর্শ নিতে। অসুস্থ অবস্থায়ও বেগম খালেদা জিয়ার পরামর্শ অনুযায়ী দল ও দেশের জন্য কাজ করতেন। এমনকি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া থাকা সত্ত্বেও তিনি দলের জন্য কাজ করেছেন। সারাটা জীবন তিনি মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।

আমরা যারা তার সহকর্মী ছিলাম ছাত্রজীবন থেকে দীর্ঘকাল এক সাথে রাজনীতি করেছি, তার স্মরণ সভায় কথা বলতে গেলে অত্যান্ত ভারাক্রান্ত হয়ে যাই। ভারাক্রান্ত হয়ে যায়, এজন্য এই মানুষটির দেশের বর্তমানে সময়ে খুব প্রয়োজন ছিল। ভারক্রান্ত হয়ে যাই, এজন্য ফ্যাসিস্টের বিয়োগান্ত বিদায় তিনি দেখে যেতে পারলেন না।

জাতি একজন দেশপ্রেমিক মানুষকে এবং আমি ব্যক্তিগত ভাবে একজন শুভকাঙ্খি বন্ধুকে হারিয়েছি বলে ভারাক্রান্ত হয়ে যাই। তার সম্পর্কে কথা বলতে গেলে বই লিখতে হবে। আমার অনুরোধ থাকবে তার যোগ্য পুত্রদ্বয়ের প্রতি তরিকুল ইসলামকে নিয়ে একট বই লেখা হোক। এজন্য তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

কারণ ছাত্রজীবন থেকে কত সংগ্রাম করেছেন, কতবার জেলে গেছেন, সীমাহীন নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তারপরও মানুষকে ছেড়ে যাননি। মাওলানা ভাসানির ন্যাপ করেছেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিএনপিতে যোগ দানের পর থেকে শক্ত মহিরুহের মতো দক্ষিণ অঞ্চলকে পাহারা দিয়েছেন। তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের একটা ডকুমেন্ট থাকা খুব প্রয়োজন। এটা তরিকুল ইসলামের পরিবারের জন্য নয়, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য প্রয়োজন। কি ভাবে তিনি দীর্ঘকাল বছরের পর বছর ধরে পরিবারের দিকে না তাকিয়ে আত্ম ত্যাগ করেছেন দেশ ও মানুষকে ভালোবেসে কিভাবে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস অত্যান্ত পন্ডিত বিদ্বান ব্যাক্তি, সারা পৃথিবী জুড়ে তার সুনাম রয়েছে। তিনি অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান। আমরা তাকে স্বাগত জানিয়েছিলাম, তিনি একজন নোবেল বিজয়ী সারা পৃথিবীর মানুষ তাকে ভালো জানে। আশা করেছিলাম তিনি সকলের গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্রের পথকে সুগম করবেন। রাষ্ট্রের কাঠামো পরিবর্তনের জন্য ২০১৬ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভিশন ২০৩০ এবং আমাদের নেতা তারেক রহমান ২০২১ সালে ৩১ দফা প্রস্তাবের ওপর লক্ষ্যে তিনি একটা সংস্কার কমিশন গঠন করলেন। ছয়টি সংস্কার কশিমনের একটা ঐক্যমত্য কমিশন প্রায় এক বছর ধরে আলাপ আলোচনা করেছে। সবশেষে ঐক্যমত কমিশন এমন একটা প্রস্তাব জাতির সামনে হাজির করে, গেল ১৭ অক্টোবর সকল রাজনৈতিক দল গুলো স্বাক্ষর করে। যার জন্য প্রায় ৮৬ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

ঐক্যমত কমিশনের সভা গুলোয় আমরা যে বিষয়গুলো একমত হয়েছি, সেগুলো স্বাক্ষর হয়ে গেছে। তারপর আবার নতুন নতুন প্রস্তাব নিয়ে আসছে এবং ঐক্যমতের ভিত্তিতে স্বাক্ষর করা প্রস্তাব গুলো ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করেছে। আমরা বলছি ঐক্যমত্য কশিমন কাজটি সঠিক করেনি। প্রধান উপদেষ্টা ওয়াদা করেছিলেন যে গুলো ঐক্যমত্য হবে, সেগুলো থাকবে এবং বাকি বিষয় গুলো হবে না আগামী নির্বাচিত সংসদে নিষ্পত্তি হবে। কিন্তু দুঃর্ভাগ্যে উপদেষ্টা কমিটি তারা একটা উপদেষ্টা মন্ডলীর সভা করে জনাব আসিফ নজরুর সাহেব জানালেন, যে বিষয়গুলো এখনো সমাধান হয়নি। সেগুলো সমাধানের জন্য রাজনৈতক দলগুলো সাত দিনের জন্য সময় দিচ্ছি। এটা ঠিক হয়নি।

তিনি বললেন রাজনৈতিক দলগুলো বসে এই বিষয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তাহলে আপনারা কি করলেন? আপনারা সঠিক কাজটি না করে, পক্ষদুষ্ট হয়ে কাজ করেছেন। অনেক রক্তের বিনিময় ফ্যাসিস্টের হাত থেকে স্বাধীন হয়েছি। সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাওয়ার। এটাকে কোন মহলের ষড়যন্ত্র কিংবা চক্রান্তের মধ্য দিয়ে বিনষ্ট হতে দিতে পারি না। আমরা অনেক দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছি, এখনো কোন বিষয়ে রাস্তায় নামিনি। কিন্তু মনে রাখবেন বিএনপি কোন ভেসে আসা দল নয়। বিএনপি এই দেশের জনগণের দল, স্বাধীনতার ঘোষকের দল। এই দল গণতন্ত্রের জন্য আপোষহীন সংগ্রাম করা বেগম খালেদা জিয়ার দল। এই দলের ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হাজার মানুষকে হত্যা এবং ১৭ শ মানুষকে গুম করে দেওয়া হয়েছে। সেই অবস্থা থেকে উঠে আসা একটা রাজনৈতিক দল। সুতরাং আমাদের খাটো কিংবা অবজ্ঞা করে দেখবেন না, আমরা যদি রাস্তায় নামি রাজনৈতিক বিষয়গুলো ভিন্ন ভাবে আসবে। তাই পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, আপনারা এই বিষয়গুলো বাদ দিন। যে বিষয়গুলো সমাধান হয়নি আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ গঠন হবে সেখানে নিষ্পত্তি হবে। যে গুলোতে একমত হয়েছি সে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

৭ নভেম্বরের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আরেকটা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবস। এই দিনেও আমাদের জাতীয় জীবনে বড় রকমের ছাপ পড়ে গিয়েছিল। এই দিনে দেশপ্রেমিক সৈনিক ও জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ষড়যন্ত্র চকান্ত রুখে দিয়েছিল। নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিল। আমরা যারা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করি, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জাতীয়বাদের দর্শনের ওপর ভিত্তি করে সমৃদ্ধ দেশ গড়তে চাই। এই দিবসটি অত্যান্ত মর্যাদা এবং গুরুত্বের সাথে পালন করবো। আরেকবার শপথ নেবো বাংলাদেশে কোন আধিপত্য বাদের বিস্তার করতে দেবো না। বাংলাদেশ তার নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে একটি সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হোক। গণতন্ত্র আর মানুষের অধিকারকে আর কখনো হরণ করে নিয়ে যেতে দেবো না।

জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকনের পরিচালনায় স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, বর্তমান নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রকৌশলী টি এস আইয়ূব, সাবিরা নাজমুল মুন্নী, আবুল হোসেন আজাদ, কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নজরুল ইসলাম, সাবেক সহ সভাপতি অ্যাড. মো.ইসহক, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান, নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁদ, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকন, বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি তানিয়া রহমান, শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির, মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিন্টু,চৌগাছা পৌর বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা আওলিয়ার,জেলা ইমাম পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা আব্দুল মান্নান, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি আকরামুজ্জামান, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক এম তমাল আহমেদ, জেলা মহিলা দলের সভাপতি রাশিদা রহমান ,জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোস্তফা আমির ফয়সাল, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পি প্রমুখ।

Please Share This Post in Your Social Media

জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট হতে হবে: মির্জা ফখরুল

আপডেট: ০৯:২১:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫

যশোর অফিস ॥ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট হতে হবে। এ বিষয়ে আমরা একমত। সংসদ নির্বাচনের আগে কোনো গণভোট হতে দেওয়া হবে না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।

কিছু সংখ্যাক রাজনৈতিক মহল, অযথা অন্যায়, অপ্রয়োজনীয়ভাবে দেশে একটা গোলযোগ সৃষ্টির পায়তারা করছে। আবার একটা চক্রান্ত করে নির্বাচনকে বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে, এটা দেশের জনগণ মেনে না। দয়া করে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করবেন, দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবেন না। মানুষকে অশান্তিতে ফেলার চেষ্টা করবেন না।

আমরা অনেক লড়াই সংগ্রাম করেছি, আপনারা নতুন করে শুরু করতে যাচ্ছেন। আপনাদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করার জন্য, সেটা এই দেশের মানুষ কোন মতেই মেনে নেবে না। অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের পরিষ্কার ভাবে বলতে চাই আর কোন তালাবাহানা না করে অবিলম্বে নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করার ব্যবস্থা করুন। ঐক্যমতে যে গুলো সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো সামনে নিয়ে এগিয়ে যান। অন্যথায় আপনারা কিন্তু ব্যর্থ সরকারের পরিণত হবেন। এর জন্য আপনাদের জবাব দিহি করতে হবে।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম জনপদের উন্নয়নের কাগির খ্যাত তরিকুল ইসলামের সপ্তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার যশোর জেলা বিএনপি আয়োজিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় এ সময় তরিকুল ইসলামের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মুনাজাত করা হয়। মুনাজাত পরিচালনা করেন মুফতি আমানুল্লাহ কাসেমী। সভায় উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য রাজনীতিক তরিকুল ইসলামের সহধর্মিণী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগম, জেষ্ঠ্য পুত্র দৈনিক লোকসমাজ পত্রিকার প্রকাশক শান্তনু ইসলাম সুমিত, কনিষ্ঠ পুত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।

বক্তব্যের শুরুতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তরিকুল ইসলাককে দলের পক্ষ থেকে এবং দলের চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, তরিকুল ইসলাম বাংলাদেশকে একটি শক্তিশাল গণতান্ত্রি রাষ্ট্রে পরিণত করার নিরন্তর সংগ্রামের অন্যতম পুরোধা, কিংবন্দতী নেতা ছিলেন। তরিকুল ইসলাম একটা ইনস্টিটিউশন নিজে একটা প্রতিষ্ঠান। নেতা সবাই হতে পারেন না, নেতা তারাই হতে পারেন যারা জনগণের হৃদয়কে ছুঁয়ে যান। যাদের জন্য জনগণ কাঁধে, পরবর্তী প্রজন্ম বলে এই মানুষ আমাদের মানুষ ছিলেন।

তরিকুল ইসলাম একজন সেই ধরণের মানুষ। তরিকুল ইসলাম বারবার জন্মায় না। তিনি ক্ষণজন্মা রাজনৈতিক নেতৃত্ব, তিনি সাধারন মানুষের মতো রাষ্ট্র এবং রাজনীতিটাকে বুঝতেন। সঠিক সিধান্ত ও পরামর্শ দিতেন। এ জন্য বেগম খালেদা জিয়া যেন কোন সংকটময় মুহুর্তে তরিকুল ইসলামকে ডাকতেন তার কাছ থেকে পরামর্শ নিতে। অসুস্থ অবস্থায়ও বেগম খালেদা জিয়ার পরামর্শ অনুযায়ী দল ও দেশের জন্য কাজ করতেন। এমনকি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া থাকা সত্ত্বেও তিনি দলের জন্য কাজ করেছেন। সারাটা জীবন তিনি মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।

আমরা যারা তার সহকর্মী ছিলাম ছাত্রজীবন থেকে দীর্ঘকাল এক সাথে রাজনীতি করেছি, তার স্মরণ সভায় কথা বলতে গেলে অত্যান্ত ভারাক্রান্ত হয়ে যাই। ভারাক্রান্ত হয়ে যায়, এজন্য এই মানুষটির দেশের বর্তমানে সময়ে খুব প্রয়োজন ছিল। ভারক্রান্ত হয়ে যাই, এজন্য ফ্যাসিস্টের বিয়োগান্ত বিদায় তিনি দেখে যেতে পারলেন না।

জাতি একজন দেশপ্রেমিক মানুষকে এবং আমি ব্যক্তিগত ভাবে একজন শুভকাঙ্খি বন্ধুকে হারিয়েছি বলে ভারাক্রান্ত হয়ে যাই। তার সম্পর্কে কথা বলতে গেলে বই লিখতে হবে। আমার অনুরোধ থাকবে তার যোগ্য পুত্রদ্বয়ের প্রতি তরিকুল ইসলামকে নিয়ে একট বই লেখা হোক। এজন্য তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

কারণ ছাত্রজীবন থেকে কত সংগ্রাম করেছেন, কতবার জেলে গেছেন, সীমাহীন নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তারপরও মানুষকে ছেড়ে যাননি। মাওলানা ভাসানির ন্যাপ করেছেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিএনপিতে যোগ দানের পর থেকে শক্ত মহিরুহের মতো দক্ষিণ অঞ্চলকে পাহারা দিয়েছেন। তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের একটা ডকুমেন্ট থাকা খুব প্রয়োজন। এটা তরিকুল ইসলামের পরিবারের জন্য নয়, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য প্রয়োজন। কি ভাবে তিনি দীর্ঘকাল বছরের পর বছর ধরে পরিবারের দিকে না তাকিয়ে আত্ম ত্যাগ করেছেন দেশ ও মানুষকে ভালোবেসে কিভাবে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস অত্যান্ত পন্ডিত বিদ্বান ব্যাক্তি, সারা পৃথিবী জুড়ে তার সুনাম রয়েছে। তিনি অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান। আমরা তাকে স্বাগত জানিয়েছিলাম, তিনি একজন নোবেল বিজয়ী সারা পৃথিবীর মানুষ তাকে ভালো জানে। আশা করেছিলাম তিনি সকলের গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্রের পথকে সুগম করবেন। রাষ্ট্রের কাঠামো পরিবর্তনের জন্য ২০১৬ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভিশন ২০৩০ এবং আমাদের নেতা তারেক রহমান ২০২১ সালে ৩১ দফা প্রস্তাবের ওপর লক্ষ্যে তিনি একটা সংস্কার কমিশন গঠন করলেন। ছয়টি সংস্কার কশিমনের একটা ঐক্যমত্য কমিশন প্রায় এক বছর ধরে আলাপ আলোচনা করেছে। সবশেষে ঐক্যমত কমিশন এমন একটা প্রস্তাব জাতির সামনে হাজির করে, গেল ১৭ অক্টোবর সকল রাজনৈতিক দল গুলো স্বাক্ষর করে। যার জন্য প্রায় ৮৬ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

ঐক্যমত কমিশনের সভা গুলোয় আমরা যে বিষয়গুলো একমত হয়েছি, সেগুলো স্বাক্ষর হয়ে গেছে। তারপর আবার নতুন নতুন প্রস্তাব নিয়ে আসছে এবং ঐক্যমতের ভিত্তিতে স্বাক্ষর করা প্রস্তাব গুলো ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করেছে। আমরা বলছি ঐক্যমত্য কশিমন কাজটি সঠিক করেনি। প্রধান উপদেষ্টা ওয়াদা করেছিলেন যে গুলো ঐক্যমত্য হবে, সেগুলো থাকবে এবং বাকি বিষয় গুলো হবে না আগামী নির্বাচিত সংসদে নিষ্পত্তি হবে। কিন্তু দুঃর্ভাগ্যে উপদেষ্টা কমিটি তারা একটা উপদেষ্টা মন্ডলীর সভা করে জনাব আসিফ নজরুর সাহেব জানালেন, যে বিষয়গুলো এখনো সমাধান হয়নি। সেগুলো সমাধানের জন্য রাজনৈতক দলগুলো সাত দিনের জন্য সময় দিচ্ছি। এটা ঠিক হয়নি।

তিনি বললেন রাজনৈতিক দলগুলো বসে এই বিষয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তাহলে আপনারা কি করলেন? আপনারা সঠিক কাজটি না করে, পক্ষদুষ্ট হয়ে কাজ করেছেন। অনেক রক্তের বিনিময় ফ্যাসিস্টের হাত থেকে স্বাধীন হয়েছি। সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাওয়ার। এটাকে কোন মহলের ষড়যন্ত্র কিংবা চক্রান্তের মধ্য দিয়ে বিনষ্ট হতে দিতে পারি না। আমরা অনেক দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছি, এখনো কোন বিষয়ে রাস্তায় নামিনি। কিন্তু মনে রাখবেন বিএনপি কোন ভেসে আসা দল নয়। বিএনপি এই দেশের জনগণের দল, স্বাধীনতার ঘোষকের দল। এই দল গণতন্ত্রের জন্য আপোষহীন সংগ্রাম করা বেগম খালেদা জিয়ার দল। এই দলের ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হাজার মানুষকে হত্যা এবং ১৭ শ মানুষকে গুম করে দেওয়া হয়েছে। সেই অবস্থা থেকে উঠে আসা একটা রাজনৈতিক দল। সুতরাং আমাদের খাটো কিংবা অবজ্ঞা করে দেখবেন না, আমরা যদি রাস্তায় নামি রাজনৈতিক বিষয়গুলো ভিন্ন ভাবে আসবে। তাই পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, আপনারা এই বিষয়গুলো বাদ দিন। যে বিষয়গুলো সমাধান হয়নি আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ গঠন হবে সেখানে নিষ্পত্তি হবে। যে গুলোতে একমত হয়েছি সে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

৭ নভেম্বরের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আরেকটা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবস। এই দিনেও আমাদের জাতীয় জীবনে বড় রকমের ছাপ পড়ে গিয়েছিল। এই দিনে দেশপ্রেমিক সৈনিক ও জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ষড়যন্ত্র চকান্ত রুখে দিয়েছিল। নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিল। আমরা যারা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করি, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জাতীয়বাদের দর্শনের ওপর ভিত্তি করে সমৃদ্ধ দেশ গড়তে চাই। এই দিবসটি অত্যান্ত মর্যাদা এবং গুরুত্বের সাথে পালন করবো। আরেকবার শপথ নেবো বাংলাদেশে কোন আধিপত্য বাদের বিস্তার করতে দেবো না। বাংলাদেশ তার নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে একটি সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হোক। গণতন্ত্র আর মানুষের অধিকারকে আর কখনো হরণ করে নিয়ে যেতে দেবো না।

জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকনের পরিচালনায় স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, বর্তমান নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রকৌশলী টি এস আইয়ূব, সাবিরা নাজমুল মুন্নী, আবুল হোসেন আজাদ, কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নজরুল ইসলাম, সাবেক সহ সভাপতি অ্যাড. মো.ইসহক, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান, নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁদ, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকন, বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি তানিয়া রহমান, শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির, মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিন্টু,চৌগাছা পৌর বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা আওলিয়ার,জেলা ইমাম পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা আব্দুল মান্নান, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি আকরামুজ্জামান, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক এম তমাল আহমেদ, জেলা মহিলা দলের সভাপতি রাশিদা রহমান ,জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোস্তফা আমির ফয়সাল, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পি প্রমুখ।