আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ধেয়ে আসতে পারে পুরনো এক স্যাটেলাইট, যা মহাশূন্যে গিয়েছিল ৩০ বছর আগে।
‘ইআরএস-২’ নামের এ স্যাটেলাইট বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পরপরই চূর্ণ বিচুর্ণ হয়ে যেতে পারে।
ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইএসএ’র তথ্য অনুসারে, এ পুনঃপ্রবেশের প্রক্রিয়াটি ‘প্রাকৃতিক’, যেখানে মানুষের হাতে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই কখন বা কোথায় স্যাটেলাইটটি আঘাত হানতে পারে, তা অনুমান করা সম্ভব নয়।
তবে আরও সময় গেলে সংস্থাটির পক্ষে আরও নির্ভুল তথ্য জানানো সম্ভব হবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ।
মঙ্গলবার প্রকাশিত সর্বশেষ পূর্বাভাসে অনুমান ছিল, স্যাটেলাইটটি বুধবার গ্রিনউইচ মান সময় বিকাল সাড়ে চারটা নাগাদ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবে।
এদিকে, অপ্রত্যাশিত সৌর কার্যকলাপের কারণে অনুমিত সময়ে হেরফেরও হতে পারে। এর মানে দাঁড়ায়, বায়ুমণ্ডলে স্যাটেলাইটের পুনঃপ্রবেশ অনুমিত সময়ের চেয়ে সাড়ে চার ঘণ্টা আগে-পরেও হতে পারে।
সোমবার স্যাটেলাইটটি বায়ুমণ্ডলের দিকে ধেয়ে আসার কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেছে ইএসএ।
ছবিগুলো তোলা হয়েছে ১৪ জানুয়ারি ও ৩ ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে, যখন ইআরএস-২ বায়ুমণ্ডল থেকে তিনশ কিলোমিটার ওপরে অবস্থান করছিল।
এর পর থেকে দৈনিক ১০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব কমাচ্ছে স্যাটেলাইটটি, আর এর আছড়ে পড়ার গতিও দিন দিন বাড়ছে।
স্কাই বলছে, স্যাটেলাইটটি ৮০ কিলোমিটার দূরত্বের কাছাকাছি পৌঁছানোর পরপরই এটি ভাঙতে শুরু করবে ও পরবর্তীতে পুড়ে যাবে।
এর কিছু অংশ ভূপৃষ্ঠেও আছড়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে ইএসএ। তবে, এর বেশিরভাগ অংশ মহাসাগরে গিয়ে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি।
“স্যাটেলাইট সংশ্লিষ্ট ঝুঁকির মাত্রা অনেক কম,” ইআরএস-২’র পুনঃপ্রবেশ সংক্রান্ত তথ্যে উল্লেখ করেছে ইএসএ।
তবে, স্যাটেলাইটের অবশিষ্টাংশে কোনো বিষাক্ত বা তেজস্ক্রিয় পদার্থ থাকবে না বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
ইআরএস-২’র উৎক্ষেপণ ঘটেছিল ১৯৯৫ সালে। সে সময় পৃথিবী পর্যবেক্ষণে ইউরোপের সবচেয়ে উন্নত স্যাটেলাইট হিসেবে বিবেচিত হতো এটি।
“এর মাধ্যমে আমাদের বায়ুমণ্ডলের রসায়ন, মহাসাগরের আচরণ ও মানুষের কার্যকলাপে পরিবেশে কী ধরনের প্রভাব পড়ে, সে বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন নতুন তথ্য পাওয়া গিয়েছিল,” বলেন ইএসএ’র ‘হেরিটেজ স্পেস প্রোগ্রাম’ বিভাগের প্রধান মির্কো আলবানি।
এদিকে, স্যাটেলাইটটি ১৬ বছর কক্ষপথে কাটানোর পর মিশনটি শেষ করার পাশাপাশি স্যাটেলাইটটিকে ‘ডিঅরবিট’ করার সিদ্ধান্ত নেয় ইএসএ, যেখানে স্যাটেলাইটের অবশিষ্ট জ্বালানি ব্যবহার করে এর উচ্চতা ৭৮৫ কিলোমিটার থেকে ৫৭৩ কিলোমিটারে নামিয়ে আনা হয়েছিল।
এর ফলে, মহাকাশ কক্ষপথে থাকা কোনো বস্তুর সঙ্গে স্যাটেলাইটের সংঘর্ষ ঘটার ঝুঁকিও কমে এসেছিল।