১০:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

আশ্চর্য ওষুধি গুণে ভরা দুর্বা ঘাস

নিউজ ডেস্ক

সানজিদা আক্তার সান্তনা : যেখানে সেখানে যত্ন ছাড়াই বেড়ে ওঠে এই দুর্বা ঘাস। কিন্তু এই আগাছার রয়েছে মূল্যবান ঔষধি গুণ। এটি মানবদেহকে সুস্থ ও সবল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। রক্তক্ষরণ, কেটে যাওয়া বা আঘাতজনিত রক্তপাত, চুল পড়া, চর্মরোগ, দন্তরোগ ও আমাশয়ে বেশ উপকারী।

দুর্বা ঘাসের পরিচিতি-
প্রচলিত নাম- দুর্বা ঘাস
ইউনানী নাম- দুর্বা / দুব
আয়ুর্বেদিক নাম-দুব
ইংরেজী নাম- Bermuda grass, Dove grass.
বৈজ্ঞানিক নাম- Cynodon dactylon Pers.
পরিবার- Poaceae (Gramineae)

দুর্বা ঘাসে যে সমস্ত রাসায়নিক উপাদান আছে- টারপিনয়েড যৌগ যেমন অরুনডেইন, লুপিনোন ইত্যাদি বিদ্যমান। এছাড়া দু্রবা ঘাসে প্রোটিন কার্বোহাইড্রেট ও বেশ কিছু অর্গানিক এসিড পাওয়া যায়।
এবার জেনে নিন আগাছা মনে করা দুর্বা ঘাসের ওষুধি গুণ সম্পর্কে…

ডাঃ রাজেশ পাঠক জানান, দূর্বা ঘাস প্রকৃতিতে শীতল। এর স্বাদ কষা এবং সামান্য মিষ্টি। শরীরের ভিতরে এবং বাইরে, উভয় সমস্যার জন্যই এটি কার্যকরি ওষুধ হিসেবে কাজ করে। দেখে নেওয়া যাক কোন কোন রোগে দূর্বা ঘাস ব্যবহার করা হয়।

১। কেটে যাওয়া বা আঘাত জনিত রক্তক্ষরণে দুর্বা ঘাস সামান্য পানি মিশিয়ে পিষে কাটাস্থানে বেঁধে দিলে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। কাটা স্থান দ্রুত জোড়া লাগে এবং শুকিয়ে যায়। তবে এ ক্ষেত্রে দুর্বার শিকড় ব্যবহার করলে বেশী উপকার পাওয়া যায়।

২। চুল পড়া প্রতিরোধে একটি পাত্রে এক লিটার নারিকেল তেল মৃদুতাপে জ্বাল করে ফেনা দুর করে নিতে হবে। তারপর দুর্বার ঘাসের টাটকা রস ২০০ মিলি সম্পূর্ণ তেলে মিশিয়ে পুনরায় জ্বাল দিয়ে চুলা হতে নামিয়ে ছেঁকে তা সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতিদিন গোসলের ১ ঘন্টা আগে ঐ তেল চুলে মাখতে হবে। নিয়মিত২-৩ মাস প্রয়োগ করলে উপকার পাওয়া যাবে।

৩। বমি ভাব বন্ধের জন্য দুর্বা ঘাসের রস ২-৩ চামচ ১ চা চামচ চিনি সহকারে ১ ঘন্টা পর পর খেতে হবে, বমি ভাব কেটে গেলে খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।

৪। আমাশয় রোগের জন্য দুর্বা ঘাসের রস ২-৩ চামচ ডালিম পাতা কিংবা ডালিমের ছালের রস৪-৫ চামচ মিশিয়ে প্রতিদিন ৩-৪ বার খেতে হবে। এভাবে ১০-১৫ দিন খেলে আমাশয় ভাল হয়ে যাবে।

৫। অধিক ঋতুস্রাব রোগের জন্য দুর্বা ঘাসের রস ২-৩ চামচ প্রতিদিন মধু সহ ৩-৪ বার খেতে হবে। এভাবে ১০-১৫ দিন খেলে উপকার পাওয়া যাবে।

৬। দুর্বা ঘাসের নির্যাস রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অর্ধেক পর্যন্ত হ্রাস করতে সক্ষম।

৭। আয়ুর্বেদীয় মতে রক্ত পিত্তে দুর্বা ঘাস মহৌষধ। এরোগে মুখ, নাক ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন অংশ দিয়ে রক্তস্রাব হতে পারে। এক্ষেত্রে দুর্বা ঘাসের রসের সাথে কাঁচা দুধ মিশিয়ে খাওয়ালে রোগের উপশম হয়।

৮। শ্বেতপ্রদরজনিত দূর্বলতায় দুর্বা ঘাস ও কাঁচা হলুদের রস সমপরিমাণে মিশিয়ে খেলে রোগী দূর্বলতা কাটিয়ে ওঠে।

৯। দুর্বা ঘাস সন্তান ধারণের ক্ষেত্রেও সম্ভাবনাময় ওষুধ। গর্ভধারণে অসমর্থ হলে দুর্বা ও আতপ চাল এক সাথে বেটে বড়া করে ভাতের সাথে সপ্তাহে তিন/চারদিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।

১০। দুর্বা ঘাস শরীরের রেচনতন্ত্রের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্রস্রাবে কষ্ট হয় অথচ পাথুরী রোগ হয়নি এ’রকম ক্ষেত্রে দুর্বার রস দুধ ও পানি মিশিয়ে খেলে ভাল ফল দেয়। তবে অর্শরোগ থাকলে এটা খাওয়া যাবেনা।

১১। দুর্বা ঘাস শুকিয়ে গুড়ো করে সেই গুড়ো দিয়ে দাঁত মাজলে পায়োরিয়া রোগ সেরে যায়।

১২ । শরীরে জ্বালাপোড়া ও চুলকানি: দূর্বা ঘাসের পেস্ট লাগালে শরীরে জ্বালাপোড়া এবং চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, কারণ দূর্বা ঘাস প্রকৃতিতে ঠান্ডা। এর ঔষধিগুণ ত্বককে ঠান্ডা করে এবং জ্বালাপোড়া ও চুলকানির সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।

১৩ । নাক দিয়ে রক্ত ​​পড়া: গরমে কিছু মানুষের নাক দিয়ে রক্ত ​​পড়ার সমস্যা দেখা দেয়। এ থেকে মুক্তি পেতে দূর্বা ঘাসের দুই ফোঁটা রস নাকে দিলে রক্তপাত কমে। নাক দিয়ে রক্ত ​​পড়ার সমস্যা চলে যায়।

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ০৪:০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
২০

আশ্চর্য ওষুধি গুণে ভরা দুর্বা ঘাস

আপডেট: ০৪:০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫

সানজিদা আক্তার সান্তনা : যেখানে সেখানে যত্ন ছাড়াই বেড়ে ওঠে এই দুর্বা ঘাস। কিন্তু এই আগাছার রয়েছে মূল্যবান ঔষধি গুণ। এটি মানবদেহকে সুস্থ ও সবল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। রক্তক্ষরণ, কেটে যাওয়া বা আঘাতজনিত রক্তপাত, চুল পড়া, চর্মরোগ, দন্তরোগ ও আমাশয়ে বেশ উপকারী।

দুর্বা ঘাসের পরিচিতি-
প্রচলিত নাম- দুর্বা ঘাস
ইউনানী নাম- দুর্বা / দুব
আয়ুর্বেদিক নাম-দুব
ইংরেজী নাম- Bermuda grass, Dove grass.
বৈজ্ঞানিক নাম- Cynodon dactylon Pers.
পরিবার- Poaceae (Gramineae)

দুর্বা ঘাসে যে সমস্ত রাসায়নিক উপাদান আছে- টারপিনয়েড যৌগ যেমন অরুনডেইন, লুপিনোন ইত্যাদি বিদ্যমান। এছাড়া দু্রবা ঘাসে প্রোটিন কার্বোহাইড্রেট ও বেশ কিছু অর্গানিক এসিড পাওয়া যায়।
এবার জেনে নিন আগাছা মনে করা দুর্বা ঘাসের ওষুধি গুণ সম্পর্কে…

ডাঃ রাজেশ পাঠক জানান, দূর্বা ঘাস প্রকৃতিতে শীতল। এর স্বাদ কষা এবং সামান্য মিষ্টি। শরীরের ভিতরে এবং বাইরে, উভয় সমস্যার জন্যই এটি কার্যকরি ওষুধ হিসেবে কাজ করে। দেখে নেওয়া যাক কোন কোন রোগে দূর্বা ঘাস ব্যবহার করা হয়।

১। কেটে যাওয়া বা আঘাত জনিত রক্তক্ষরণে দুর্বা ঘাস সামান্য পানি মিশিয়ে পিষে কাটাস্থানে বেঁধে দিলে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। কাটা স্থান দ্রুত জোড়া লাগে এবং শুকিয়ে যায়। তবে এ ক্ষেত্রে দুর্বার শিকড় ব্যবহার করলে বেশী উপকার পাওয়া যায়।

২। চুল পড়া প্রতিরোধে একটি পাত্রে এক লিটার নারিকেল তেল মৃদুতাপে জ্বাল করে ফেনা দুর করে নিতে হবে। তারপর দুর্বার ঘাসের টাটকা রস ২০০ মিলি সম্পূর্ণ তেলে মিশিয়ে পুনরায় জ্বাল দিয়ে চুলা হতে নামিয়ে ছেঁকে তা সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতিদিন গোসলের ১ ঘন্টা আগে ঐ তেল চুলে মাখতে হবে। নিয়মিত২-৩ মাস প্রয়োগ করলে উপকার পাওয়া যাবে।

৩। বমি ভাব বন্ধের জন্য দুর্বা ঘাসের রস ২-৩ চামচ ১ চা চামচ চিনি সহকারে ১ ঘন্টা পর পর খেতে হবে, বমি ভাব কেটে গেলে খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।

৪। আমাশয় রোগের জন্য দুর্বা ঘাসের রস ২-৩ চামচ ডালিম পাতা কিংবা ডালিমের ছালের রস৪-৫ চামচ মিশিয়ে প্রতিদিন ৩-৪ বার খেতে হবে। এভাবে ১০-১৫ দিন খেলে আমাশয় ভাল হয়ে যাবে।

৫। অধিক ঋতুস্রাব রোগের জন্য দুর্বা ঘাসের রস ২-৩ চামচ প্রতিদিন মধু সহ ৩-৪ বার খেতে হবে। এভাবে ১০-১৫ দিন খেলে উপকার পাওয়া যাবে।

৬। দুর্বা ঘাসের নির্যাস রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অর্ধেক পর্যন্ত হ্রাস করতে সক্ষম।

৭। আয়ুর্বেদীয় মতে রক্ত পিত্তে দুর্বা ঘাস মহৌষধ। এরোগে মুখ, নাক ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন অংশ দিয়ে রক্তস্রাব হতে পারে। এক্ষেত্রে দুর্বা ঘাসের রসের সাথে কাঁচা দুধ মিশিয়ে খাওয়ালে রোগের উপশম হয়।

৮। শ্বেতপ্রদরজনিত দূর্বলতায় দুর্বা ঘাস ও কাঁচা হলুদের রস সমপরিমাণে মিশিয়ে খেলে রোগী দূর্বলতা কাটিয়ে ওঠে।

৯। দুর্বা ঘাস সন্তান ধারণের ক্ষেত্রেও সম্ভাবনাময় ওষুধ। গর্ভধারণে অসমর্থ হলে দুর্বা ও আতপ চাল এক সাথে বেটে বড়া করে ভাতের সাথে সপ্তাহে তিন/চারদিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।

১০। দুর্বা ঘাস শরীরের রেচনতন্ত্রের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্রস্রাবে কষ্ট হয় অথচ পাথুরী রোগ হয়নি এ’রকম ক্ষেত্রে দুর্বার রস দুধ ও পানি মিশিয়ে খেলে ভাল ফল দেয়। তবে অর্শরোগ থাকলে এটা খাওয়া যাবেনা।

১১। দুর্বা ঘাস শুকিয়ে গুড়ো করে সেই গুড়ো দিয়ে দাঁত মাজলে পায়োরিয়া রোগ সেরে যায়।

১২ । শরীরে জ্বালাপোড়া ও চুলকানি: দূর্বা ঘাসের পেস্ট লাগালে শরীরে জ্বালাপোড়া এবং চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, কারণ দূর্বা ঘাস প্রকৃতিতে ঠান্ডা। এর ঔষধিগুণ ত্বককে ঠান্ডা করে এবং জ্বালাপোড়া ও চুলকানির সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।

১৩ । নাক দিয়ে রক্ত ​​পড়া: গরমে কিছু মানুষের নাক দিয়ে রক্ত ​​পড়ার সমস্যা দেখা দেয়। এ থেকে মুক্তি পেতে দূর্বা ঘাসের দুই ফোঁটা রস নাকে দিলে রক্তপাত কমে। নাক দিয়ে রক্ত ​​পড়ার সমস্যা চলে যায়।