১২:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫

শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নৈরাজ্য: নোংরা টয়লেট, নার্সদের খামখেয়ালী, রোগীরা অসহায়

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট: ১১:১১:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ২৬

নিজস্ব প্রতিবেদক: শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা নয়, যেন রোগ বাড়ানোর কারখানা! হাসপাতালের ভেতরে ঘুরে মনে হয়, স্বাস্থ্য নয়—অসুস্থতা ছড়ানোই যেন উদ্দেশ্য। টয়লেটগুলোতে পানি নেই, চারদিকে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ, বদনা-মগ বেসিনের ওপর পড়ে রয়েছে, রোগীরা বাধ্য হয়ে ব্যবহার করছেন বিপরীত লিঙ্গের টয়লেট। রোগীর সেবা নয়, নার্স-আয়া-ক্লিনারদের খামখেয়ালী আচরণে ভুগছেন সাধারণ মানুষ।

শার্শা উপজেলার একমাত্র ভরসা এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মানুষের জন্য চিকিৎসা নিতে এ হাসপাতালেই ভিড় করেন সবাই। কিন্তু অভিযোগ, এখানে ডাক্তার, নার্স, আয়া, ক্লিনার—সবাই যেন দায়িত্ব ভুলে গেছে। এমনকি জেলার দায়িত্বে থাকা সিভিল সার্জনের প্রতিক্রিয়াও যেন দায়িত্বজ্ঞানহীন!

গত শুক্রবার ও শনিবার হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়—মহিলা ওয়ার্ডের টয়লেটে নেই কোনো পানি। ভেতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আবর্জনার মধ্যে বদনা-মগ পড়ে আছে। অনেক মহিলা রোগী বাধ্য হয়ে পুরুষ টয়লেট ব্যবহার করছেন। নার্সদের কাছে স্যালাইন বাড়ানো-কমানোসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা বললে তারা তা আয়াদের দিকে ঠেলে দেন।

পুরুষ ওয়ার্ডেও একই চিত্র। বাথরুমে পানি নেই, বদনা-মগ ছড়িয়ে ছিটিয়ে, বেসিন অপরিচ্ছন্ন, হাত-মুখ ধোয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। ক্লিনারদের কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। রোগীদের অভিযোগ, তারা কিছু বললেই ক্লিনাররা উল্টো তেড়ে আসেন।

এক রোগীর স্বজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সরকারি টাকা খেয়ে যদি পরিস্কারই না করতে পারে, তাহলে এত লোক রাখার দরকার কী?”

হাসপাতালের এক নার্স ফারহানা বলেন, “রোগীরাই টয়লেট নোংরা করে। আমরা কি নিজের টাকায় এসে এগুলো পরিষ্কার করব? প্রয়োজনীয় ক্লিনারও নেই।”

পানির ব্যবস্থাও যেন রীতিমতো তামাশা! যেখানে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা থাকার কথা, সেখানে দেখা গেছে পানির বেসিনের মধ্যেই পড়ে রয়েছে ময়লার বস্তা। চারদিকে দুর্গন্ধ, রোগীর স্বজনরা বলেন—এই পরিবেশে মানুষ সুস্থ হওয়ার বদলে আরও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।

বিষয়টি জানানো হলে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাসুদ রানা বলেন, “বিষয়টি দেখছি।”
কিন্তু এরপর তিনি রোগীদের সচেতন না হওয়ার কথা বলে দায় ঝেড়ে ফেলেন। ফোনে প্রশ্ন করা হলে রোগীরা কি নিজেরা হাসপাতাল পরিষ্কার করবে—এমন প্রশ্নে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।

স্থানীয়রা বলছেন, “এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনতা মেনে নেওয়া যায় না। সরকার যেখানে স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির কথা বলছে, সেখানে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীরা মানবেতর অবস্থায় পড়ে আছে।”

Please Share This Post in Your Social Media

শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নৈরাজ্য: নোংরা টয়লেট, নার্সদের খামখেয়ালী, রোগীরা অসহায়

আপডেট: ১১:১১:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা নয়, যেন রোগ বাড়ানোর কারখানা! হাসপাতালের ভেতরে ঘুরে মনে হয়, স্বাস্থ্য নয়—অসুস্থতা ছড়ানোই যেন উদ্দেশ্য। টয়লেটগুলোতে পানি নেই, চারদিকে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ, বদনা-মগ বেসিনের ওপর পড়ে রয়েছে, রোগীরা বাধ্য হয়ে ব্যবহার করছেন বিপরীত লিঙ্গের টয়লেট। রোগীর সেবা নয়, নার্স-আয়া-ক্লিনারদের খামখেয়ালী আচরণে ভুগছেন সাধারণ মানুষ।

শার্শা উপজেলার একমাত্র ভরসা এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মানুষের জন্য চিকিৎসা নিতে এ হাসপাতালেই ভিড় করেন সবাই। কিন্তু অভিযোগ, এখানে ডাক্তার, নার্স, আয়া, ক্লিনার—সবাই যেন দায়িত্ব ভুলে গেছে। এমনকি জেলার দায়িত্বে থাকা সিভিল সার্জনের প্রতিক্রিয়াও যেন দায়িত্বজ্ঞানহীন!

গত শুক্রবার ও শনিবার হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়—মহিলা ওয়ার্ডের টয়লেটে নেই কোনো পানি। ভেতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আবর্জনার মধ্যে বদনা-মগ পড়ে আছে। অনেক মহিলা রোগী বাধ্য হয়ে পুরুষ টয়লেট ব্যবহার করছেন। নার্সদের কাছে স্যালাইন বাড়ানো-কমানোসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা বললে তারা তা আয়াদের দিকে ঠেলে দেন।

পুরুষ ওয়ার্ডেও একই চিত্র। বাথরুমে পানি নেই, বদনা-মগ ছড়িয়ে ছিটিয়ে, বেসিন অপরিচ্ছন্ন, হাত-মুখ ধোয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। ক্লিনারদের কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। রোগীদের অভিযোগ, তারা কিছু বললেই ক্লিনাররা উল্টো তেড়ে আসেন।

এক রোগীর স্বজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সরকারি টাকা খেয়ে যদি পরিস্কারই না করতে পারে, তাহলে এত লোক রাখার দরকার কী?”

হাসপাতালের এক নার্স ফারহানা বলেন, “রোগীরাই টয়লেট নোংরা করে। আমরা কি নিজের টাকায় এসে এগুলো পরিষ্কার করব? প্রয়োজনীয় ক্লিনারও নেই।”

পানির ব্যবস্থাও যেন রীতিমতো তামাশা! যেখানে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা থাকার কথা, সেখানে দেখা গেছে পানির বেসিনের মধ্যেই পড়ে রয়েছে ময়লার বস্তা। চারদিকে দুর্গন্ধ, রোগীর স্বজনরা বলেন—এই পরিবেশে মানুষ সুস্থ হওয়ার বদলে আরও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।

বিষয়টি জানানো হলে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাসুদ রানা বলেন, “বিষয়টি দেখছি।”
কিন্তু এরপর তিনি রোগীদের সচেতন না হওয়ার কথা বলে দায় ঝেড়ে ফেলেন। ফোনে প্রশ্ন করা হলে রোগীরা কি নিজেরা হাসপাতাল পরিষ্কার করবে—এমন প্রশ্নে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।

স্থানীয়রা বলছেন, “এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনতা মেনে নেওয়া যায় না। সরকার যেখানে স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির কথা বলছে, সেখানে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীরা মানবেতর অবস্থায় পড়ে আছে।”