সারাবিশ্ব ডেস্ক : ওড়িশার প্রথম মুসলিম মহিলা বিধায়ক হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার তরুণী সোফিয়া ফেরদৌস। তিনি বারাবতী-কটক বিধানসভা আসনে বিজেপির পূর্ণচন্দ্র মহাপাত্রকে ৮০০১ ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন। এর আগে ওড়িশায় কোনো মুসলিম মহিলা বিধায়ক নির্বাচিত হননি।

ওড়িশার বারাবতী-কটক বিধানসভা আসন থেকে কংগ্রেসের হয়ে জয়ী হয়ে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ৩২ বছরে বয়সে এ রেকর্ড করেছেন সোফিয়া ফিরদৌস। তিনি ওড়িশার প্রথম মুসলিম মহিলা বিধায়ক।

নির্বাচিত হয়ে সোফিয়া বলেন- ‘আমি আগে একজন ওড়িয়া, এক জন ভারতীয় এবং একজন মহিলা। চাকরি করার সময়ও মহিলাদের উন্নয়নের কথা ভেবেছি। নিজেকে মুসলিম রাজনীতিবিদ হিসাবে কখনো ভাবিনি।’

সোফিয়া অবশ্য রাজনীতিতে নতুন নয়। তিনি রাজনৈতিক পরিবারেরই মেয়ে। সোফিয়ার বাবা মোহাম্মদ মোকিম ওড়িশার প্রবীণ কংগ্রেস নেতা। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনে বাবার হয়ে প্রচারণায় নেমেছিলেন সোফিয়া, এবার তিনি নিজেই হয়েছেন প্রার্থী।

২০২৪ সালের বিধানসভা ভোটে মোকিমের পরিবর্তে সোফিয়াকে দলের টিকিট দেয় কংগ্রেস, আর তাতেই বাজিমাত। এ প্রসঙ্গে সোফিয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেন- ‘তার বাবা নির্বাচনে লড়তে পারবেন না জেনে, তাদের বাড়িতে জড়ো হয়েছিলেন প্রায় ৫০০ সমর্থক। তাদের অনুরোধেই রাজি হন সোফিয়া।

কলিঙ্গ ইন্সটিটিউট অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক পাশ করেছেন সোফিয়া। ২০২২ সালে বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম) থেকে এগজিকিউটিভ জেনারেল ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম পাশ করেছেন সোফিয়া।

২০২৩ সালে কনফেডারেশন অফ রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারস অ্যাসোসিয়েশনস অফ ইন্ডিয়ার ভুবনেশ্বর শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন সোফিয়া। এই সংগঠনের মহিলা শাখার প্রধানও ছিলেন তিনি। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আগে বাবার প্রতিষ্ঠান মেট্রো বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সোফিয়া। তার স্বামী মিরাজ উল হক একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি। সিআইআই-ইন্ডিয়ান গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের ভুবনেশ্বর বিভাগেরও কো-চেয়ারপার্সন তিনি।

সোফিয়া জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে মাত্র ১ মাস সময় পেয়েছিলেন তিনি। সেই সময়েই মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছেন। বারাবতী-কটক আসনে মশা এবং পায়োঃনিস্কাশন সমস্যাকে প্রচারের হাতিয়ার করে চালিয়েছেন প্রচারণা। আর তার কৌশলী আক্রমণে ধরাশায়ী হয়েছেন ওড়িশার প্রাক্তন শাসকদল বিজেডি।

উল্লেখ্য, এর আগে বারাবতী-কটক বিধানসভা আসনে ১৯৭২ সালে জয়ী হয়েছিলেন নন্দিনী শতপথী। তিনি ওড়িশার প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। অতীতে সোফিয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, নন্দিনীর দ্বারা তিনি অনুপ্রাণিত।

২০২৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নবীন পট্টনায়েক এবং তার দল বিজেডির ভরাডুবি হয়। ২৪ বছর ধরে এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নবীন। এ বার ভোটে তিনি পরাজিত হয়েছেন। ওড়িশায় মোট বিধানসভার ১৪৭ আসনের মধ্যে ৭৮টিতে জয় পেয়েছে বিজেপি। এর আগে লোকসভা নির্বাচনে ২১টি আসনের মধ্যে ২০টিতে জয় পায় বিজেপি। যেখানে ২০১৯ সালে তারা জয় পায় মাত্র ১২টি আসনে। বাকি একটি আসনে জয় পায় কংগ্রেস। বিজেডি একটি আসনও পায়নি।