০২:১১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫

যশোরে অপরাধে নাকাল জনজীবন: পাঁচ মাসে খুন ৩৫, ধর্ষণ ২২!

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট: ১০:০০:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ৪৯

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি থামছেই না। খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, চুরি, অপহরণসহ নানা অপরাধে বিপর্যস্ত জেলার সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, শুধুমাত্র গত পাঁচ মাসে (এপ্রিল-আগস্ট) জেলায় খুন হয়েছেন অন্তত ৩৫ জন, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২২ জন। একই সময়ে রেকর্ড হয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতনের ৭৪টি, চুরির ৭৬টি, অপহরণের ৪৪টি এবং মাদক ও চোরাচালানের অন্তত ২২০টি মামলা!

অপরাধীদের এমন দাপটে আতঙ্কে দিন পার করছেন সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা ও শৈথিল্যের সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা।

গত ১২আগস্ট মধ্যরাতে যশোর সদরের দৌলতদিহি গ্রামে আওয়ামী লীগ কর্মী রেজাউল ইসলামকে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই রাতেই অভয়নগরে বিলপাড়া এলাকা থেকে লিমন শেখ নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর মাত্র কয়েকদিন পর, কেশবপুরের গৌরোঘোনা এলাকায় ক্ষেতে পাওয়া যায় ভ্যানচালক তারেক সরদারের মরদেহ। এই দুই দিনের ব্যবধানে তিনটি হত্যাকাণ্ড রীতিমতো নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা জেলাকে।

চৌগাছার সুখপুকুরিয়া গ্রামের এক বাকপ্রতিবন্ধী সংখ্যালঘু নারীকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে ১৩ আগস্ট মামলা দায়ের করা হয়। ঘটনা ঘটেছিল আরও ১২দিন আগে, কিন্তু পরিবারের ভয়ে ও স্থানীয় চাপে মামলা করতে দেরি হয় বলে জানায় পুলিশ।

চৌগাছা থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, “অভিযোগ পাওয়ার পরপরই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। দুই আসামিকে ধরার চেষ্টা চলছে।”

জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভার তথ্য অনুযায়ী, জুন ও জুলাই মাসে মাদক ও চোরাচালান সংক্রান্ত মামলা হয়েছে যথাক্রমে ৭৯ ও ৭০টি। এছাড়া চুরির ঘটনায় মে মাসে ২০টি, জুনে ২২টি ও জুলাইয়ে ১২টি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।

শহরের ব্যস্ত সড়ক যশোর-খুলনা মহাসড়কের আইটি পার্কের বিপরীতে মটরপার্টস ব্যবসায়ীদের গোডাউনে প্রায় নিয়মিত চুরির ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন যশোর চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক তানভিরুল ইসলাম সোহান। তিনি বলেন, “ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে আছি। রাতের বেলায় দোকান ফেলে বাড়ি যাওয়া এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।”

এ অবস্থায় যশোরের মানবাধিকার সংগঠন ‘রাইটস যশোর’-এর নির্বাহী পরিচালক বিনয়কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, “সার্বিকভাবে বিচার করলে বলতে হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল না। খুন ও ধর্ষণের মতো ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে।”

অন্যদিকে, যশোর জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার বলেন, “প্রত্যেকটি মামলায় আমরা কাজ করছি। খুনের অনেকগুলোর রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে, আসামিরাও গ্রেফতার হয়েছে। সব ঘটনাই আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে হচ্ছে না। অনেক ঘটনার পেছনে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বও রয়েছে। তবু আমরা আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

অপরাধের লাগাম টানতে না পারলে যশোর হারাতে পারে তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বাস মিললেও মাঠপর্যায়ে তার বাস্তব প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না—এমন অভিযোগ সাধারণ মানুষের।

Please Share This Post in Your Social Media

যশোরে অপরাধে নাকাল জনজীবন: পাঁচ মাসে খুন ৩৫, ধর্ষণ ২২!

আপডেট: ১০:০০:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি থামছেই না। খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, চুরি, অপহরণসহ নানা অপরাধে বিপর্যস্ত জেলার সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, শুধুমাত্র গত পাঁচ মাসে (এপ্রিল-আগস্ট) জেলায় খুন হয়েছেন অন্তত ৩৫ জন, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২২ জন। একই সময়ে রেকর্ড হয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতনের ৭৪টি, চুরির ৭৬টি, অপহরণের ৪৪টি এবং মাদক ও চোরাচালানের অন্তত ২২০টি মামলা!

অপরাধীদের এমন দাপটে আতঙ্কে দিন পার করছেন সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা ও শৈথিল্যের সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা।

গত ১২আগস্ট মধ্যরাতে যশোর সদরের দৌলতদিহি গ্রামে আওয়ামী লীগ কর্মী রেজাউল ইসলামকে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই রাতেই অভয়নগরে বিলপাড়া এলাকা থেকে লিমন শেখ নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর মাত্র কয়েকদিন পর, কেশবপুরের গৌরোঘোনা এলাকায় ক্ষেতে পাওয়া যায় ভ্যানচালক তারেক সরদারের মরদেহ। এই দুই দিনের ব্যবধানে তিনটি হত্যাকাণ্ড রীতিমতো নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা জেলাকে।

চৌগাছার সুখপুকুরিয়া গ্রামের এক বাকপ্রতিবন্ধী সংখ্যালঘু নারীকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে ১৩ আগস্ট মামলা দায়ের করা হয়। ঘটনা ঘটেছিল আরও ১২দিন আগে, কিন্তু পরিবারের ভয়ে ও স্থানীয় চাপে মামলা করতে দেরি হয় বলে জানায় পুলিশ।

চৌগাছা থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, “অভিযোগ পাওয়ার পরপরই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। দুই আসামিকে ধরার চেষ্টা চলছে।”

জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভার তথ্য অনুযায়ী, জুন ও জুলাই মাসে মাদক ও চোরাচালান সংক্রান্ত মামলা হয়েছে যথাক্রমে ৭৯ ও ৭০টি। এছাড়া চুরির ঘটনায় মে মাসে ২০টি, জুনে ২২টি ও জুলাইয়ে ১২টি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।

শহরের ব্যস্ত সড়ক যশোর-খুলনা মহাসড়কের আইটি পার্কের বিপরীতে মটরপার্টস ব্যবসায়ীদের গোডাউনে প্রায় নিয়মিত চুরির ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন যশোর চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক তানভিরুল ইসলাম সোহান। তিনি বলেন, “ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে আছি। রাতের বেলায় দোকান ফেলে বাড়ি যাওয়া এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।”

এ অবস্থায় যশোরের মানবাধিকার সংগঠন ‘রাইটস যশোর’-এর নির্বাহী পরিচালক বিনয়কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, “সার্বিকভাবে বিচার করলে বলতে হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল না। খুন ও ধর্ষণের মতো ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে।”

অন্যদিকে, যশোর জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার বলেন, “প্রত্যেকটি মামলায় আমরা কাজ করছি। খুনের অনেকগুলোর রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে, আসামিরাও গ্রেফতার হয়েছে। সব ঘটনাই আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে হচ্ছে না। অনেক ঘটনার পেছনে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বও রয়েছে। তবু আমরা আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

অপরাধের লাগাম টানতে না পারলে যশোর হারাতে পারে তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বাস মিললেও মাঠপর্যায়ে তার বাস্তব প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না—এমন অভিযোগ সাধারণ মানুষের।