০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫

ভারতের গুজরাটে আটক কথিত বাংলাদেশি সন্দেহে সাড়ে ছয় হাজার মানুষ

নিউজ ডেস্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের গুজরাট রাজ্যের পুলিশ বলছে শনিবার ভোর রাত থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত সাড়ে ছয় হাজার মানুষকে তারা আটক করেছে, যারা বাংলাদেশি নাগরিক বলে পুলিশের সন্দেহ। তবে নিশ্চিতভাবে ৪৫০ জন বাংলাদেশিকে তারা চিহ্নিত করতে পেরেছেন বলে সোমবার জানিয়েছেন রাজ্য পুলিশের মহা-নির্দেশক বিকাশ সহায়।

সংবাদসংস্থা পিটিআই সোমবার রাতে বিকাশ সহায়কে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, নথির ভিত্তিতে এখনো পর্যন্ত এটা নিশ্চিত করা গেছে যে ৪৫০ জন বাংলাদেশি নাগরিক বেআইনিভাবে এখানে থাকছিলেন। আটক হওয়া বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আমাদের মনে হচ্ছে যে একটা বড় সংখ্যায় বেআইনি বাংলাদেশিদের পরিচয় আমরা নিশ্চিত করতে পারব।ীসুরাত থেকে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক হওয়া সুলতান মল্লিকের স্ত্রী সাহিনা বিবি বলেন, রাত তিনটে নাগাদ পুলিশ আসে আমাদের বাসায়। আমার স্বামী, বাচ্চাদের– সবার আধার কার্ড দেখতে চায়। তারপরে তারা আমার স্বামী আর দুই ভাগ্নেকে নিয়ে যায়। ওরা বলেছিল যে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসবে আমার স্বামী। কিন্তু প্রায় তিন দিন হতে চলল, তিনি ফেরেননি।

যেদিন প্রথম অপারেশন শুরু হয়, সেদিনই আটক হন মল্লিক ও তার দুই কিশোর ভাগ্নে।

বাংলাদেশি সন্দেহেই এদের আটক করা হয়, তবে বিবিসি বাংলার হাতে মল্লিকের পাসপোর্ট ও ১৯৯৩ সালের একটি জমির দলিল হাতে এসেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুর অঞ্চলের বাসিন্দা।

পশ্চিমবঙ্গের সুলতান মল্লিক কেন আটক?

সুলতান মল্লিক বছর ছয়েক ধরে সুরাতে এমব্রয়ডারির কাজ করেন। তার স্ত্রীর কথায়, প্রথমে তো জানতেই পারিনি যে কোন থানায় নিয়ে গেছে, কোথায় রেখেছে। শনিবার বেলার দিকে আমার স্বামী পুলিশের একটা নম্বর থেকেই ফোন করে জানায় যে তাদের কোনো একটা গুদাম ঘরে রেখেছে। সব নথি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে বলেন আমার স্বামী। পাসপোর্ট, জমির দলিল – যা যা প্রমাণ ছিল, সব পাঠিয়েছি। কিন্তু তারপর থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত আর কোনো যোগাযোগ নেই।

এদিকে আমার শাশুড়ি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তার ছেলের এই দশা দেখে, আমার বড় মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। মাত্র এক বছর হলো আমি গুজরাতে এসেছি– এখন কোথায় স্বামীর খোঁজ করতে যাব বুঝতে পারছি না।

পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে, এমন একটি সংগঠন ‘পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ’ গুজরাতের ধরপাকড় শুরু হওয়ার পরে একটি হেল্পলাইন খুলেছে। প্রিয়জনের খোঁজ পাওয়ার জন্য ওই হেল্প লাইনে গত দুদিনে প্রিয়জনের খোঁজ না পাওয়া একশোরও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানাচ্ছিলেন সংগঠনটির রাজ্য সম্পাদক আসিফ ফারুক।

তিনি বলছেন, গুজরাতে সংখ্যাটা বড়, তাই বিষয়টা ব্যাপক আলোচনায় উঠে এসেছে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা আর মহারাষ্ট্রেও পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষী মুসলমানদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে হেনস্থা করার ঘটনা সম্প্রতি খুব বেড়ে গেছে। এরকম পরিস্থিতি হতে যাচ্ছে এই আশঙ্কা করেই আমরা গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে একটা চিঠিও দিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে কাজ যে কিছু হয়নি, দেখাই যাচ্ছে।

তার কথায়, আরও একটা গুরুতর বিষয় জানতে পারলাম মল্লিকের ব্যাপারে। আটক হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আদালতে পেশ করার কথা। কিন্তু তিনদিন হয়ে গেল তাদের আটক করা হয়েছে, আদালতে কেন পেশ করা হল না এখনও!

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ০৭:৩৭:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

ভারতের গুজরাটে আটক কথিত বাংলাদেশি সন্দেহে সাড়ে ছয় হাজার মানুষ

আপডেট: ০৭:৩৭:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের গুজরাট রাজ্যের পুলিশ বলছে শনিবার ভোর রাত থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত সাড়ে ছয় হাজার মানুষকে তারা আটক করেছে, যারা বাংলাদেশি নাগরিক বলে পুলিশের সন্দেহ। তবে নিশ্চিতভাবে ৪৫০ জন বাংলাদেশিকে তারা চিহ্নিত করতে পেরেছেন বলে সোমবার জানিয়েছেন রাজ্য পুলিশের মহা-নির্দেশক বিকাশ সহায়।

সংবাদসংস্থা পিটিআই সোমবার রাতে বিকাশ সহায়কে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, নথির ভিত্তিতে এখনো পর্যন্ত এটা নিশ্চিত করা গেছে যে ৪৫০ জন বাংলাদেশি নাগরিক বেআইনিভাবে এখানে থাকছিলেন। আটক হওয়া বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আমাদের মনে হচ্ছে যে একটা বড় সংখ্যায় বেআইনি বাংলাদেশিদের পরিচয় আমরা নিশ্চিত করতে পারব।ীসুরাত থেকে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক হওয়া সুলতান মল্লিকের স্ত্রী সাহিনা বিবি বলেন, রাত তিনটে নাগাদ পুলিশ আসে আমাদের বাসায়। আমার স্বামী, বাচ্চাদের– সবার আধার কার্ড দেখতে চায়। তারপরে তারা আমার স্বামী আর দুই ভাগ্নেকে নিয়ে যায়। ওরা বলেছিল যে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসবে আমার স্বামী। কিন্তু প্রায় তিন দিন হতে চলল, তিনি ফেরেননি।

যেদিন প্রথম অপারেশন শুরু হয়, সেদিনই আটক হন মল্লিক ও তার দুই কিশোর ভাগ্নে।

বাংলাদেশি সন্দেহেই এদের আটক করা হয়, তবে বিবিসি বাংলার হাতে মল্লিকের পাসপোর্ট ও ১৯৯৩ সালের একটি জমির দলিল হাতে এসেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুর অঞ্চলের বাসিন্দা।

পশ্চিমবঙ্গের সুলতান মল্লিক কেন আটক?

সুলতান মল্লিক বছর ছয়েক ধরে সুরাতে এমব্রয়ডারির কাজ করেন। তার স্ত্রীর কথায়, প্রথমে তো জানতেই পারিনি যে কোন থানায় নিয়ে গেছে, কোথায় রেখেছে। শনিবার বেলার দিকে আমার স্বামী পুলিশের একটা নম্বর থেকেই ফোন করে জানায় যে তাদের কোনো একটা গুদাম ঘরে রেখেছে। সব নথি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে বলেন আমার স্বামী। পাসপোর্ট, জমির দলিল – যা যা প্রমাণ ছিল, সব পাঠিয়েছি। কিন্তু তারপর থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত আর কোনো যোগাযোগ নেই।

এদিকে আমার শাশুড়ি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তার ছেলের এই দশা দেখে, আমার বড় মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। মাত্র এক বছর হলো আমি গুজরাতে এসেছি– এখন কোথায় স্বামীর খোঁজ করতে যাব বুঝতে পারছি না।

পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে, এমন একটি সংগঠন ‘পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ’ গুজরাতের ধরপাকড় শুরু হওয়ার পরে একটি হেল্পলাইন খুলেছে। প্রিয়জনের খোঁজ পাওয়ার জন্য ওই হেল্প লাইনে গত দুদিনে প্রিয়জনের খোঁজ না পাওয়া একশোরও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানাচ্ছিলেন সংগঠনটির রাজ্য সম্পাদক আসিফ ফারুক।

তিনি বলছেন, গুজরাতে সংখ্যাটা বড়, তাই বিষয়টা ব্যাপক আলোচনায় উঠে এসেছে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা আর মহারাষ্ট্রেও পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষী মুসলমানদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে হেনস্থা করার ঘটনা সম্প্রতি খুব বেড়ে গেছে। এরকম পরিস্থিতি হতে যাচ্ছে এই আশঙ্কা করেই আমরা গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে একটা চিঠিও দিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে কাজ যে কিছু হয়নি, দেখাই যাচ্ছে।

তার কথায়, আরও একটা গুরুতর বিষয় জানতে পারলাম মল্লিকের ব্যাপারে। আটক হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আদালতে পেশ করার কথা। কিন্তু তিনদিন হয়ে গেল তাদের আটক করা হয়েছে, আদালতে কেন পেশ করা হল না এখনও!