তিন দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ তিন দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ-২০২৫ এর উদ্বোধন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে ভাষণ প্রদানের মাধ্যমে তিনি পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন করেন।
বক্তব্যের শুরুতেই মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের অবদান উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পুলিশের গৌরবময় ইতিহাসে পুলিশের এই অবদান মহাগৌরবের অধ্যায়।”
এসময় মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পুলিশ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সর্বস্তরের মানুষের অধিকার মর্যাদা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে, কোনো বৈষম্য থাকবে না- যুগ যুগ ধরে এটাই ছিল মানুষের মহান আকাঙ্ক্ষা। এই আকাঙ্ক্ষা পূরণে জোর ভূমিকা রাখতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।”
তিনি বলেন, “স্বৈরাচার শাসনামলের ১৫ বছরে পুলিশ বাহিনীকে দলীয় বাহিনী করায় সমস্ত ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। স্বৈরাচারের অবৈধ অন্যায় আদেশ পালন করতে গিয়ে পুলিশ বাহিনী ব্যাপকভাবে জানরোষের মুখে পড়ে। অনেক সৎ পুলিশ সদস্যকেও এজন্য মাসুল দিয়ে দিতে হয়েছে। গত বছরের আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার যখন দায়িত্ব গ্রহণ করে তখন এ দেশের আইনশৃঙ্খলার অবস্থা ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল। পুলিশের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য যত রকম ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সব রকমের ব্যবস্থা নেয়। সড়ক-মহাসড়কে দুর্ভোগ নিরসন, বিশেষ অভিযান জোরদার, পুলিশ সদস্যদের মনোবল ফেরাতে প্রয়োজনীয় প্রণোদনামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, পুলিশের অক্লান্ত পরিশ্রমে বিশ্ব ইজতেমা, দুর্গাপূজা ঈদুল ফিতর, বাংলা নববর্ষসহ বিভিন্ন উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, “দেশে যতগুলো ঘটনা ঘটছে সবগুলো ঘটনায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে আপনারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সমন্বয়ে বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। এজন্য আমি পুলিশসহ সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা জানি পুলিশ বাহিনীর সামনে অনেক সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অপ্রতুল জনবল, লজিস্টিকস, পর্যাপ্ত বাজেট ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিগত ১৬ বছরের পুলিশ ও জনগণের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে সে দূরত্ব কমিয়ে আনা, পুলিশ বাহিনীর প্রতি মানুষের আস্তা ফিরিয়ে আনা। আমি বলব এটি কঠিন না। একবার সে আন্তরিক পরিবেশ সৃষ্টি হলে এ বন্ধন অটুট থাকবে। আমাদের সমাজ একটি সুশৃংখল সমাজ সেটি প্রমাণিত হবে।”
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
তিন দিনব্যাপী এই আয়োজনে উদ্বোধনী দিনেই এবার পদকের জন্য ঘোষিত ৬২ জন কৃতী পুলিশ সদস্যকে পদক পরিয়ে দেন প্রধান উপদেষ্টা।
এবারের পুলিশ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য ‘আমার পুলিশ, আমার দেশ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ’। অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজি, সকল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, জেলার পুলিশ সুপারসহ সব পদবীর পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।