স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ডেস্ক : আপনি জেনে অবাক হবেন। ১০ টি খাবার আর ৭ টি কুঅভ্যাস নষ্ট করে দিচ্ছে আমাদের কিডনি । অথচ, ৯৯ ভাগ মানুষ জানেই না কিডনি ভালো রাখার উপায়, কিডনি রোগ কেন হয় জানেন। কিডনি রোগের মূল কারন হচ্ছে আমাদের খাবার দাবার ।
আমরা প্রতিনিয়ত এমন সব খাবার গ্রহণ করছি, যা ধীরে ধীরে আমাদের কিডনি বিকল করে দিচ্ছে। অথচ, ৯৯% মানুষ জানেই না । আজকে জানবো কোন কোন খাবার থেকে কিডনি নষ্ট হওয়ার মতো ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও জানবো বেশ কিছু ভুল কাজ বা অভ্যেস যা আমাদের কিডনি নষ্ট হওয়ার জন্য দায়ী। তাই আজকের পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ করছি এটা আপনার কিডনির জন্য উপকারী হবে ।
কিডনি আসলে কি কাজ করে। এক কথায় কিডনি আমাদের শরীরকে বিষ মুক্ত করে । দেহের ভিতর পরিছন্নতা মূলত কিডনিই করে । দেহের ক্ষতিকর পদার্থ গুলো বের করে দেয় কিডনি। সেই কারণে কিডনি এতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের ও কিডনির প্রতি যত্নবান হওয়া খুবই জরুরী । আজকে যে ১০ ধরনের খাবারের নাম বলব, এই খাবারগুলো আপনাকে একদম বুঝেশুনে খেতে হবে ।
যে খাবারগুলো পরিমাণমতো খাওয়া উচিত, সে খাবার গুলো পরিমাণ মতো খাবেন । এবং আরো কিছু খাবারের নাম বলবো যা একদমই আপনার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিতে হবে। তাহলে চলুন ১০ ধরনের খাবার সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নিই । বলে রাখি এই ১০ টি খাবারের মধ্যে প্রথম ৪টি খাবারের নাম বলব যে ৪টি খাবার আপনি কখন খাবেন না ।
ইনস্ট্যান্ট নুডুলস
(১) নম্বর হচ্ছে ইনস্ট্যান্ট নুডুলস: ইনস্ট্যাল নুডুলস এর মধ্যে এমন কিছু সোডিয়াম থাকে, যা ধীরে ধীরে আপনার কিডনিকে নষ্ট করে দেয় । যারা প্রায়ই ইনস্ট্যাল নুডুলস গ্রহণ করছেন তারা অবশ্যই সতর্ক হয়ে যান, এবং এই খাবারটি আজই আপনার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিন ।
এনার্জি ড্রিংকসঃ
(২) হচ্ছে কোমল পানীয় বা এনার্জি ড্রিংকসঃ যে ধরনেরই কোমল পানীয় বা এনার্জি ড্রিংকস হোক না কেন, সকল প্রকার কোমলপানীয় কিংবা বাজার জাতীয় ফলের জুস ,সবকিছু তালিকার অন্তর্গত । এই ধরনের পানীয় গ্রহণ করবেন না এবং আপনার শিশুকে ওকখনো প্যাকেটজাত ফলের জুস এনার্জি ড্রিংকস খাওবেন না।
ফাস্টফুডঃ
(৩) ফাস্টফুড আপনি ঘরে তৈরি করে খান বা বাইরে খান । ফাস্টফুড তৈরি করতে আমরা এমন সব উপাদান ব্যবহার করছি যা আমাদের কিডনি নষ্ট হওয়ার জন্য দায়ী,তাই ফাস্টফুড খাওয়া একদম বাদ দিয়ে দিতে হবে । ফাস্টফুড খাওয়ার প্রবণতা শিশু থেকে মধ্য বয়সী মানুষের মধ্যে বেশি থাকে । তাই তাদেরকে বলছি আজ থেকে এই ধরনের খাবার খাওয়া একদম বন্ধ করে দিতে হবে । পিজ্জা, পেস্ট্রি, কেক, বার্গার, স্যান্ডউইচ, বা যে কোনো ধরনের তেলে ভাজা খাবার একদম বন্ধ করে দিতে হবে ।
৪) হচ্ছে চিপসঃ চিপস সেটা আলুর হতে পারে, চালের গুঁড়ার হতে পারে, কিংবা কাঁচা কলার ও হতে পারে । সেভাবেই চিপস তৈরি করা হোক না কেন, চিপস তৈরি করার সময় তাপমাত্রা এতটা বাড়িয়ে দেওয়া হয় যে, এতে খাবারে বিষক্রিয়া তৈরি হয়,যা আমরা অনেকেই জানি না । এবং এই খাবার খেয়ে কোন উপকার তো হয়ই না, বরং আপনার কিডনি সহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ গুলো নষ্ট হয়ে যায়। তাই আজ থেকে চিপস খাওয়া বন্ধ করে দিন । এবং আপনাদের বলে দিচ্ছি এই যে চিপস প্যাকেটজাত করা হয়, অর্থাৎ এই প্রক্রিয়াজাত করা হয়, এবং এর জন্য এটা সংরক্ষণের প্রয়োজন পড়ে তখন যে সকল উপাদান ব্যবহার করা হয় তা রীতিমত মানবদেহের জন্য হুমকি স্বরূপ । তাই শিশুকাল থেকে চিপস খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
এখন বলবো ৫ ধরনের খাবারের কথা, যে খাবার গুলো প্রতিনিয়ত আমরা গ্রহণ করছি । কিন্তু এ খাবার গুলো আমাদের শরীরের জন্য তখনই হুমকিস্বরুপ হয়ে যায়,যখন আমরা সঠিক পরিমাণ থেকে বেশি খেয়ে ফেলি । আর যদি পরিমিত পরিমাণ খেতে পারেন তাহলে কিন্তু কিডনির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে না । কিন্তু বেশি খেলে সমস্যা ।
(১) ভিটামিন সি জাতীয় খাবারঃ মনে রাখবেন প্রতিদিন মানুষ এর শরীরে ৫০০ মিলিগ্রামের এর বেশি ভিটামিন সি এর কোনো প্রয়োজন নেই । নিয়মিত পরিমাণের চেয়ে বেশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেলে কিডনিতে কিন্তু ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে । তাই মাত্রা অতিরিক্ত খাবেন না, আবার খাওয়া বন্ধ করেও দিবেন না ।
২) মাংস : মাংস এ প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে । বিশেষ করে গরুর মাংস । আর প্রোটিন শারীরিক বৃদ্ধি, মাংসপেশী এবং মেটাবলিজম কিডনি সুস্থ রাখতে দারুন কাজ করে । কিন্তু অতি প্রোটিনযুক্ত খাবার যদি অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন, কিডনির জন্য ক্ষতিকর হয়ে যাবে। এই কারণেই চিকিৎসকেরা উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার খুব বেশি না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অথাৎ মত সামান্য খাবেন । প্রতিদিন আপনার খাদ্য তালিকায় যদি মাংস থাকে, তাহলে সেটা যেন সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ১০০ গ্রামের বেশি না হয় সাবধান । এর বেশি যদি খান, তাহলে আপনার কিডনির উপরে প্রেশার হয়ে যাবে ।
৩) হচ্ছে লবণঃ সোডিয়াম, পটাশিয়াম এর মিশ্রনে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে কাজ করে এ লবণ। সেই সাথে কিডনির কার্যক্রম কে ঠিক রাখে। কিন্তু অধিক পরিমাণ সোডিয়াম কিডনির জন্য ভয়ঙ্কর । লবণ এ থাকে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম । এই কারণে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া যাবে না ।
৪) বাদামঃ বাদাম খুবই স্বাস্থ্যকর একটি খাবার এবং এতে কোন সন্দেহ নেই যে প্রত্যেকটা মানুষ সুস্থ থাকার জন্য বাদাম খাওয়া জরুরি । কিন্তু মনে রাখবেন এটি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে হয়ে যায় । অথাৎ দৈনিক যদি আপনি ১০ থেকে ১২ টির বেশি চিনা বাদাম এবং এর সাথে যদি আপনি কাঠবাদাম ও খেয়ে ফেলেন অনেক বেশি,তাহলে সেটা ক্ষতিকর । আপনি পরিমাণ মত খাবেন, কাঠবাদাম খেলে সর্বোচ্চ ৭ এবং চিনা বাদাম খেলে ৭টির বেশি নয়।
৫) হচ্ছে দুধ জাতীয় খাবারঃ দুধ,ঘি,পনির,দই, সহ এই খাবার গুলো কেলসিয়াম এ ভরপুর। এসব খাবার না খেলে কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হবেন । কিন্তু যারা ইতিমধ্যে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন । তারা অবশ্যই এ খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন । আর যাদের কিডনি সুস্থ আছে তারাও মাত্রার অতিরিক্ত খেয়ে ফেলবেন না । এছাড়াও কফি অনেক ভালো একটা ইনস্ট্যান মানুষ কে এনার্জি দেয় এতে ক্যাফেন্ট রয়েছে। কিন্তু এ ক্যাফিন পকিডনির পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় ।তাই পরিমিত কফি খাবেন। আপনার কিডনি যদি ঝুঁকিতে থাকে তাহলে সম্ভব হলে কফিটাকে এভয়ড করুন ।
এবার আসুন কোন বাজে অভ্যাস গুলোর জন্য আমাদের কিডনি নষ্ট হচ্ছেঃ
১) পর্যাপ্ত পানি পান না করা । দিনে অবশ্যই ৮ গ্লাস পানি পান করতে হবে ।যদি ঘাম বেশি হয় তাহলে পানির পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিতে হবে ।
২) দীর্ঘক্ষন প্রস্রাব না করে, প্রস্রাব কে আটকে রাখা । প্রিয়দর্শক কখনোই এ ভুলটা করবেন না, অনেকে আছে প্রস্রাব আটকে রেখে কিডনির ওপর মারাত্মক পেসার দিচ্ছেন । এতে কিডনি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে ।
৩) ব্যাথা নাশক ঔষধ বেশি বেশি সেবন করা। শরীরের একটু ওনিশ-বিশ হলেই । একটু মাথাব্যথা হলে বা হালকা জ্বর হলেই প্যারাসিটামল খাছেন এটা কিন্তু ভাল নয় । অতিরিক্ত ব্যথানাশক ঔষধ সেবন করা থেকে দূরে থাকতে হবে ,অ্যলকোহল তো পুরোপুরি বাদ দিয়ে দিতে হবে,ধুমপান বাদ দিতে হবে । আর ভয়ংকর অভ্যাস হচ্ছে রাত জাগা, রাত ১০টার পরে যখন আমাদের ব্রেইন থেকে একটা বিশেষ ধরনের হরমোন রিলিজ হয় যেটা শরীর কে শান্ত করে । সেটা কিন্তু রাতের ১০ টার পরে যদি আপনি ঘুমের মধ্যে না থাকেন তাহলে আর রিলিজ হবে না, আর আপনি আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়বেন । তাই আপনার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোকে এবং টিস্যুগুলোকে নবায়ন করার জন্য । এবং কিডনি নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য নিয়মিত রাত ১০ টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ুন ।
ইনশাআল্লাহ, আজকে আপনাদের কাছে যে সকল খাবার গুলোর কথা বলেছি এবং অভ্যাস এর কথা বলেছি । এগুলো যদি কেউ সঠিকভাবে মেনে চলতে পারেন। ইনশাআল্লা,সে ভাল থাকবে এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ গুলো যেমনঃ হাট, লিভার সেগুলো ভালো থাকবে। ইনশাআল্লাহ, অবশ্যই নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করুন ।
মনে রাখবেন কিডনি ড্যামেজ এমন একটা সমস্যা তা একবার হয়ে গেলে দ্বিতীয়বার আর ঠিক হয়না । আজ আপনি পানি খাচ্ছেন না , আজ আপনি মানছেন না কিডনি রোগ হয়ে গেলে অনেক খাবারই আপনার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাবে। আর কিডনি রোগীরা দৈনিক বেশি পানি খেতে পারে না তাই ভালো থাকতেই কিডনির যত্ন নিন ।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.