আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ২০১৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার করকোরান জেলে জেইম ওসুনা নামে এক বন্দি তাঁর কুঠুরিতে থাকা অন্য এক আবাসিক লুইস রোমেরোকে নির্যাতন ও শিরশ্ছেদ করে খুন করেন। জেলের ভিতরে খুন করা সত্ত্বেও রক্ষীরা ঘুণাক্ষরে এই খুনের কথা টের পাননি।
কিন্তু ওসুনার নৃশংসতার সূত্রপাত হয়েছিল এর অনেক আগে। ২০১১ সালে ছয় সন্তানের মা ৩৭ বছর বয়সি ইভেট পেনাকে খুন করার জন্য ওসুনাকে গ্রেফতার করা হয়। ছ’বছরেরও বেশি সময় ধরে এই মামলাটি চলে। ২০১৭ সালে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন।
স্বঘোষিত ‘শয়তানের উপাসক’ ওসুনা অনেক দিন ধরে নজরে আসার চেষ্টা করলেও ২০১১ সালে ইভেটকে খুন করার পরই তিনি প্রকৃতপক্ষে সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে আসেন।
১৯৮৮ সালের ৭ মার্চ জন্ম ওসুনার। এক বছর পরে, তাঁর মা এবং বাবার বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। এর পর তাঁর মা মিশেল আবার বিয়ে করেন জেফ নামে এক ব্যক্তিকে। ২০০০ সালে মিশেল এবং জেফ মারা যান।
সৎবাবা ছোটবেলা থেকেই ওসুনার উপর নির্যাতন চালাতেন। পাঁচ বছর বয়সে ওসুনার সৎবাবা তাঁকে গাছে বেঁধে মারধর করতেন। ওসুনাকে মারধর করতেন সৎকাকাও।
২০০৮ সালে একটি পার্টিতে জেন নামে এক মহিলার সঙ্গে দেখা হয় ওসুনার। দু’বছর ধরে প্রেম করার পর ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁরা একে অপরকে বিয়ে করেন।
২০১০ সালের অগস্টে স্ত্রীকে মারধর করার জন্য পুলিশ ওসুনাকে গ্রেফতার করে। ন’মাস জেলে থাকার পর তিনি ছাড়া পান। একই বছরে জেন এবং ওসুনার প্রথম সন্তান জন্ম নেয়।
কিশোর বয়সেই অপরাধ জগতে নাম লেখান ওসুনা। স্থানীয় একটি গ্যাংয়ের সদস্য ছিলেন তিনি। কম বয়স থেকে মাদকাসক্তও হয়ে প়ড়েছিলেন তিনি। মাত্র ১৫ বছর বয়সে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
এর পর থেকে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন অপরাধের জন্য বেশ কয়েক বার জেলে থাকতে হয় ওসুনাকে। এর পর ইভেটকে খুনের অভিযোগে তাঁকে ২০১১ সালে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর ওসুনা দাবি করেন, ইভেটের মৃত্যুর আগে তাঁর সঙ্গে দেখা হলেও তিনি ইভেটকে খুন করেননি।
ওসুনা আদালতে জোর গলায় বলেন যে, এই খুন তিনি করেননি। এর পর বিচার চলাকালীন তাঁকে দীর্ঘ প্রায় ছ’বছর জেলে কাটাতে হয়। শুনানি চলাকালীনই নিজের মুখে বিভিন্ন ধরনের ট্যাটু করান ওসুনা।
২০১৭ সালের মে মাসে ইভেটকে খুন করার জন্য ওসুনাকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। সাংবাদিকদের সামনেই বলেন, তিনি মানুষকে নির্যাতন করতে পছন্দ করেন। আবার কী ভাবে খুন করা যায় তার উপায় তিনি খুঁজে বার করবেন বলেও জানান তিনি। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় তাঁর।
দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ওসুনাকে করকোরান জেলে পাঠানো হয়। এই জেলেই তিনি তাঁর জীবনের সব থেকে নৃশংস অপরাধটি করেন। ‘কথা মতো’ আরও একটি খুন করেন ওসুনা।
করকোরান জেলে ওসুনার পরিচয় হয় লুইস রোমেরো নামে অন্য এক আবাসিকের সঙ্গে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে রোমেরো গ্রেফতার হন। এর পর থেকে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে তিনি জেলেই দিন কাটাচ্ছিলেন।
কম্পটনে এক মহিলাকে গুলি করে খুন করায় দোষী ছিলেন রোমেরো। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে রোমেরো আগের সংশোধনাগার থেকে করকোরান জেলে পৌঁছন। কারারক্ষীরা তাঁকে এবং ওসুনাকে একই কুঠুরিতে রেখেছিলেন।
ওসুনা এবং রোমেরোকে এক কুঠুরিতে রাখার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রোমেরোকে খুন করে তাঁর দেহ টুকরো টুকরো করে ফেলেন ওসুনা।
রোমেরোকে টুকরো টুকরো করে খুন করতে একটি রেজার-ব্লেড ব্যবহার করেছিলেন ওসুনা। পরে জানা গিয়েছিল, প্রথমে ওসুনা রোমেরার একটি চোখ এবং একটি আঙুল কেটে ফেলেন। এর পর তিনি রোমেরোর পাঁজরের কিছু অংশ এবং তাঁর ফুসফুস কেটে ফেলেন।
এর পর ওই রেজার দিয়ে রোমেরোর মাথাও কেটে ফেলেন ওসুনা। মুখের দু’পাশে এমন ভাবে কেটে ফেলেন যাতে রোমেরোকে দেখে মনে হয় যেন তিনি হাসছেন (ব্যাটমান সিনেমায় জোকার চরিত্রের মুখ যে রকম ছিল)।
তবে রোমেরা যে খুন হয়েছেন তা প্রায় এক দিন পর্যন্ত বুঝতে পারেননি কারারক্ষীরা। রক্ষীরা যখন এক দিন পর ওসুনার কুঠুরিতে পৌঁছন, তখন তাঁদের হাড়হিম হয়ে যায়। কারারক্ষীরা দেখেন রোমেরোর দেহ টুকরো টুকরো করা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে হার বানিয়ে তা গলায় পরে বসে আছেন ওসুনা।
ওসুনা ঠান্ডা গলায় কারারক্ষীদের কাছে নিজের অপরাধ স্বীকার করেছিলেন। এর পর থেকেই ওসুনাকে নিয়ে সাবধান হয়ে যান কারারক্ষীরা। তাঁকে একটি আলাদা কুঠুরিতে বন্ধ করে রাখা হয়। অন্য বন্দিদেরও ওই কুঠুরির আশপাশে যাওয়ার উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেন কর্তৃপক্ষ। বর্তমানেও করকোরান সংশোধনাগারেই বন্দি রয়েছেন ওসুনা।
সুত্র --- আনন্দবাজার পত্রিকা ।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.