সানজিদা আক্তার সান্তনা, যশোর অফিস : বকচর হুসতলা এলাকার বাসিন্ধা তোলহা এন্টার প্রাইজের মালিক হাসান যশোরের কাস্টমসে কর্মরত এক সহকারী রাজস্ব অফিসারের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হতে চলেছে। টাকার অভাবে আমদানি রপ্তানির ব্যবসা ছেড়ে তিনি এখন জুতার দোকান দিয়ে কোনভাবে সংসার চালাচ্ছেন। ইন্দ্রজিত মুখার্জী নামে ওই কর্মকর্তা তার আমদানি করা একটি পণ্যচালান ছাড় করাতে ঘুষ নিয়েছেন ৮০ লাখ টাকা। এখন দাবি করছেন আরো ৩০ লাখ। এই টাকা লেনদেন হয় নগদ ও চেকের মাধ্যমে। এ ব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো এক অভিযোগ পত্রে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, যশোর শহরের বকচর হুসতলার তোলহা এন্টার প্রাইজের মালিক হাসান বিদেশ থেকে এলসিতে একটি ইলেট্রিক সামগ্রীর পণ্যচালান আমদানি করেন। যা গত বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌছায়। চালানটি ছাড় করাতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়েন হাসান। এক পর্যায় তিনি যশোর শহরে বাড়ি কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব অফিসার ইন্দ্রজিত মুখার্জীর শরনাপন্ন হন। পরে তারই আহবানে ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্রগাম বসুন্ধরা আবসিক হোটেলে তাদের আলাপ হয়। সেখানে তিনি মাল ছাড় করাতে ৮০ লাখ টাকা দাবি করেন। হাসানের কাছে টাকা না থাকার করনে অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি সাতক্ষীরার কলরোয়ার এমএম কার্গো কেরিয়ারের স্বত্তাধিকারী শহিদুল ইসলামের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন এবং তার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে তাকে দিতে বলেন।

পরে ইন্দ্রজিত মুখার্জীর মধ্যস্থতায় শহিদুল ইসলামের সাথে এব্যাপারে ৩শ’ টাকার ষ্টাম্পে একটি চুক্তি হয় এবং শহিদুল ইসলাম ৩ টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৪৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৩ টাকা এবং হাসান নগদ ৮ লাখ টাকা ইন্দ্রজিত মুখার্জীকে প্রদান করেন। এছাড়া হাসান ইন্দ্রজিত মুখার্জীকে ৩িনটি চেক প্রদান করন। ষ্টাম্পের প্রথম পাতায় ওই ৩টি চেকের নম্বর উল্লেখ করা আছে। যেখানে স্বাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন ইন্দ্রজিত মুখার্জী। ৩টি চেকের মধ্যে ২ টি ইন্দ্রজিত মুখার্জীর নামে এবং অপরটি তার সহযোগী জমির হোসেনর নামে। ব্যাংক এশিয়া যশোর শাখার ওই চেক নম্বর হচ্ছে যথাক্রমে ৩৩০৫৭৬৯, টাকা ১০ লাখ, ৩৩০৫৭৭০, টাকা ৮ লাখ এবং ৩৩০৫৭৭১, টাকা ১০ লাখ। লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে পরবর্তীতে হাসন তার পণ্য চালান ছাড় করানোর পর তারা ৮০ লাখ টাকার মাল বুঝে নেন এবং পরদিন তার এলসি’র কাগজপত্র, প্রদত্ত চেক এবং চুক্তি নামার মূল ষ্টাম্প ফেরৎ দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

তাদের ওয়াদা অনুযায়ী হাসান পর দিন এসব ফেরৎ চাইতে গেলে তার কাছে আরো ৩০ লাখ টাকা দাবি করেন ইন্দ্রজিত মুখার্জী। ওই টাকা না দেয়ায় তিনি চেক ও ষ্টাম্প ফেরত না দিয়ে অযাথা হয়রানি করে আসছেন বলে অভিযোগে দাবি করা হয়েছে।

এব্যাপারে ইন্দ্রজিত মুখার্জীর সাথে দুপুরে বারবার মুঠোফোন ০১৭১১-০৪৫৮৩২ নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। রাত ১১টা ২মিনিটে আবারো ফোন করলে সিমটি ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে জানান।

এব্যাপারে হাসান জানান, তাকে চরমভাবে ঠকানো হয়েছে। সব হারিয়ে তিনি এখন সর্বশান্ত। আর এর নাটের গুরু হচ্ছে ইন্দ্রজিত মুখার্জী। তিনি তার চেকসহ অন্যান্য কাগজপত্র আটকে রেখে লোক মারফত সেই ঘুষের টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন।

স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, ইন্দ্রজি মুখার্জী বেজপাড়ায় একটি বেসরকারি সংস্থা পর্দার আড়ালে থেকে পরিচালনা করছেন। যেখানে লাখ লাখ টাকা সুদের কারবার চলছে। ইন্দ্রজিত মুখার্জীর অবৈধ আয়ের টাকা ওই বেসরকারি সংস্থায় লগ্নি করা রয়েছে বলে অভিযোগে প্রকাশ। তবে ওই সংস্থার প্রধান ইন্দ্রজিত মুখার্জীকে চিনলেও তার অর্থ লগ্নির বিষয়টি অস্বীকার করেন।