খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, যশোর | তারিখঃ আগস্ট ১০, ২০২২ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 4501 বার
আব্দুল্লাহ আল-মামুন, স্টাফ রিপোর্ট : ভারত রেলপথে আসা আমদানি পণ্য যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে সড়ক বন্ধ করে খালাস করা হচ্ছে । এতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে পথচারীরা। মৃত্যুঝুঁকির আতঙ্ক রয়েছে এলাকাবাসির মাঝে। পাশাপাশি, আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
অভিযোগ করে ব্যবসায়ী ও পথচারীরা বলেন, সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে বিভিন্ন দফতরে গিয়েও কাজ হয়নি। এ দুর্ভোগ যেন এলাকাবাসির নিয়তিতে পরিণত হয়েছে। তবে রেল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, পণ্য লোড-আনলোডের জন্য বন্দরের দুপাশে ইয়ার্ড নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। যা বাস্তবায়িত হলে এই সমস্যার সমাধান হবে।
স্থানীয় সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী রাসেদুজ্জামান রাসেল জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে আগে স্থলপথে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চলত। তবে বর্তমানে সীমান্ত সংলগ্ন ভারতের বনগাঁ পৌরসভার টার্মিনালে দিনের পর দিন ট্রাক আটকে রেখে হাজার হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করা হচ্ছে। এতে আমদানিকারকদের খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে খরচ বাঁচাতে ও দ্রুত পণ্য পাওয়ার আশায় তারা বেছে নিয়েছেন রেলপথ। কিন্তু সংকীর্ণ রেলপথ আর ইর্য়াড না থাকায় ব্যস্ততম সড়কে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে বন্দরে পণ্য খালাস করছে রেল কর্তৃপক্ষ।
প্রায় প্রতিদিনই ২ থেকে ৩ ঘণ্টা রাস্তা বন্ধ করে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকায় পথচারীরা পড়েছেন বিপাকে। ওভারব্রিজ না থাকায় মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই ট্রেনের দুই বগির মাঝখান ও নিচ দিয়ে চলাচল করছেন। আর রাস্তা পারাপারের অপেক্ষায় আটকা পড়ে থাকতে হচ্ছে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী যানবাহনকে। এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা রাসেল ইসলাম বলেন, ‘কর্মস্থলে যেতে আমাদের বেনাপোল ছোট আঁচড়া সড়ক ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু এই সড়ক বন্ধ করে রেলের পণ্য খালাস করা হচ্ছে বন্দরে। ফলে আমাদের যাতায়াতে অনেক অসুবিধা হচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত বন্দরের দুপাশে ইয়ার্ড নির্মাণ করে এই পথের প্রতিবন্ধকতা দূর করা হোক।’ পথচারী সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘কখন ট্রেন ছেড়ে দেয় এ আতঙ্ক নিয়ে ট্রেনের নিচ দিয়ে চলাচল করতে হয়। প্রায় এক বছর ধরে তাদের এ কষ্ট ভোগ করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। বিভিন্ন মহলে অভিযোগ জানিয়েও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।’ আমদানি-রফতানি পণ্য বহনকারী বেনাপোল ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক শাহিন হোসেন জানান, ‘রাস্তা বন্ধ করে দীর্ঘক্ষণ ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকায় ট্রাকগুলো পার হতে পারে না। ফলে মারাত্মক যানজট দেখা দেয়। রফতানি পণ্যগুলো সময়মতো নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও অসুবিধা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রেলওয়ের বেনাপোল স্টেশন মাস্টার সাইদুর রহমান জানান, ‘রেলের পণ্য বেনাপোল বন্দরে খালাস করার জন্য যে অবকাঠামো প্রয়োজন তা এখনও গড়ে ওঠেনি। বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অনুরোধে রেলগাড়ি সড়কে দাঁড় করিয়ে পণ্য খালাস করায় পথচারীদের দুর্ভোগ হচ্ছে। তবে কিছুদিনের মধ্যে ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শুরু হবে। তখন আর এ দুর্ভোগ থাকবে না।’
বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর বলেন, ‘করোনার কারণে স্থলপথে পণ্য আমদানিতে নানা সমস্যার কারণে রেলপথে পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। রেলপথে পণ্য খালাসে মানুষের চলাচল কষ্ট বেড়েছে। তবে বন্দরের দুই ধার দিয়ে রেলপথ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।’ উল্লেখ্য, প্রতিবছর বেনাপোল বন্দরে রেল ও স্থলপথে আমদানি পণ্য থেকে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হচ্ছে। তবে বাণিজ্যিক স্বার্থে এখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর দীর্ঘদিনেও উন্নয়ন হয়নি।