ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ হস্তান্তরের দুই বছর পার না হতেই ৪৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মিত আড়াই’শ বেডের ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল ভবনের টাইলস উঠে গেছে। এসির পানি ধরতে বিভিন্ন স্থানে পাতা হয়েছে বালতি। অপারেশন থিয়েটারের টাইলস খসে পড়েছে। ভবনের বিভিন্ন দেয়ালে নোনা ধরেছে। মাঝেমধ্যেই অচল হয়ে পড়ছে লিফট।
সাড়ে ৪৩ কোটি টাকার বেশি ব্যায়ে নির্মিত হাসপাতাল নিয়ে চিকিৎসক কর্মচারীদের অভিযোগের অন্ত নেই। এসব বিষয় গত ৮ মার্চ ৩০০ নং স্মারকে অভিযোগ আকারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের অধীনে আট তলাবিশিষ্ট এ হাসপাতাল ভবন নির্মাণের দায়িত্বে ছিল ঝিনাইদহ গণপূর্ত অধিদপ্তরের। নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে টি.ই এন্ড ইউসিসি জেভি নামে একটি যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ভবন ও যন্ত্রপাতিসহ এতে ব্যয় হয় মোট ৪৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা। নির্মাণ কাজ শেষে ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগ ২০২১ সালের আগষ্ট মাসে ভবন হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। ভবন হস্তান্তরের কিছুদিনের মধ্যেই নির্মানকাজে নানা ত্রæটি ধরা পড়ে। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব মুহাম্মদ শাহাদত খন্দকার তার দপ্তরের ২৫৩ নং স্মারকে গত ৭ এপ্রিল গনপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে চিঠি দেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, “ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরের ইট শুড়কি উঠে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় টাইলস খসে যাচ্ছে। নি¤œমানে কাঠ ব্যবহারের ফলে দরজা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। পানির পাইপ ফেটে অনেক স্থানে পানি চুয়াচ্ছে। হাসপাতালের ইন্টারনাল ওয়ারিংয়ে নি¤œমানের তার ব্যবহার করা হয়েছে। জানালা ও বারান্দার গøাস ভেঙ্গে পড়েছে। মাঝে মধ্যে লিফট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে”। সরেজমিন হাসপাতাল পরিদর্শন করে দেখা গেছে, অপারেশন থিয়েটারের পশ্চিমের ওয়ালের টাইল খসে পড়েছে।
ওটি রুমের এসি দিয়ে পানি ঝরছে। এসির নিচে গামলা ও বালতি বসিয়ে রাখতে হয়েছে। অপারেশন থিয়েটারের পাশের রুমের মেঝের টাইলস পুরোটাই উঠিয়ে ফেলা হয়েছে। গত এক বছরে অন্তত ৭০ বার লিফট বন্ধ হয়েছে। এতে বিভিন্ন তলায় ওঠা-নামায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্তাবধায়ক ডাঃ সৈয়দ রেজাউল ইসলাম নির্মানে ত্রæটির কথা অস্বীকার করে বলেন, ভবনের সমস্যার কথা জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। সেখান থেকে বিষয়টি গণপূর্ত অধিদপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে জানানো হয়। গণপূর্ত বিভাগের খুলনার তত্বাবাবধায়ক প্রকৌশলী সরেজমিনে পরিদর্শন করে গেছেন। তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ত্রুটিগুলো ঠিক করে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু মাসের পর মাস পার হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি।
এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী জেরাল্ড ওলিভার গুডা জানান, হাসপাতালের কিছু কাজ করা হয়েছে। বাকি সমস্যাগুলো চলতি অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দ থেকে সমাধান করা হবে। তিরি আরো বলেন, কোনো সমস্যা দেখা দিলে মেরামত করে দেওয়া হবে। ঠিকাদার সাইফুল ইসলাম টিপু মল্লিক জানান, নির্মান কাজ গনপূর্ত ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বুঝে নিয়েছেন। এখন নির্মান কাজে ত্রæটি খুজে পাওয়ার দায়ভার ঠিকাদার নিতে পারেন না। তিনি বলেন তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার নিজে ইটালি ভ্রমন করে এসি ও লিফট কিনেছেন। এর জন্য তো আমি দায়ী নয়। উল্লেখ্য ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৭ সালে টি.ই এন্ড ইউসিসি জেভি নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মান কাজ শুরু করে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নির্মান কাজ সম্পন্ন করে ভবনটি হস্তান্তরের কথা ছিল। কিন্তু কাজের মান নি¤œমানের হওয়ায় তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শাইখ ঠিকাদারের বিল আটকে দেন। এ নিয়ে বিরোধ চরমে ওঠে। এক পর্যায়ে নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার বদলী হয়ে যান।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.