সানজিদা আক্তার সান্তনা, যশোর অফিস : শনিবার প্রথিতযশা সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবলের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী শ্রদ্ধার্ঘ্য আর দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে যশোরে পালন করা হয়েছে । এদিন সকাল থেকেই নানা কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে দিবসটি পালন করে যশোরের সর্বস্তরের সাংবাদিক বৃন্দ।
সকাল ১০ টায় প্রেসক্লাব যশোরের নেতৃত্বে সকলে কালো ব্যাচ ধারণ করে শহরের কারবালায় উপস্থিত হন। পরে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর শামছুর রহমান কেবলের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে প্রেসক্লাব যশোর, যশোর সংবাদপত্র পরিষদ, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর, যশোর জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, গ্রামের কাগজ ও দৈনিক স্পন্দন পরিবার।
এরপর বেলা ১১ টায় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। স্মরণ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যশোর জেলা জজ আদালতের পিপি এম. ইদ্রিস আলী। প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুনের সভাপত্বিত্বে অন্যান্যদের বক্তব্য রাখেন সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি একরাম-উদ-দ্দৌলা , সাধারণ সম্পাদক ও গ্রামেরকাগজ পত্রিকার সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিন, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারাজী আহম্মেদ সাঈদ বুলবুল, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি এম.আইয়ুব, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনিরুজ্জমান।
সভায় বক্তারা বলেন, ২২ বছর ধরে আইন কর্মকর্তার পরিবর্তন হয়েছে, বিচারকের পরিবর্তন হয়েছে, সরকার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল হত্যা মামলাটি আলোর মুখ দেখিনি। বিচার হয়নি প্রকৃত আসামিদের । এ ব্যর্থতার দ্বায়ভার সবার। একটি অশুভ শক্তি এর নেপথ্যে রয়েছে। যার ফলে নির্দোষ সাংবাদিকদের হত্যার আসামি বানানো হয়েছে। পূর্বপরিকল্পিতভাবেই যশোর আদালত থেকে মামলা খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছে। যেখানে রয়েছে এ হত্যার পেছনের অন্যতম নায়ক শীর্ষ সন্ত্রাসী হিরক। বাদী প্রাণ ভয়ে খুলনার আদালতে যেতে ভয় পেয়ে আদালত পরিবর্তনের আপিল করেন। অন্যদিকে নির্দোষ সাংবাদিক পুনরায় তদন্তের আবেদন জানায়। এই সুযোগে ওই পক্ষ নানা ওজুহাতে মামলাটি স্থগিত করে রেখেছে। বক্তারা আরও বলেন, যতদিন সাংবাদিকদের প্রাণ থাকবে ততদিন তারা শামসুর রহমান কেবেল ও সাইফুর রহমান মুকুলের হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। তারা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রেসক্লাব যশোরের সম্পাদক এসএম তৌহিদুর রহমান।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, সিনিয়র সাংবাদিক বোরহান উদ্দীন জাকির, প্রেসক্লাব যশোরের সহ-সভাপতি ওহাবুজ্জামান ঝন্টু, নূর ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিলন, কোষাধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান রিপন, দফতর সম্পাদক তৌহিদ জামান, সাংস্কৃতিক ও সমাজসেবা সম্পাদক তহীদ মনি, সদস্য শহীদ জয়, সাজেদ রহমান, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নূর আলম বাবুল সহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
প্রেসক্লাব আয়োজিত স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল শেষে যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষথেকে আলোচনা ও দোয়ার আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে সাংবাদিক শামছুর রহমান খুন হওয়ার পর ২০০১ সালে সিআইডি পুলিশ এই মামলায় ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। ওই সময় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর কয়েক আসামির আগ্রহে মামলার বর্ধিত তদন্ত করে সাংবাদিক ফারাজী আজমল হোসেনকে নতুন করে আসামি করা হয়। এরপর বর্ধিত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর ২০০৫ সালের জুন মাসে যশোরের স্পেশাল জজ আদালতে এই মামলার চার্জ গঠন করা হয়। ওই বছরের জুলাই মাসে বাদীর মতামত ছাড়াই মামলাটি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হয়। এ অবস্থায় মামলার বাদী শামছুর রহমানের সহধর্মিণী সেলিনা আকতার লাকি বিচারিক আদালত পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে আপিল করেন। আপিল আবেদনে তিনি বলেন, মামলার অন্যতম আসামি খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিরক পলাতক রয়েছে। হিরকসহ সংশ্লিষ্ট মামলার অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে খুলনার সন্ত্রাসীদের সখ্যতা রয়েছে। ফলে তার (বাদীর) পক্ষে খুলনায় গিয়ে সাক্ষ্য দেওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। স্মরণসভা শেষে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। যশোরে মৃতসকল সাংবাদিকদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা হয়।
বাদীর এই আপিল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মামলাটি কেন যশোরে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না- তার জন্য সরকারের ওপর রুল জারি করেন। এরপর মামলার আসামি ফারাজী আজমল হোসেন উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। সেই রিটের নিষ্পত্তি না হওয়ায় মামলার সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশের কারণে শামছুর রহমান হত্যা মামলার বিচারকাজ বন্ধ হয়ে আছে বলে জানান যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এম ইদ্রিস আলী।#
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.