আব্দুল্লাহ আল-মামুন, স্টাফ রিপোর্টার : অবশেষে বেনাপোল ইমিগ্রেশন কাস্টমসে দির্ঘদিন ধরে চলতে থাকা ভ্রমণ কর ফাঁকির ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছেন কাস্টম হাউস।
বৃহস্পতিবারের ট্রাভেল ট্যাক্স শ্লীপ জালিয়াতির ঘটনায় ৯ জনের নাম উল্লেখ্যসহ অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনের নামে মামলা করেছেন পোর্ট থানায়। এ ঘটনায় বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ বিষয়টি আমলে নিয়ে মামলার ১নং আসামী গ্রীন লাইন পরিবহনের ব্যবস্থাপক জসীম উদ্দিনসহ তার পরিবহন স্টাফ উক্ত মামলার ৪নং আসামী মোহনকে আটক করে যশোর আদালতে প্রেরণ করেছেন। অন্যন্য আসামীরা পলাতক রয়েছে।
সংবাদটি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় শুক্রবার দিনভর বন্ধছিলো চেকপোস্টের ভুঁইফোড়ের মতো গজিয়ে ওঠা প্রায় কয়েক শত এন্টার প্রাইজ, পরিবহন কাউন্টার, কম্পিউটার কম্পোজ, ফটোকপিসহ বিভিন্ন নামের দোকান। যাদের
অধিকাংশরা ভ্রমণ কর জালিয়াতি, পাসপোর্ট যাত্রীদের টাকা গুণে দেওয়ার নাম করে কৌশলে টেবিলের নিচে ফেলে দিয়ে শুভঙ্করের ফাঁকি, ছিনতাই, রাজস্ব ফাঁকিবাজ পাসপোর্ট যাত্রী নামধারী ব্যবসায়ীদের ল্যাগেজ পারাপার, হুন্ডি পাঁচারসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক বনেগেছে। আটককৃত জসীম উদ্দিন বেনাপোল পোর্ট থানার বড় আঁচড়া গ্রামের মৃত আব্দুল হাইয়ের ছেলে এবং মোহন ভবেরবেড় গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে।
মামলার অন্যন্য পলাতক আসামী হলো- হানিফ এন্টার প্রাইজ পরিবহনের বেনাপোল শাখা অফিসের ম্যানেজার নজরুল ইসলাম(৬০), দেশ ট্রাভেলস পরিবহনের ম্যানিজিং পার্টনার হাসান আলী(৫০), বড় আঁচড়া গ্রামের মিলন(৩৫), সাদিপুর গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে ইমরান(৩৩), গোল্ড সম্রাট মমিনের ছেলে শামীম হোসেন(৩০), বেনাপোল ট্রাভেল পয়েন্টের কর্মচারি ইসমাইল হোসেন(৩১), মনিরুল(৩২) সহ অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জন।
মামলার এজাহার সুত্রে জানাযায়, কাস্টম কমিশনারের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অফিসারগণ বৃহস্পতিবার বিকেল ২টা ১৫ মিনিটের সময় আর্ন্তজাতিক চেকপোস্ট বেনাপোলে আইসিপির বর্হিগমন স্ক্যানিং মেশিনের সামনে আইআরএম টিম এবং কাস্টমসের কর্মরত অফিসারগণ ভারতে গমন ইচ্ছুক পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ট্রাভেল ট্যাক্স শ্লীপ অনলাইনে কিউআর কোড স্ক্যান করে যাচাই করেন। এসময় গ্রীন লাইন পরিবহনের ১৩ জন, হানিফ এন্টার প্রাইজ পরিবহনের ৮জন, দেশ ট্রাভেলস পরিবহনের ৭ জন যাত্রীর ট্রাভেল ট্যাক্স শ্লীপ জাল/নকল পাওয়া mযায়। গ্রীন লাইনের ১৩ জন যাত্রী জানায়, যে তাদের বহনকৃত জাল ট্রাভেল ট্যাক্স শ্লীপগুলো উক্ত পরিবহনের ম্যানেজার জসীম উদ্দিন(৪৫), অফিস পিয়ন মোহন (৩০) এবং তাদের অফিস স্টাফগণ প্রদাণ করেছে। হানিফ এন্টার প্রাইজের ৮জন যাত্রী জানান, তাদের বহনকৃত জাল ট্রাভেল ট্যাক্স উক্ত পরিবহনের ম্যানেজর নজরুল, অফিস পিয়ন মিলন এবং তাদের স্টাফগণ প্রেরণ করেছে। দেশ ট্রাভেলস পরিহনের ৭জন যাত্রী জানায়, তাদের ট্যাক্স শ্লীপগুলো উক্ত পরিবহনের বেনাপোল শাখার ম্যানিজিং পার্টনার হাসান আলী, অফিস পিয়ন ইমরান এবং তাদের স্টাফগণ প্রেরণ করেছে। উক্ত বিষয়ের সত্যতা যাচাইকালে বেনাপোল শাখার দায়িত্বরত ৩জন ম্যানেজারদের জিজ্ঞাসা করলে তারা ঘটনার সত্যতাস্বীকার করেছে।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা এফ এম আতিকুর রহমানের এজাহার সুত্রে আরো জানা যায়, গ্রীন লাইন পরিবহনের যাত্রী’ পাসপোর্ট নং এ-০১২৫২৩২৩ জানান যে, বেনাপোল ট্রাভেল পয়েন্ট নামক কম্পিউটারের দোকান থেকে তাকে একটি জাল ট্রাভেল ট্যাক্স শ্লীপ প্রদাণ করেছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে বেনাপোল ট্রাভেল পয়েন্ট নামক দোকানে সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে জানা যায় উক্ত কম্পিউটার দোকান মালিক ও তাদের কর্মচারি এবং উক্ত পরিবহনগুলোর ম্যানেজার তাদের পিয়ন ও অফিস স্টাফগণ দীর্ঘদিন যাবত পরস্পর যোগ সাজসে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত যাত্রী প্রতি ৫০০/= টাকা মূল্যের ট্রাভেল ট্যাক্স শ্লীপ প্রদাণের নামে জাল ট্রাভেল ট্যাক্স শ্লীপ সৃজন করে অবৈধভাবে জনপ্রতি ৭০০/= টাকা করে নিয়ে বিপুল অংকের সরকারী রাজস্ব হাতিয়ে নিয়েছে। তাংক্ষণিক বেনাপোল পোর্ট থানায় বিষয়টি অবগত করলে পুলিশ সদস্যরা আর্ন্তজাতিক চেকপোস্ট কাস্টম বেনাপোলে এসে এসকল যাত্রীদের কাছ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জাল ট্রাভেল ট্যাক্স পে শ্লীপ(বাই ল্যান্ড) এর ২৯ পাতা এবং ১১ জন যাত্রীর বিবৃতি মোট ৫ পাতা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে বেনাপোল ট্রাভেল পয়েন্ট থেকে জাল ট্রেজারী পূরণকৃত চালান ফরম ২ পাতা এবং ১টি হিটাচি ব্রান্ডের এ ইউ জি-২০১০ মডেলের হার্ডডিস্ক, ১টি ডব্লিউ ডি ব্লু ডেস্কটপ হার্ড ড্রাইভ, ১টি ডব্লিউ ডি গ্রীন সাটা এসএসডি, ১টি লেজার সলিড স্টেট ড্রাইভ সমুহ জব্দ করা হয়।
এজাহার নামীয় আসামীরা দীর্ঘদিন যাবত জ্ঞাতসারে ও পরস্পর যোগ সাজসে জাল ট্রাভেল ট্যাক্স শ্লীপ সৃজন করে জালিয়াতি করত: সরকারী রাজস্ব আত্মসাৎ করে সাধারণ যাত্রীদের সাথে বিশ^াস ভঙ্গ পূর্বক প্রতারণা করে আসছে বলে এজাহারে উল্লেখ্য করেন তিনি।
বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) কামাল হোসেন ভুঁইয়া জানান, কাস্টমসের এজাহারকে প্রধান্য দিয়ে সরকারি রাজস্ব আত্মসাৎকারি জালিয়াত চক্রের ৯ এজাহার নামীয় আসামীসহ অজ্ঞাত নামা ২০-২৫ জন আসামীকে আটক করতে পুলিশের অভিযান চলাকালিন ২ জনকে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে তাদেরকে বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে যশোর আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। পলাতক আসামীদের আটকের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তাদেরকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানান তিনি।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.