আশরাফুজ্জামান বাবু, ঝিকরগাছা (যশোর) প্রতিনিধিঃ যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি ইউনিয়ন এবং এর আশেপাশের এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে গরু চোরেরা। তাদের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে এলাকার মানুষ। প্রতিরাতেই কোনো না কোনো এলাকায় হানা দিচ্ছে সংঘবদ্ধ চোরের দল।

জানা গেছে, গত ছয় মাসে প্রায় শতাধিক গরু চুরি হয়েছে এখান থেকে। গভীর রাতে গোয়াল ঘর থেকে গরু চুরি করে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ, সিএনজিতে উঠিয়ে নিয়ে যায় চোরেরা। আর এসব ঘটনায় খুব কম সংখ্যক মামলাই রেকর্ডভুক্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্হরা প্রতিকার পাবেন না এ আশংকা বা পুলিশি হয়রানির ভয়ে থানায় অভিযোগও দেন না। ফলে চোরের দল পার পেয়ে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে। পুলিশের নজরদারির অভাব আর রাত্রিকালীন টহল না থাকার কারণে চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না বলে অনেকের অভিযোগ। সংঘবদ্ধ চোরের দল নানা কৌশলে চুরি করে যাচ্ছে। গদখালি ইউনিয়নের বিশিষ্ট সমাজসেবক, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, ঝিকরগাছা শাখার সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, প্রতি রাতে কোনো না কোনো গ্রামে চোরের দল হানা দিচ্ছে। যাদের বাড়িতে গরু আছে তারা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে। কৃষি নির্ভর পরিবারগুলো গরু দিয়ে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে। অনেকে গরু পালনকে পেশা হিসেবে নিয়েছে আবার অনেকে গরুর দুধ বাজারে বিক্রয় করে সংসার চালায়। আর গরু চোরেরা যখন এসব মূল্যবান গরু চুরি করে নিয়ে যায় তখন হতদরিদ্র এসব পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক ব্যক্তি জানান, গোয়াল ঘরের তালা ভেঙে গরুর ঘর থেকে রশি কেটে অথবা খুলে গরু গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। শেকল দিয়ে তালা মেরে রেখেও ঠেকানো যাচ্ছে না গরু চুরি। রাতে গাড়ির ভেতরে গরু দেখলেও আটক করতে ভয় পায় জনতা। কারণ পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হয়। ফলে কাউকে আটক করা হয় না। যে কারণে সহজে পার পেয়ে যায় সংঘবদ্ধ চোরের দল। গত কয়েক মাস ধরে গদখালি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় শতাধিক গরু চুরি হয়েছে। এদের মধ্যে মাঠুয়া পাড়ার রওশনের ৩টি, খালেকের ৪টি, সাইফুদ্দিন সরদারের ১টি, হাফেজ উদ্দিনের ২টি, নেদার ১টি, রুহুল কুদ্দুসের ১টি, নাজিমের ২টি, খালেক এর ৩টি, নবীবনগরের লালটুর ২টি, হানেফের ২টি, মকবুলের ২টি, আবু হানিফের ২টি, রফিকের ৪টি, মঠবাড়ির খলিলের ২টি, মহাসীনের ২টি, মঞ্জুয়ারার ১টি, শিমুলিয়ার আন্দেলপোতা গ্রামের এক বাড়ি থেকে ৫টি, শ্রীরামকাঠি গ্রামের হজরতের ১টি সহ আরও অনেকের গরু রাতের আঁধারে চোরেরা চুরি করে নিয়ে গেছে।

গরু চুরি বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ সুমন ভক্ত বলেন, থানায় গরু চুরির অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ পেয়ে পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। চুরি যাওয়া গরুর মালিক হাফিজ জানান, থানায় অভিযোগ করেছিলাম, কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনোদিন পুলিশ এসে খোঁজ নেয়নি। মকবুল নামের আরেকজন বলেন, থানায় অভিযোগ করেছিলাম কিন্তু আজ পর্যন্ত তার কোনো অগ্রগতি আমি জানতে পারিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান গদখালির শরীফপুর গ্রামের কয়েকজন এই গরু চুরির সাথে জড়িত বলে তাদের সন্দেহ। গত ৬ জুলাই রাতে শিমুলিয়া ইউনিয়নের শ্রীরামকাঠি গ্রামের একটি চোরাই গরু শরীফপুর সেই সন্দেহভাজনের বাড়ির সামনে থেকে উদ্ধার হয়েছে। রাত ৪টার সময় স্হানীয় ভ্যানচালক নুর ইসলাম গরুসহ চোরকে দেখে ফেলায় গরুটি সেখানে রেখেই চোর পালিয়ে যায়। ইতিপূর্বেও একজন গরুচোর গরু সহ ধরা পড়লে জনতার আক্রোশের মুখে সে ঐ ব্যক্তির নাম বলে। ঐ ঘটনায় পুলিশ তাকে গ্রেফতারও করেছিলো কিন্তু প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে পরের দিনই সে ছাড়া পেয়ে যায়। গরুর খামারী নন তবুও তার উঁচু পাচিল দেয়া বাড়িতে গরু রাখার জন্য অনেকগুলো গোয়ালঘর বানানো আছে।সেখানে চোরাই গরু এনে রাখা হয় বলে স্হানীয় জনতার ধারনা। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকার কারনে ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে সাহস পায়না। তাকে গ্রেফতার করলে গরু চুরির রহস্য উদঘাটন হবে বলে তারা মনে করেন।