নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে বন্যা পরিস্থতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে সিলেট ও সুনামগঞ্জের আশি ভাগ এলাকাই এখন পানির নিচে। এছাড়া উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু জেলার নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকার ৬০ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দি। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার, সুপেয় পানি এবং ওষুধের তীব্র সঙ্কট। পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যেই সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পাহাড়ি ঢল আর অতি ভারী বৃষ্টিতে নদনদী ও হাওরের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যার আরো বিস্তৃতি ঘটেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এই দুই জেলার প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। পানিবন্দি মানুষের মধ্যে হাহাকার ও আর্তনাদ চলছে। আশ্রয়ের খোঁজে পানি-স্রোত ভেঙে ছুটছে মানুষ। সবচেয়ে বিপদে আছেন শিশু ও বয়স্করা। আটকেপড়াদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে। যেখানেই শুকনো ও উঁচু জায়গা পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ।
বন্যাকবলিত এলাকার মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, ১২২ বছরের ইতিহাসে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এমন বন্যা হয়নি। সিলেট ও সুনামগঞ্জে আগামী দুই দিনে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। শনিবার বিকালে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আগামী দুই দিনে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলে জানিয়ে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী জানান, মঙ্গলবার ও বুধবার থেকে পানি কমে সিলেট ও সুনামগঞ্জে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে দেশের মধ্যাঞ্চলে বন্যা দেখা দেবে। এই সময়ে উপরের পানি নেমে যাবে।
শনিবার দুপুরে এক সমন্বয় সভায় সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন জানান, সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় ৫০ লাখ মানুষ পানিবন্দি। এই দুই জেলায় বন্যা উপদ্রুত এলাকা থেকে দুর্গতদের উদ্ধার আর জরুরি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে সব রকমের চেষ্টা করছে জেলা প্রশাসন।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘বন্যা উপদ্রুত অঞ্চল থেকে দুর্গতদের জন্য দ্রুত উদ্ধার বা জরুরি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে প্রশাসনের তরফ থেকে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাহায্য করা হচ্ছে।’
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তলিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন দুই লাখ মানুষ। বানভাসী এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। তলিয়ে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শত-শত একর জমির পাটসহ বিভিন্ন ফসল। কাঁচা-পাকা রাস্তাগুলো তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের প্লাবিত এলাকায়।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, উজানে বৃষ্টিপাতের কারণে জেলার সব নদনদীর পানি বেড়েছে। ধরলা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্রায় সোয়া লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফের তলিয়ে গেছে শেরপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। এতে পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অন্তত ৪০ হাজার মানুষ। আন্তঃসীমান্ত নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার পাঁচটি ও শ্রীবরদীর দুটি ইউনিয়ন; চেল্লাখালী ও ভোগাই নদীর পানিতে নালিতাবাড়ীর পাঁচটি ও শেরপুর সদরের একটি ইউনিয়নসহ জেলার ১৩টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। জেলার কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলার পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। জেলার সঙ্গে উপজেলার দুটির সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া ছয় উপজেলায় সাড়ে ১৬ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। এই উপজেলা দুটির শহর থেকে শুরু করে সবগুলো গ্রামেই বন্যার পানি ঢুকেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত সাড়ে তিন লাখ মানুষ। এছাড়া খালিয়াজুরি, সদর, আটপাড়া ও বারহাট্টা উপজেলা মিলে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি।
তিস্তা নদীর পানির দাপটে দিশাহারা রংপুরের ৪ উপজেলার নদী পারের মানুষ। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলাগুলোর ৫০ হাজার বাসিন্দা। পানির নিচে গভীর নলকূপগুলো থাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে সেখানে। স্বাস্থ্যাঝুঁকি নিয়ে নদী থেকে পানি খেতে হচ্ছে পানিবন্দিদের। রংপুরের বন্যাকবলিত উপজেলাগুলো হলো- গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া,পীরগাছা ও মিঠাপুকুর। তবে সবচেয়ে বেশি পানিতে ভাসছে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় পাঁচটি ইউনিয়ন, কাউনিয়া-৩ ইউনিয়ন, পীরগাছায় দুই ইউনিয়ন ও মিঠাপুকুরে একটি ইউনিয়নের মানুষ। উজানের ঢল তিস্তায় পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বিস্তৃর্ণ এলাকার ফলস তলিয়ে গেছে। অনেক জায়গায় রাস্তা ভেঙে গেছে বলে জানা গেছে।
এদিকে দেশের ছয় জেলায় বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় ৮০ লাখ টাকা এবং ২৬ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। গতকাল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সেলিম মিয়া জানিয়েছেন, সিলেট জেলার জন্য ২০০ টন চাল, ৩০ লাখ টাকা এবং ৮ হাজার প্যাকেট খাবার, সুনামগঞ্জ জেলার জন্য ৩০ লাখ টাকা এবং ৮ হাজার প্যাকেট খাবার, নেত্রকোনার জন্য ১০০ টন চাল, ১০ লাখ টাকা এবং ৩ হাজার প্যাকেট খাবার, কুড়িগ্রামের জন্য ১০ লাখ টাকা এবং ১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া রংপুর ও নীলফামারী জেলার জন্য ৩ হাজার প্যাকেট করে ছয় হাজার প্যাকেট খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.