নিজস্ব প্রতিবেদক : নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক ও করভার বাড়ানোর ফলে বেশকিছু পণ্যের দাম এরইমধ্যে বেড়েছে। বাজেটের পরপরই এসব পণ্য বাড়তি দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। আবার যেসব পণ্যে শুল্ক ও করভার কমানোর প্রস্তাব এসেছে সেগুলির দাম কমেনি। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, দাম বাড়া বা কমানোর বিষয়টি পুরোটাই নির্ভর করছে নতুন এলসিতে আমদানী বা কোম্পানি থেকে পণ্যের নতুন বাজারজাতকরণের ওপর। যেসকল পণ্যের দাম কমার কথা সেগুলি পাইকারদের থেকে নতুন চালান না আসা অব্দি কম দামে পাওয়া সম্ভব নয়।
এরইমধ্যে দাম বেড়েছে বিড়ি সিগারেট, তামাকজাত পন্য, প্রথম শ্রেণির রেলসেবা, দই, পনির ও আমদানি করা মোবাইল ফোন, এসি, পেপার কাপলেট, জিআই ফিটিং, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল, গাড়ির সিলিন্ডার, লাইটার, কম্পিউটার প্রিন্টারের টোনার, আমদানিকৃত ইলেকট্রনিক ক্যাবল।
তবে সব ধরনের পাইপ, আমদানিকৃত মোটরসাইকেল, সব ধরনের রাবার জাতীয় পণ্য, আমদানিকৃত সোলার প্যানেল, অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল, আমদানিকৃত চেয়ার, প্রিন্টিং কালি, আমদানিকৃত বিলাসবহুল পাখি, কিট-মাস্কসহ সব ধরনের কোভিড-১৯ সরঞ্জাম আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, বাজেট পাশ হবার আগেই বেড়ে গেছে বেশ কিছু পণ্যের দাম। তামাকজাত পণ্যে সিগারেটের দাম ইতিমধ্যে বেড়েছে। যেসব সিগারেট শলাকা প্রতি ১৫ টাকা ছিল তা ১৬ টাকায় আর যেসব প্রতি শলাকা ছিল ১১ টাকা তা বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকায়।
ঢাকার কারওয়ান বাজারের পাইকারি সিগারেট বিক্রেতা বিসমিল্লাহ স্টোরের স্বত্তাধিকারী মকবুল হোসেন জানান, প্রায় সব সিগারেট বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
একাধিক মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, বাজেটের আগে জুন মাসের শুরুতেই বেড়েছে আমদানীকৃত প্রায় সব ধরনের মোবাইল ফোনের দাম। একটি মিডরেঞ্জ ফোনের দাম যেটি ৪২ হাজার টাকা তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৪৯ হাজার টাকায়।
বসুন্ধরা শপিংমলের গ্যাজেট স্টেশন দোকানের বিক্রয়কর্মী আবদুস সালাম বলেন, ‘বাজেটের ফলে মূলত দাম বাড়ছে ক্রেতা পর্যায়ে। আমদানীকৃত ফোন কেনার সময় ক্রেতাকে নির্ধারিত দামের ৫ শতাংশ কর দিতে হচ্ছে।’
তবে দেশে সংযোজিত কোনো মোবাইল ফোন আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মোতালেব প্লাজার স্যামসাং শোরুমের ম্যানেজার শিহাব আহমেদ বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকে স্যামসাং বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ম্যানুফেকচারিং শুরু করেছে। স্যামসাংসহ অন্যান্য দেশীয় ফোনের দাম আগের মতোই থাকছে।’
আমদানীকৃত মোটরসাইকেল, সোলার প্যানেল, ফাইবার কেবল, চেয়ার, পনির, সিলিন্ডার, মোবাইল চার্জার ইত্যাদি পন্যের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান দামেই এখনো বিক্রি হচ্ছে পন্যগুলো। নতুন এলসিতে আনা আমদানীকৃত পণ্যের পর আগামী সপ্তাহের মধ্যেই দাম পরিবর্তন হবে।
প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী দাম কমার কথা মুড়ি চিনি, পশু খাদ্য, পাওয়ার টিলার, পলিথিন, প্লাস্টিকের ব্যাগ, কৃষি যন্ত্রপাতি, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এসি, রেফ্রিজারেটর, মুঠোফোন, শ্রবণ যন্ত্র, হুইল চেয়ার, পানির ফিল্টার, বিমানের জন্য ব্যবহৃত টায়ার, কাজু-বাদাম ও পেস্তা বাদাম।
তবে শনিবার ঢাকার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এই পণ্যগুলো আগের দামেই বিক্রি হতে দেখা গেছে। কারওয়ান বাজারে দেখা যায়, মুড়ি, চিনি, পলিথিন/প্লাস্টিকের ব্যাগ, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদামের দাম কমেনি।
মুড়ি কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা করে। চিনি এক কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। এক কেজি পলিথিন বা প্লাস্টিকের ব্যাগের দাম ২২০ টাকা। কাজুবাদাম বিক্রি হচ্ছে ৬৭০ থেকে ৭৮০ টাকা করে। এক কেজি পেস্তা বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২১০০ থেকে ২১৫০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের এ-রাইট ট্রেডার্সের মশলা ব্যবসায়ী আমিনুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দেশে বেশিরভাগ মশলা আসে বাইরে থেকে। আমদানীকারকরা নতুন এলসি খুলে পন্য আনলে তখন কম দামে কাজু বা পেস্তা বাদাম পাওয়া যাবে।’
শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের শ্রবণ সহায়ক যন্ত্রের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ফলে কম মূল্যে বাজারে ওই শ্রবণ যন্ত্র পাওয়া যেতে পারে।
হুইল চেয়ারে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ১০ শতাংশ অগ্রীম কর থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় কমতে পারের হুইল চেয়ারের দাম। তবে পান্থপথের বেশকিছু দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পণ্যটির দাম কমেনি।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এর আগে ওইদিন দুপুরে সংসদ ভবনের পশ্চিম ব্লকের দ্বিতীয় তলায় মন্ত্রিসভা কক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেটের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা।
গত ৫ জুন বিকাল ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশন শুরুর আগে সংসদের কার্যউপদেষ্টা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ জুলাই পর্যন্ত চলবে বাজেট অধিবেশন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.