খেলাধুলা রিপোর্ট : উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে লিভারপুলকে ১-০ গোলে হারিয়ে রেকর্ড ১৪তম শিরোপা জিতে নিলো রিয়াল মাদ্রিদ। ‘স্তেদা দ্যা ফ্রান্স’ স্টেডিয়ামে রবিবার (২৯ মে) চ্যাম্পিয়নস লিগের ১৭তম ফাইনাল খেলতে নেমে এই রেকর্ড গড়ল কার্লো আনচেলত্তির দল। ইউরোপিয়ান সেরার এই প্রতিযোগিতার শিরোপা তো রীতিমতো নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছে লস ব্লাঙ্কোস খ্যাত রিয়াল। প্রতিযোগিতাটিতে এর আগে ১৬ ফাইনাল খেলেই রেকর্ড ১৩টি শিরোপার মালিক ছিল দলটি।

থিবো কর্তোয়ার অতিমানবীয় পারফরম্যান্সে জয়সূচক একমাত্র গোলটি করেন রিয়ালের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ভিনিসিউস জুনিয়র। ইউরোপ সেরার প্রতিযোগিতায় ফাইনালে রিয়াল হেরেছে সর্বশেষ ১৯৮১ সালে। তখন উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগই নাম ছিলো না প্রতিযোগিতাটির। সেই ম্যাচে এই লিভারপুলের বিপক্ষে হেরেছিল রিয়াল। প্যারিসে খেলতে নামার আগে আরেকবার হারানোর হুমকি দিয়ে রেখেছিল অলরেডদের তারকা ফরোয়ার্ড মোহামেদ সালাহ। কিন্তু ম্যাচটি ছিল লিভারপুল বনাম থিবাউট কোর্তোয়ার। রিয়াল মাদ্রিদের এই গোলরক্ষক লিভারপুলের ২৪টি আক্রমণের মধ্যে অন টার্গেটে নেওয়া ৯টি শট রুখে দিয়েছেন নিপুণ দক্ষতায়। তিনি যদি আজ ওয়াল হয়ে না দাঁড়াতেন তাহলে বড় ব্যবধানে হারতে পারতো রিয়াল। তবে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেনি সালাহ, সাদিও মানে ও লুইস দিয়াজরা। তবে তাদের সামনে যেন চীনের মহাপ্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন রিয়াল গোলরক্ষক কর্তোয়া। এতে করে ২০১৮ সালের মতোই ২০২২ সালেও রিয়ালের কাছে হেরে রানার্স-আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের।

এদিন ম্যাচের ১৭ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল লিভারপুল। এ সময় ডানদিক থেকে ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আর্নল্ড ক্রসে বল বাড়িয়ে দেন সালাহকে। তার প্লেসিং শট কোনোরকমে শুয়ে পড়ে ঠেকান থিবাউট কোর্তোয়া। শুরু থেকে প্রেসিং করে খেলতে থাকা অলরেডরা আক্রমণের পসরা সাজিয়ে বসে। এই সময় লিভারপুলের ফুটবলাররা বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ফেলেন রিয়ালের গোলরক্ষক কর্তোয়াকে।

ম্যাচের ২০তম মিনিটে মিনিটে গোলের আরও একটি সুযোগ পেয়েছিল লিভারপুল। এ সময় থিয়াগো আলকানতারা বল বাড়িয়ে দেন সাদিও মানেকে। সাদিও মানে প্রায় গোল করেই ফেলছিলেন। তবে অলরেডদের আবার হতাশ করেন কর্তোয়া। মানের শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে শেষ মুহূর্তে হাত দিয়ে সরিয়ে দেন এই বেলজিয়ান। যা বারে লেগে সরে গেলে বিপদমুক্ত হয় রিয়াল। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে পুরো ৯০ মিনিট দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেও রানার্স-আপ হতে হয় অলরেডদের।

ম্যাচের ৩৪ মিনিটে সালাহর আরও একবার গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন। এ সময় ডানদিক থেকে ক্রসে বল বাড়িয়ে দেন আর্নল্ড। বল খুঁজে পায় সালাহকে। তিনি সুবিধামতো হেড নেন। কিন্তু তার নেওয়া হেড সরাসরি কোর্তোয়ার হাতে জমে যায়। এদিকে ৪৩ মিনিটে বল জালে জড়ায় রিয়াল। এ সময় প্রথম প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হলেও জটলার মধ্যে বল পেয়ে দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় জালে জড়িয়ে দেন করিম বেনজেমা। কিন্তু অফসাইড কল করা হয়। এরপর ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) বেশ সময় নিয়ে চেক করেন। শেষ পর্যন্ত গোলটি বাতিল হয়। তাতে গোলশূন্যভাবেই শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা।

বিরতি থেকে ফিরে গোল পেয়ে যায় রিয়াল। ৫৯ মিনিটে ডান দিয়ে বল পেয়ে পাল্টা আক্রমণে যান ফেদেরিকো ভালভার্দে। বল নিয়ে তিনি ডানদিক দিয়ে ঢুকে পড়েন বক্সে। এরপর বামদিকে থাকা ভিনিসিউস জুনিয়রকে বাড়িয়ে দেন নিচু ক্রসে। আনমার্ক ভিনিসিউস ডান পায়ে শটে কাছের পোস্ট দিয়ে বল জালে জড়ান। অ্যালিসন বেকার কোনো প্রকার সুযোগই পাননি বল ধরার।

এই গোল করার মধ্য দিয়ে ব্রাজিলিয়ান এই ফরোয়ার্ড হয়ে যান একমাত্র খেলোয়াড়, যার জন্ম ২০০০ সালের পরে কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে গোল করেছেন। এদিকে ম্যাচের ৮২ মিনিটে আবারও সালাহ, আবারও কোর্তোয়া। এ সময় ফাবিনহোর ক্রস থেকে সালাহ বক্সের মধ্যে বল পেয়ে যান। রক্ষণভাগের খেলোয়াড়কে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যান। তার সামনে ছিলেন কেবল কোর্তোয়া। শট নেন সালাহ, বল কোর্তোয়ার পায়ে লেগে বল বাইরে চলে যায়। গোল মিসের মহড়ায় শেষ পর্যন্ত ১-০ ব্যবধানের হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় জার্গেন ক্লপের শিষ্যদের। আর বীরের বেশে রেকর্ড ১৪তম শিরোপা জিতে মাঠ ছাড়ে কার্লো আনচেলোত্তির শিষ্যরা।