এস এম মহিদার রহমান, সাতক্ষীরা ঃ প্রেম সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরার তালায় কলেজ ছাত্রকে অপহরনের পর বিবস্ত্র করে তার চুল কেটে ন্যাড়া করে দিয়ে শারীরিক নির্যাতনের লোমহর্ষক ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামী তালা উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ আকিবকে গ্রেপ্তারের ২০ ঘণ্টা পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে জামিন দেন সাতক্ষীরা জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মহিদুল ইসলাম। এর আগে বুধবার (২৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আসামী পক্ষের আইনজীবী বলছেন, আমরা জামিন চাইতেই পারি। বিচারক জামিন দিলে আমরা কি করবো। তবে, মামলাটি জামিনযোগ্য ছিল না।
এদিকে, গ্রেফতারের পর আদালতে নিতেই চাঞ্চল্যকর এ মামলায় জামিন দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এ ম্মলার বাদী আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, আমার ছেলেকে টানা ৫ ঘন্টা নির্যাতন, বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করলো, মাথা ন্যাড়া করে দিল। এরপর মোবাইলে আমার স্ত্রীর কাছে দুই লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করলো। পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে তালা থানায় মামলাটি রেকর্ড হলেও প্রধান আসামী গ্রেফতারের পরই জামিন এটি আসামীদের আরও উস্কে দেওয়া হলো। আমার পরিবার আবারও আতঙ্কের মধ্যে পড়লো। পরষ্পর যোগসাযোশ করে এই জামিন করানো হয়েছে। আমি ন্যয় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি।
মামলার প্রধান আসামী সদ্য বহিষ্কৃত উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠণিক সম্পাদক সৈয়দ আকিব তালা সদরের মাঝিয়াড়া গ্রামের সৈয়দ ইদ্রিসের ছেলে। গত ২৪ এপ্রিল তালা সরকারি কলেজের একটি কক্ষে কলেজছাত্র শোয়েব আজিজ তন্ময়কে টর্চার সেলে নিয়ে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তালা থানার এসআই চন্দন কুমার জানান, আসামীর ফরওয়াডিং সঙ্গে পৃথকভাবে আসামীকে পুলিশ রিমা-ের জন্য আবেদন জানানো হচ্ছে মর্মে বলা হয়েছিল। রিমা- আবেদন দেওয়ার আগেই জামিন দিয়েছে আদালত। আদালতের জামিন প্রশ্নে আমি কিছু বলতে পারবো না।
মামলার আসামী পক্ষের আইনজীবী রাজীব চৌধুরী সঞ্চয় বলেন, আজ ঈদের আগে শেষ কোর্ট ছিল। মামলার আমি শুনানি করেছি। মামলাটি জামিনযোগ্য ছিল না। জামিন আমরা চাইতেই পারি এখন জজ সাহেব জামিন দিলে কি কিছু করার আছে ? জামিন চেয়েছি জামিন দিয়েছে তবে মামলাটি জামিনযোগ্য ছিল না।
মামলার অপর আসামীরা হলেন, হরিশচন্দ্রকাটি গ্রামের গণেশ চক্রবর্তীর ছেলে শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৌমিত্র চক্রবর্তী (৩২), তালা গার্লস স্কুলের পাশের বাসিন্দা ছাত্রলীগ কর্মী জে আর সুমন (২৫), তালার মহান্দি গ্রামের অশোক দাসের ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী জয় (২৪) ও তালা সদরের নজির শেখের ছেলে ছাত্রলীগকর্মী নাহিদ হাসান উৎস (২৪)।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাড. আব্দুল লতিফ বলেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট জামিন দিতে পারেন না। ঈদ গ্রাউন্ডে হয়তো জামিন দিয়েছেন, নতুন ম্যাজিষ্ট্রেট। আগামী ধার্যদিনে মামলার বাদী বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করে জামিন বাতিলের আবেদন করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, গত রোববার (২৪ এপ্রিল) বেলা একটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টানা ৫ ঘন্টা তালা সরকারি কলেজের একটি কক্ষের টর্চার সেলে বেঁধে নির্যাতন করা হয় ওই কলেজছাত্রকে। বিবস্ত্র করে মারপিট, ভিডিও ধারণ ও কলেজছাত্রের মাকে ফোনে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ছেলেকে উদ্ধার করে তালা হাসপাতালে ভর্তির পর রাতেই অভিযুক্ত পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৭-৮জনকে আসামী করে তালা থানায় মামলা দেন নির্যাতনের শিকার কলেজ ছাত্রের বাবা আজিজুর রহমান। পরদিন সোমবার (২৫ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ সুপার মোহম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের হস্তক্ষেপে তালা থানায় অভিযুক্ত চার ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও এক শ্রমিকলীগ নেতার বিরুদ্ধে থানায় মামলাটি নথিভুক্ত হয়। মামলা নম্বর ২০। তারিখ ২৫.০৪.২২ ইং। মামলাটি নথিভুক্ত করা হয় ১৪৩/৩৪২/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩৮৫/৩৭৯ ও ৫০৬ ধারায়।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.