হাবিবুর রহমান: তীব্র আন্দোলনের মুখে ভোমরা স্থল বন্দরের বিপরীত পাড়ে ভারতের ঘোজাডাঙ্গায় সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ হলেও নেতৃত্ব পরিবর্তনের পর তা আবার শুরু হয়েছে। দৈনিক ৭০-৮০ লক্ষ টাকা হিসাবে মাসে ২১-২৪ কোটি টাকা ওপারের সিন্ডিকেটকে সিরিয়ালের নামে চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা। ওপারের সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজির ঘটনায় নিশ্চুপ থাকার জন্য এপারের বিভিন্ন সেক্টরের নেতারা প্রতিদিন পাচ্ছেন মোটা অংকের টাকা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ভোমরা স্থল বন্দরের বিপরীত পারে ঘোজাডাঙ্গায় একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট ২০২১ সালের জুলাই থেকে সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজি শুরু করে। তারা পাথরের ট্রাক প্রতি ৫০ হাজার, ভুষির ট্রাক ১০-১৫ হাজার, পেয়াজের গাড়ী ২৫ হাজার, তুলার গাড়ী ২০ হাজার, ফলের গাড়ী ২৫ হাজার টাকা নিয়ে সদ্য দিনেই ছেড়ে দেয়। টাকা না পেলে পাথরের গাড়ী ৬০দিন পর্যন্ত আটকে রাখে। এ সময় ভোমরা স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্টস্ এ্যসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন আরাফাত এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম। পরবর্তীতে পাতানো নির্বাচনে নওশাদ দিলওয়ার রাজু সভাপতি এবং মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম সাধারণ সম্পাদক হয়। এই দুই কমিটির মেয়াদে শুরু হওয়া চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট হয়ে ওঠে এপারেরর আমদানী-রপ্তানীকারকরা। পাশাপাশি এজাজ আহম্মেদ স্বপন আহবায়ক এবং সদস্য সচিব হন এ এস এম মাকসুদ খান। তারা এসেই ব্যবসায়ীসহ ভোমরা স্থলবন্দরের সকল সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন।
আন্দোলনের মুখে ওপারের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর হস্তক্ষেপে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে যায়। এরই মধ্যে এজাজ আহমেদ স্বপনের লাইসেন্স নিয়ে সংকট তৈরি হয়। সংকটের কারণে প্রায় ২৭ দিন আহবায়কের দায়িত্ব পালন করতে পারেননি এজাজ আহমেদ স্বপন। এই সুযোগে ওপারে আবারও শুরু হয় সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজি। সাথে সাথে সিএন্ডএফ এজেন্টস্ এসোসিয়েশনের এডহক কমিটির ৫জনের মধ্যে অনৈক্য শুরু হয়। ৪জন সদস্য অনাস্থা আনেন আহবায়কের বিরুদ্ধে। খুলনা শ্রম অধিদপ্তর থেকে মিজানুর রহমানকে আহবায়ক করা হয়। কমিটির অপর ৩জন সদস্য হলেন আশরাফুজ্জামান আশু, রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী ও এ এস এম মাকসুদ খান।
এই ৪ন সদ্যস্য সম্প্রতি সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য ঘোজাডাঙ্গার সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনকে পত্র দেন। তারা পত্র দিয়েই দায় সারেন। শুরু হওয়া চাঁদাবাজি অব্যাহত আছে। আন্দোলনের হুমকি দিলেও কোন আন্দোলনের খবর নেই।
এরই মধ্যে ভোমরা বন্দরের একজন পাথর ব্যবসায়ীকে বিশেষ জায়গা থেকে সতর্ক করা হয়েছে ওপারের টু-শব্দ না করতে। ওপার থেকে প্রতিদিন দশ লক্ষ বাংলা টাকা আসছে এপারের বিভিন্ন সেক্টরের নেতাদের পাশাপাশি একাধিক দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের সন্তুষ্ট রাখতে।
সাধারণ ব্যবসায়ীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ব্যবসায়ীদের আবারও জিম্মি করে সিরিয়ালের নামে ওপারে দিনে ৭০/৮০ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজি হচ্ছে। মাসে এর পরিমান ২১/২৪ কোটি টাকা। ব্যবসায়ীদের দাবী এজাজ আহমেদ স্বপনকে ষড়যন্ত্রমুলক ভাবে সরানো হয়েছে ওপারের চাঁদাবাজি জায়েজ করার জন্য। সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েনের নেতৃত্বে এজাজ আহমেদ স্বপন থাকলে ওপারের নতুন করে শুরু হওয়া চাঁদাবাজি বন্ধ করা সম্ভব হতো।
চাঁদাবাজির কথা স্বীকার করে এডহক কমিটির সদস্য রামকৃষ্ণ চক্রর্তী বলেছেন, চাঁদাবাজি বন্ধে যাতে আন্দোলন না করি সেজন্য হুমকি আছে। হুমকি প্রত্যাহার হলে ৭২ ঘন্টার মধ্যে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে পারবো আমরা।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.