সানজিদা আক্তার সান্তনা : যাকে কখনো কখনো ভারতীয় পিপুল নামে ডাকা হয়, এক প্রকার সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি নলিয়া লঙ নামেও পরিচিত। এটি Piperaceae গোত্রের একটি লতাজাতীয় ভেষজ উদ্ভিদ যা ফলের জন্য চাষ করা হয়।
পিপুল ফল শুকিয়ে মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পপি বীজের সমান আকৃতির অসংখ্য পিপুল ফল একটি সংযুক্ত দন্ডে অবস্থান করে। এর অপর একটি প্রজাতি Piper retrofractum ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপাঞ্চলে দেখা যায়।
পিপুল সম্পর্কে প্রথম জানা যায় প্রাচীন ভারতীয় আয়ূর্বেদ শাস্ত্রের পুস্তকে, যেখানে এর ঔষধি ও খাদ্যগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এটি খ্রিস্টের জন্মের ৬ষ্ঠ বা ৫ম শতক পূর্বে গ্রীসে পরিচিতি লাভ করে, যদিও হিপোক্রেটিস এটিকে মসলা অপেক্ষা ঔষধি গুণের জন্যই অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।
শুকনো পিপুল ফলের ও পিপুল গাছের শিঁকড়ের ব্যবহার
বর্তমানকালে ইউরোপীয় রন্ধন কার্যে এর ব্যবহার দুর্লভ হলেও ভারতে সব্জি রান্নায়, উত্তর আমেরিকার মসলা মিশ্রণে এবং ইন্দোনেশিয়ান ও মালয়শিয়ান রান্নায় এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। ভারতে মুদি দোকানে এটি পিপালি নামে প্রায়শ:ই কিনতে পাওয়া যায়।
উপকারিতা
ঝুরা ক্রিমির ঔষুধ হিসাবে এটি ভাল কাজ করে। জ্বর ও কাশি হলে পিপুল গরম পানির সাথে সকাল ও বিকালে খেলে জ্বর ও কাশি কমে যায়। হাঁপানি রোগীদের জন্য এটি বেশ উপকারী।
পিপুলের শুকনা অপরিপক্ক ফল বল বৃদ্ধিকারক ও টনিক হিসাবে, অপরিপক্ক ফুল এবং মূলের ক্কাথ পুরাতন ব্রষ্কাইটিস, কাশি এবং ঠান্ডাজনিত রোগের জন্য উপকারী ।
হাঁপানি: যাদের হাঁপানির কষ্ট হয়, তাদের উচিত খাওয়ার পর ২৫০ মি.লি পানিসহ পিপু গুঁড়া খাওয়া। এতে হজমও ভালো হবে এবং হাঁপানির কষ্টও হবে না।
কাশির সাথে যদি জ্বর থাকে, তবে ক্ষয়রোগের আশঙ্কা করা হয়। এক্ষেত্রে বিশেষ চিকিৎসা শুরু করার আগে ২৫০ মি.গ্রা. পিপুল গুঁড়া কুসুম গরম পানিসহ সকাল-বিকাল খেলে ৪/৫ দিনের মধ্যেই উপকার পাওয়া যাবে।
নিদ্রাহীনতা দূর করে : রাত গভীর হচ্ছে অথচ কিছুতেই ঘুম আসছে না। এ অবস্থাটা আসলে অসহ্য। একে বলে নিদ্রহীনতা। এ অবস্থা হলে পিপুলের শরণাপন্ন হতে হবে। পিপুলের ১-৩ গ্রাম শিকড় সামান্য চিনি সহকারে ছেঁচে বা বেঁটে সেই রস ছেঁকে দিনে দুবার সকাল বিকেলে খেতে হবে। বয়স্ক লোকদের এই রস সেবনে বিশেষ উপকার হয়। চিনির বদলে আখের গুড়ও ব্যবহার করা যায়। এতে হজমও ভালো হয়।
জ্বর সারায় : যে জ্বরে রক্তের বল কমে যাচ্ছে, শরীর ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে, চামড়া শুষ্ক হয়ে পড়ছে, চোখ ফ্যাকাসে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলছে, অথচ জ্বর সারছে না। সেক্ষেত্রে ২৫০ মিলিগ্রাম পিপুল চূর্ণ ৫/১০ ফোঁটা ঘি মিশিয়ে রোজ খেলে কয়েক দিনের মধ্যে এই জীর্ণ জ্বর সেরে যাবে।
মেদ কমায় : যারা মোটা ও মেদস্বী তারা মেদ কমাতে চাইলে রোজ খাওয়ার ১০-১৫ মিনিট পর ১ কাপ হালকা গরম জলে ২৫০ মিলিগ্রাম পিপুল চূর্ণ গুলে তাতে আধা চা-চামচ মধু মিশিয়ে খাবেন। দিনে দুইবার খাওয়া যায়। এভাবে ১০-১৫ দিন খেলে মেদ কমবে। এ সময় কোনো চিনি বা মিষ্টি খাওয়া চলবে না ও একবেলা ভাত ও দুইবেলা রুটি খেতে হবে। এটা খাওয়ার ১ ঘণ্টার মধ্যে কোনো শক্ত খাবার খাওয়া যাবে না, তবে তরল খাবার খাওয়া যেতে পারে।
শ্লেষ্মাপ্রধান বাতরোগে যখন শরীর স্থবির হয়ে যায়, মনে হয় শরীর অচল হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে ২৫০ মি.গ্রা. পিপুল গুঁড়া ১ চামচ গরম আদার রসসহ সকাল-বিকাল দুইবার খেলে উপশম হবে। তবে এতে শরীর কড়া হলে একবার ব্যবহার করতে হবে।
কৃমি কমায় : শিশু বৃদ্ধ যারই গুঁড়া বা ঝুড়ো কৃমি হোক তাদের উচিত রোজ সকাল-বিকেল ১ কাপ বাসি জলে ২৫০ মিলিগ্রাম পিপুল চূর্ণ গুলে খাওয়া। এতে কৃমির উপদ্রব কমবে।
মাথাব্যথা কমায় : মাথা ব্যথা হলে তা সারানোর সবচেয়ে সহজ ওষুধ হলো পিপুল ফল বেঁটে মলমের মতো করে কপালে লেপে দেয়া। এতে দ্রুত মাথাব্যথা কমে। এছাড়া পিপুল, গোলমরিচ ও আদা একসাথে জলের সাথে বেঁটে ছেঁকে সেই রস রোগীকে খাওয়ানো। এতেও মাথাব্যথার উপশম হয়।
দাঁত ব্যথা সারায় : দাঁতে যন্ত্রণা হলে ১-২ গ্রাম পিপুল চূর্ণ লবণ, হলুদের গুঁড়া ও সরিষার তেলে মিশিয়ে দাঁতের ব্যথা স্থানে লাগালে তা কমে যায়।
কাশি সারে : খুসখুসে কাশি আর ঘুষঘুষে জ্বর। এটা যক্ষ্মা রোগের পূর্ব লক্ষণ। এরূপ অবস্থা হলে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে ও পরীক্ষা করাতে হবে। তবে তার আগে পিপুলচূর্ণ ২৫০ মিলিলিটার সামান্য গরম জলে গুলে সকাল-বিকেল অর্থাৎ দিনে দুইবার খেতে হবে। এভাবে ৪-৫ দিন খাওয়ার পর সেটা চলে যেতে পারে। যদি না যায়, তখন অবশ্যই যক্ষ্মা রোগের পরীক্ষা করাতে হবে।
অর্শ নিরাময় করে : অর্শ হলে আধা চা-চামচ পিপুল চূর্ণ, ভাজা জিরার গুঁড়া সামান্য লবণ ১ গ্লাস ঘোলে মিশিয়ে খালি পেটে খেতে হবে। এতে অর্শ রোগ কমে যাবে। ঘোল পাওয়া না গেলে ছাগলের দুধে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এমনকি এই মিশ্রণ জ্বাল দিয়ে ঘন করে মলমের মতো অর্শের বুটিতে লাগিয়ে দেয়া যায়।
হাঁপানির উপশম হয় : অল্প পরিশ্রমে যাদের শ্বাসকষ্ট হয়, হাঁপ ধরে তারা পিপুলচূর্ণ ২৫০ মিলিলিটার সামান্য ১ কাপ জলে গুলে খাবার গ্রহণের কিছু পরে খেতে পারেন। তা না হলে ২ গ্রাম পিপুল ফল একটু থেঁতো করে ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ২-৩ ঘণ্টা পর পর তা ৩-৪ বারে খেতে পারেন। এতে শ্বাসের কষ্ট কমবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.