লাইফ স্টাইল | তারিখঃ ডিসেম্বর ৫, ২০২৪ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 4232 বার
ধবধবে সাদা ফুলকপি, সবুজ-শ্যামল শিম, হলদে-বাদামি নতুন আলু, টুকটুকে লাল টমেটো, মুঠোভরা পান্নার মতো মটরশুঁটি আর চোখজুড়ানো ধনেপাতার পাচমিশালী। সঙ্গে সবুজ কাঁচা মরিচের ঝাঁজালো সৌন্দর্য। দেখার মতো চোখ থাকলে সবুজ যে কত রকম হতে পারে, সে নিদর্শন রান্নাঘরেই মিলবে। সেই রং-রূপ এই মৌসুমে খোলতা হয়ে ওঠে রন্ধনপটীয়সী কন্যা-জায়া-জননীর নিপুণ হাতে। বাঙালির অনন্য এক কমফোর্ট ফুড শীতের তরকারির গল্প হচ্ছে আজ।
দর্শনধারীর পালা মিটলেই রান্নায় চলে আসে ফ্লেভারের অধ্যায়। স্বাদ আর গন্ধের এক অনন্য যোগসাজশকেই ফ্লেভার বলা যায়। শীতের তরকারিতে ফ্লেভার আনতে রুই-কাতলার মাথা-লেজসহ টুকরাগুলো কষিয়ে তুলে রেখে দিতে হবে প্রথমে। এবার সেই হালকা মসলায় ডুমো করে কাটা শীতের সবজি কষানোর পালা। সবজি একটু সেদ্ধ হলেই কড়াইতে ফিরে যাবে আমিষ সদস্যরা। শিং, কই বা শোলেও জমে যাবে শীতের তরকারি। আর মজার ব্যাপার হলো, শীতের সকালের রোদে পিঠ দিয়ে আগের রাতের সত্যিকার অর্থেই কিছুটা জমে যাওয়া তরকারি দিয়ে গরম ভাত খাওয়ার স্মৃতিকাতর গল্প পাওয়া যাবে সব বাড়ির বর্ষীয়ানদের ঝাঁপিতে।
শীতের তরকারি হবে ঝোল ঝোল। ফুলকপির টুকরাগুলো রসাল হয়ে উঠবে ঝোল শুষে নিয়ে। একই দশা হবে তরকারির ঝোলে রান্নার শেষের দিকে হালকা ভেজে বড়ি ছেড়ে দিলে। টুপটুপে সেই বড়িগুলোর দু-একটা পরিবেশনের আগেই কড়াই থেকে তুলে খেয়ে নিলে মা কপট রাগ করতে পারেন। তবে তাতে আদরমাখা প্রশ্রয়ের ভাগই বেশি থাকে। শীতের দুপুরে গোসল থেকে বেরিয়ে শীতে কাঁপতে কাঁপতে গরম ভাতের থালা নিয়ে বসলেই ততোধিক গরম শীতের তরকারি উদার হস্তে পরিবেশিত হবে। পরিবারের সবাই মিলে বসে ধোঁয়া ওঠা সেই তরকারি ভাতে মেখে মুখে চালান করে হু-হা করে খেতে খেতে স্বর্গসুখের আস্বাদন করতে গিয়ে মনে হবে, জীবন আসলেই খুব সুন্দর; অন্তত শীতের তরকারির এই দিনগুলোতে তো বটেই।
আবার এদিকে শীতের মাছ-সবজির বাজারও শীতের কনকনে হাওয়ার মতোই নির্দয়। সবজি কিনতে গেলে ঘাম ছুটে যায়, মাছের বাজারেও আগুন। না হয় আরেকটু সুলভ পাঙাশ, তেলাপিয়া, নাইলোটিকাই পড়ল শীতের তরকারিতে। না হয় ফুলকপি একটু কমিয়ে মুলা, শালগম যোগ হলো। তবু শীতের তরকারি রান্না হোক সবার ঘরে। ঝোলে-ঝালে সবাই পাক গরম ভাতের সুখ। কখনোবা শীতের সবজি বা কয়টা জিওল মাছ কিনে ভাড়া দেওয়ার সময় রিকশাওয়ালা ভাই অথবা সিঁড়িতে উঠতে বুড়ো দারোয়ান চাচার হাতে চুপচাপ ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত চলে যাওয়া যায় পিছু না ফিরেই। কিছু আনন্দাশ্রু অগোচরেই থাকুক।
সুত্র—- সানজিদা আক্তার সান্তনা।