গ্রামের সংবাদ ডেস্ক : মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের তরফের বক্তব্য, একটি বড় মাপের ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হচ্ছে সরকারি স্তরে এবং গণমাধ্যমে। চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারির পরে পরিস্থিতির অবনতি যে হয়েছিল, তা স্বীকার করেই ঢাকার সওয়াল, এখন অবস্থা প্রশমিত।
সাউথ ব্লক বলছে, হিংসা রাস্তায় গড়ালে কূটনীতির সুযোগ থাকে না। বাংলাদেশে সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়া অবিলম্বে উচিত সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের। তবেই ‘কথায়’ কাজ হবে। মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের তরফের বক্তব্য, একটি বড় মাপের ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হচ্ছে সরকারি স্তরে এবং গণমাধ্যমে। চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারির পরে পরিস্থিতির অবনতি যে হয়েছিল, তা স্বীকার করেই ঢাকার সওয়াল, এখন অবস্থা প্রশমিত।
বাংলাদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধারে রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তি বাহিনী পাঠানোর যে প্রস্তাব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছিলেন, তা নিয়ে ‘বিস্ময়’ প্রকাশ করেছে ইউনূস সরকার। এই প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “আমরা অবাক হয়েছি ওঁর মন্তব্যে। এক জন মুখ্যমন্ত্রীর তো কথার ওজন থাকবে? তা ছাড়া এখানে যাঁরা পড়তে বা কোনও কাজে এসেছেন, সেই ভারতীয়রা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন, এমন কোনও খবর আমাদের কাছে নেই।”
তবে কূটনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, মমতা যা বলছেন, তা একেবারেই তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত, এমনটা না-ও হতে পারে। শান্তি বাহিনী পাঠানোর মতো কথা বলে তিনি কেন্দ্রকে প্রকারান্তরে সুবিধাই করে দিচ্ছেন। কেন্দ্র নিজের মুখে যা বলতে পারছে না, তা যদি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী কোনও রাজ্যের নেত্রী বলেন, সাউথ ব্লকের কোনও ক্ষতি নেই। এই মন্তব্যের দায় কেন্দ্রকে নিতে হচ্ছে না, কিন্তু একটা চাপের পরিবেশ তৈরি করা যাচ্ছে। যদিও কূটনৈতিক সূত্র বলছে, শান্তি বাহিনী পাঠানোর পরিস্থিতি বা সুযোগ নেই। কিন্তু ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে বাংলাদেশে রাষ্ট্রপুঞ্জের পর্যবেক্ষক পাঠানোর দাবি তৈরি হতে পারে।
এই স্নায়ু টানটান পরিস্থিতিতে ঢাকার আশা, ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিশ্রির প্রস্তাবিত সফরে সম্পর্ক সহজ হতে পারে। মিশ্রির সফরে আলোচনা হওয়ার কথা ‘ফরেন অফিস কনসাল্টেশন’ (এফওসি)-এর ছাতার তলায়। সেখানে ভারত এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন চলতি দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলি ঝালিয়ে নেওয়া হবে। টেবিলের দু’ধারে বসে এই ধরনের আলোচনায় ভুল বোঝাবুঝি অনেকটাই কেটে যেতে পারে বলে আশা করছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।
সাউথ ব্লক সূত্রের বক্তব্য, চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারির পরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এখনই তাঁকে গ্রেফতার না করা হলে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে সুবিধা হত। কিন্তু এখন যে ভাবে হিংসা রাস্তায় ছড়িয়েছে, তাতে দৌত্য ও কূটনীতির কোনও সুযোগ নেই। নয়াদিল্লির মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের আশু কর্তব্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিদেশ মন্ত্রক জানাচ্ছে, বিদেশসচিব ঢাকায় গেলে সে দেশের নেতৃত্বের কাছে এই বিষয়গুলিই সামনাসামনি তুলে ধরবেন। এই সফর হলে বিক্রম মিশ্রির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ইউনূসের বৈঠকের সম্ভাবনাও রয়েছে বলে কূটনৈতিক শিবিরের খবর।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের মতে, বাংলাদেশের সঙ্গে সব রকম দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কই চালু রেখেছে নয়াদিল্লি। বিদ্বেষের কোনও প্রশ্ন নেই। জ্বালানি থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে খাদ্যপণ্য সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। এমনকি প্রতিদিন ৫০০টি করে ভিসাও দেওয়া হচ্ছে। আগে এই সংখ্যাটা অনেক বেশি ছিল, এ কথা স্বীকার করে বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হলে এই ভিসা নীতি পর্যালোচনা করা হবে। বিদেশ মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়েন, এ রকম কোনও পদক্ষেপ আমরা করিনি, করবও না।”
আজ ইউনূস সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল বলেন, “দেশের সমস্ত অস্থির এলাকায় আমরা নিরাপত্তা অনেক গুণ বাড়িয়েছি। এই মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ভারতের সঙ্গে আমাদের কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে।” তাঁর কথায়, “ইসকনের সদস্য হিন্দু নেতাদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত কথা হচ্ছে। ৭৫ জন এ দেশ থেকে কলকাতা গিয়েছেন তীর্থের জন্য। চট্টগ্রামে বড় বড় সফল ব্যবসার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত হিন্দু সম্প্রদায়। তাঁরা নিশ্চিন্তে কাজ করছেন।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.