এস এম মহিদার রহমান, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা আশাশুনিতে কলেজ পড়ুয়া বন্ধুকে নির্যাতন ও শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে মোবাশ্বির হোসেন নামের অভিযুক্ত কলেজ ছাত্রকে যাবজ্জীবন কারাদল্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দু’বছর কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান এক জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন। তবে রায় ঘোষণার সময়ে মোবাশ্বির হোসেন আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেননা।
যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মোবাশ্বির হোসেন (২৩) আশাশুনি উপজেলার বৈকারঝুটি গ্রামের আব্দুল মজিদ মোড়লের ছেলে ও আশাশুনি ডিগ্রী কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
মামলার বিবরণে জানা যায়, আশাশুনি উপজেলার বৈকারঝুটি গ্রামের শঙ্কর সরকারের ছেলে চন্দ্রশেখর সরকার ও একই গ্রামের মোবাশি^র হোসেন ছোটবেলা থেকে একই সাথে পড়ালেখা করতেন। শোভনালী নলকুড়া বিলে তাদের দুজনেরই পৈতৃক একটি মাছের ঘের রয়েছে। চম্পাফুল আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আশাশুনি ডিগ্রি কলেজ থেকে একই সাথে এসএসসি ও এইসএসসি পাশ করার পর চন্দ্রশেখর সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে ও মোবাশি^র হোসেন আশাশুনি ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হন। এদিকে মোবাশ্বিরের সাথে একই গ্রামের ইন্দ্রানী ঘোষ ওরফে পাপিয়ার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একজন হিন্দু মেয়ের সঙ্গে একজন মুসলিম যুবকের প্রেম মেনে নিতে পারেনি চন্দ্রশেখর। তাদের প্রেমজ সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বাগবিত-া হতো দু’বন্ধুর মধ্যে। এর ধারাবাহিকতায় চন্দ্রশেখরকে পথের কাটা ভেবে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে মোবাশ্বির। এক পর্যায়ে ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর রাতে চন্দ্রশেখরকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পাশের একটি মৎস্য ঘেরে ডেকে নিয়ে যায় মোবাশি^র। সেখানে পাপিয়াকে নিয়ে কথা উঠলে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে চন্দ্রশেখরকে মারপিট করতে থাকে মোবাশি^র। পরে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মৎস্যঘেরের পানির মধ্যে ফেলে দিয়ে আত্মগোপন করে মোবাশি^র। পর দিন ওই ঘের থেকে চন্দ্রশেখরের মরদেহ উদ্ধার করে আশাশুনি থানা পুলিশ। এরপর ২০ অক্টোবর নিহতের বাবা শঙ্কর সরকার বাদি হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে ছেলেকে হত্যার পর লাশ গুম করার অভিযোগে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-জিআর-২৫৬/২০। পুলিশ রাতেই সাতক্ষীরা শহরের একটি বাসা থেকে মোবাশি^রকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠান। পাপিয়ার সঙ্গে সম্পর্ককে ঘিরে বন্ধু চন্দ্রশেখরকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে মর্মে বিচারিক হাকিম রাকিবুল ইসলামের কাছে মোবাশি^র ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। পরবর্তীতে আদালত থেকে জামিন পেয়ে পালিয়ে যায় মোবাশি^র। এদিকে, গত বছরের ৩১ মে মামলার তদন্তকারি
কর্মকর্তা আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম কবীর মোবাশি^র হোসেনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পলাতক অবস্থায় লিগ্যাল এইডের আইনজীবী অ্যাড. আনিছুজ্জামান আনিছ আসামীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন।
মামলার নথি ও ১৪ জন সাক্ষীর জেরা-জবানবন্দি পর্যালোচনা শেষে আসামী মোবাশ্বিরের বিরুদ্ধে হত্যার পর লাশ গুম করার অভিযোগে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এবং বয়স বিবেচনায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ, ২০ হাজার টাকা জরিমান অনাদায়ে আরও ২বছরের কারাদ-াদেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নিহতের বাবা শঙ্কর সরকার বলেন, তার ছেলের হত্যাকারি মোবাশি^রের যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশের রায়ে তিনি খুশী নন। তবে উচ্চতর আদালতে তিনি আপীল করবেননা বলে জানান।
রাস্ট্রপক্ষের আইনজীবী সরকারি কৌসুলি এ্যাড. আব্দুল লতিফ জানান, ঘটনার সময়ে আসামির বয়স ছিল মাত্র ২১। বয়স বিবেচনায় তাকে ফাঁসি না দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ রায়ে রাস্ট্রপক্ষ খুশি বলে জানান তিনি।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.