আব্দুল্লাহ আল- মামুন : নব্বই দশকের জনপ্রিয় গায়ক মনি কিশোরের মরদেহ এখনও মর্গে পড়ে আছে। দাফন নাকি সৎকার করা হবে- এমন প্রশ্নের জটিলতায় দুই দিন ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে গায়কের দেহ।
গত শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে রামপুরা টিভি সেন্টার রোডের ৩৩৫ নম্বর বাড়ি থেকে মনি কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানান, তিন-চারদিন আগেই গায়কের মৃত্যু হয়েছে। মরদেহটি ফ্ল্যাটে পড়ে থাকার একপর্যায়ে ফুলে ফেঁপে ওঠে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করে।
এরপর প্রশ্ন ওঠে, গায়কের মরদেহ দাফন করা হবে কি না? কারণ ব্যক্তিগত জীবনে এই শিল্পী সনাতন ধর্মালম্বী ছিলেন। তবে নব্বইয়ের দশকে মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। এরপর গত দেড় যুগ আগে সেই সংসারে বিচ্ছেদ হয়।
বিগত কয়েক বছর ধরে ঢাকায় একাই জীবনযাপন করছিলেন এই গায়ক। তার একমাত্র মেয়ে নিন্তি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। তার কাছেই মনি কিশোর জানিয়ে গেছেন, মৃত্যুর পর যেন মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মনি কিশোরের বড় ভাই অশোক কুমার বলেন, ‘মনি বেঁচে থাকা অবস্থায় তার দাফনের বিষয়টি একমাত্র মেয়ে নিন্তিকে জানিয়েছিলেন। মেয়েও জানিয়েছে, তার বাবাকে যেন দাফন করা হয়। এমনটাই নাকি সে বলে গিয়েছিল। মেয়েকে যেহেতু বলে গিয়েছে, তাই তার ইচ্ছামতো দাফন করা হবে। আমরা অন্য কোনো সিদ্ধান্তে যাব না।’
কোথায় দাফন করা হবে, জানতে চাইলে অশোক কুমার মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের সেভাবে কোনো চাওয়া নেই। আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। এরপর তারাই সিদ্ধান্ত নেবে, কোথায় মরদেহ দাফন করা হবে।’
এদিকে শিল্পীর ভগ্নিপতি নাট্যশিক্ষক বিপ্লব বালা বলেন, মনি কিশোরের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরেই থাকছে। প্রয়াত শিল্পীর মেয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘দাফন নাকি সৎকার করা হবে, এ ব্যাপারটি নিয়ে যেহেতু মনি কিশোর বলে গেছেন, সেভাবেই তার মেয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তারা যেটা ভালো মনে করবে, সেটা যেন করেন। ফলে মেয়ে আসার পরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।’
অন্যদিকে আঞ্জুমান মফিদুল প্রসঙ্গে বিল্পব বালা বলেন, ‘মনি কিশোরের লাশ তো বেওয়ারিশ নয়। সাধারণত বেওয়ারিশ লাশের দাফন বা সৎকার করে থাকে আঞ্জুমানে মফিদুল। তার পরিবারের সদস্যরা আছেন।’
এদিকে মনি কিশোরের মরদেহ দাফন প্রসঙ্গে রামপুরা থানার ওসি (তদন্ত) শাহাদাত হোসেন একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘নিন্তি চৌধুরী আমাদের কাছে একটা তথ্য হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছেন। আমরা তাকে পরামর্শ দিয়েছি, ওখানকার দূতাবাস অথবা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যেন পাঠান। এদিকে মেয়েও আমাদের জানিয়েছেন, তার বাবাকে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করতে। অন্যদিকে পরিবার, ভাই–বোনেরা চেয়েছিলেন হিন্দু ধর্মমতে মরদেহের আনুষ্ঠানিকতা সারতে। দুই পক্ষ থেকে দুই ধরনের বক্তব্যের কারণে একটা বিতর্ক ও জটিলতা তৈরি হতে পারে। এই বিতর্ক ও জটিলতার অবসানে আমরা শিল্পী মনি কিশোরের মেয়ে নিন্তি চৌধুরীকে উপস্থিত মরদেহ গ্রহণ নইলে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের অনুরোধ করেছি। এরপরই আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’
প্রসঙ্গত, ৯০ দশকের জনপ্রিয় শিল্পী মনি কিশোর। ক্যারিয়ারে পাঁচ শতাধিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। রেডিও, টিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী হলেও এসব মাধ্যমে গান গেয়েছেন অল্প। মূলত অডিওতে গান করেছেন বিরামহীন। ৩০টির বেশি একক অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে মনি কিশোরের। যার প্রায় সবগুলোই ছিলো হিট।
আশির দশকে যশোরে কাটিয়েছেন মনি মন্ডল নামে। শহরের পিটিআই রোডে ভাড়া বাসাতেই থাকতেন তিনি। মাইকেল সঙ্গীত একাডেমিতে আসা যাওয়া ছিল তার। ১৯৮৪ সালে গঠন করেছিলেন সংগীত সংগঠন ‘সোহেলী’। সে সময় যশোর মঞ্চে মঞ্চে একমাত্র চটুল শিল্পী হিসেবেই তার পরিচিত ঘটে। ‘কেউ কোনদিন আমারে তো কথা দিল না’ গানটির প্যারোডি করে মনি কিশোর গাইতো ‘কেউ কোন দিন আমারে তো জামাই করলো না’। তার সংগীত সহচর দেশের বিশিষ্ট ড্রামিস্ট পলাশ কুমার সাউ জানান, মনি কিশোর যশোরে থাকলেও তার বাবা-মা কেউ এখানে আসেননি। তার বাবা ছিলেন পুলিশ অফিসার।
আশির দশকে যশোরে কাটানো নন্দিত এই কণ্ঠশিল্পী ‘কী ছিলে আমার বলো না তুমি’, ‘আমি মরে গেলে’, ‘ফুল ঝরে তারা ঝরে’, ‘মুখে বলো ভালোবাসি’, ও ‘আমি ঘরের খোঁজে’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন। তবে মাঝখানে দীর্ঘদিন নতুন গান প্রকাশ থেকে বিরত ছিলেন তিনি।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.