ডেস্ক রিপোর্ট : রূপপুর পারমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে কঠিন শর্ত দিয়েছে রাশিয়া। যা পূরণ করতে পারছে না বাংলাদেশ। এদিকে বর্তমান অর্থনৈতিক টানাপড়েনের কারণে চীনের কাছে ঋণ পরিশোধের সময় বৃদ্ধি ও সুদের হার কমানোর আবেদন করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
সম্প্রতি রাশিয়া বৃহত্তর এ প্রকল্পের সময় বাড়ানোর জন্য আগ্রহের কথা জানিয়ে চিঠি দেয়। অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ইআরডি সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এ প্রসঙ্গে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তাই কথা বলতে চাননি। তবে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মে মাসে রাশিয়া থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত এক বছর বৃদ্ধি এবং ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর কথা জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়। তবে এতে দেশটি শর্ত জুড়ে দেয়। বলা হয়, বকেয়া ঋণের আসল ও সুদের টাকা পরিশোধ করা হলেই কেবল এই সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। কিন্তু গত ২ বছর ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞায় ডলারে রাশিয়ার পাওনা অর্থ পরিশোধ বন্ধ রয়েছে। যদিও একটি আলাদা অ্যাকাউন্ট করে কিস্তির সমপরিমাণ অর্থ জমা রাখা হচ্ছিল। এর মধ্যে চীনসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রায় বিকল্প পদ্ধতি অর্থ চায় রাশিয়া।
কিন্তু ডলার ছাড়া অন্য কোনো মুদ্রায় অর্থ পরিশোধ সম্ভব নয় বলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানিয়ে দেয়া হয়। আর এতেই দেখা দিয়েছে বিপত্তি। ফলে রূপপুরের জন্য প্রাথমিকভাবে নেয়া ৫০ কোটি ডলারের ঋণ ও সুদ পরিশোধের কিস্তি আটকে যায়। এখন এই অর্থ পরিশোধের শর্ত নিয়ে আলাপ আলোচনা অব্যাহত আছে। চুক্তি অনুযায়ী, রাশিয়ার ঋণের সুদের হার লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফারড রেটের (লাইবর) সঙ্গে ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ যোগ হবে। তবে সুদের হার ৪ শতাংশের বেশি হবে না।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) জানায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মধ্যে রাশিয়ার ঋণ ৯১ হাজার ৪০ কোটি এবং সরকারি তহবিলের অর্থ ২২ হাজার ৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পটির শুরু থেকে গত জুলাই মাস পর্যন্ত ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬৯ দশমিক ০১ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৭৪ হাজার ৯৮১ কোটি ২ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৬ দশমিক ৩০ শতাংশ।
এদিকে চলমান চীনা ঋণের সুদের হার এক শতাংশে নামিয়ে আনতে ও ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়িয়ে ৩০ বছর করতে চীনকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি বেইজিংকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠায় ইআরডি। বর্তমানে চীনা ঋণের সুদের হার দুই থেকে ৫ শতাংশ এবং পরিশোধের সময়কাল ২০ বছর। যদি চলমান চীনা ঋণের সুদের হার কমাতে না পারে, তাহলে চীন থেকে নতুন ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে বাড়তি সময় ও কম সুদের জন্য চেষ্টা করা হবে।
২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশ সফরকালে ২৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নে পরবর্তী চার বছরে ২০ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন। পরে সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রকল্পভিত্তিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
গত জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা ও বেইজিং মাত্র ৯টি প্রকল্পে ৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এর মধ্যে মধ্যে বাংলাদেশ খরচ করতে পেরেছে মাত্র ৪ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার, যা চীনের প্রতিশ্রুত ঋণের এক-চতুর্থাংশেরও কম। পাশাপাশি আরো ১৮টি প্রকল্প নতুন করে পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চীনা ঋণে ৩ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। চলমান রয়েছে ৬টি প্রকল্প।
বাস্তবায়ন কাজ শেষ হয়েছে- কর্ণফুলী টানেল, দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্লান্ট এবং ফোর টায়ার জাতীয় ডেটা সেন্টার স্থাপন প্রকল্প। চলমান ৭টি প্রকল্প হলো- পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ, চট্টগ্রামে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং, পিজিসিবির আওতায় বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের উন্নয়ন, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং ডিপিডিসির আওতায় বিদ্যুতের বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প। আরো আছে, রাজশাহী ওয়াসার ভূ-উপরিস্থ পানি সরবরাহ প্রকল্প এবং জাতীয় তথ্য প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্প।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.