গ্রামের সংবাদ ডেস্ক : আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, জাতীয় গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতিকে চিরতরে মুছে দিতে বিভীষিকাময় হত্যাযজ্ঞ চালায়। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ‘অপারেশন সার্চলাইটে’র নামে হাজার হাজার ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালিদের ঝাপিয়ে পড়ে হায়েনারা। বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমন করতে চেয়েছিল, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। অপারেশন সার্চলাইটে’র আসল উদ্দেশ্য ছিল ২৬ মার্চের মধ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সব বড় বড় শহর দখল করে নেওয়া এবং রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধীদের এক মাসের মধ্যে নিশ্চিহ্ন করা।
এই অপারেশনের নীলনকশায় ঢাকার চারটি স্থান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মূল লক্ষ্য ছিল:
১. বঙ্গবন্ধুর বাসভবন, ২. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ৩. রাজারবাগ পুলিশ লাইনস এবং ৪. তৎকালীন পিলখানা ইপিআর (বর্তমান বিজিবি)
পরিকল্পনা মোতাবেক পাকিস্তানি সেনারা একযোগে পিলখানা, রাজারবাগে আক্রমণ চালায়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত ১টা ৩০ মিনিটে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। এর আগেই ইপিআরএর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি, বাংলার অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চ লাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সকল পদক্ষেপ চুড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। পাকিস্তানি বাহিনীর ৫৭ ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী খান ঢাকায় নেতৃত্ব দেন এবং ১৪ ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা দেশের অন্যান্য অঞ্চলে নেতৃত্ব দেন।
শুধুমাত্র পঁচিশে মার্চ রাতেই বাংলাদেশে প্রায় এক লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, যা গণহত্যার ইতিহাসে এক জঘন্যতম ভয়াবহ ঘটনা, হিসেবে উল্লেখ করে সে সময়কার অস্ট্রেলিয়ার “সিডনি মর্নিং হেরাল্ড” পত্রিকা।
পূর্ব পাকিস্তনের সঙ্কট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তানি সরকার মুক্তিযুদ্ব চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয়, ‘১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত এক লাখেরও বেশী মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।’
মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সর্ম্পকে লিখেছেন, ‘সে রাতে ৭০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেফতার হলো আরো ৩০০০ লোক। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চললো মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করলো ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট লুট আর ধ্বংস তাদের নেশায় পরিণত হলো যেন। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক- শেয়ালের খাবারে পরিণত হলো। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠলো শকুন তাড়িত শ্মশান ভূমি।’
গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৎকালীন ইকবাল হল (জহুরুল হক হল), জগন্নাথ হল, রোকেয়া হলসহ শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় আক্রমণ চালিয়ে অসংখ্য শিক্ষক-ছাত্রকে হত্যা করে, নির্দয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত। ঢাবির জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি।
একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করতে সকল ধরনের আয়োজনই ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের। বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালীরা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস মরণপণ সশস্ত্র লড়াই শেষে, ৩০ লাখ নিরপরাধ নারী-পুরুষ-শিশুর প্রাণের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে, বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটা ‘বাংলাদেশ’ নামে নতুন রাষ্ট্রটি।
২০১৭ সালের ১১ মার্চ সংসদে সর্বসম্মতভাবে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা করা হয়। দিবসটিকে ‘ক’ শ্রেণীভুক্ত দিবস অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব মন্ত্রীসভায় অনুমোদন করা হয়। জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস পালিত হলেও আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হওয়া থেকে দূরেই আসে এ দিনটি। আজ শুক্রবার (২৫ মার্চ) গণহত্যা দিবসে রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে। গণহত্যা দিবসে এক মিনিট বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হবে। কেপিআই এবং জরুরি স্থাপনাগুলো ব্ল্যাক আউটের আওতামুক্ত থাকবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.