ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া ওয়ারেশ সেজে সরকারের ‘ক’ তফশীলভুক্ত বিপুল পরিমান সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা অবশেষে ব্যার্থ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহের একটি আদালতের রায়ে সরকারের প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা মুল্যের ৮৩ বিঘা জমি রক্ষা পেয়েছে। ঝিনাইদহ অতিরিক্ত জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মোঃ আব্দুল মতিন চাঞ্চল্যকর এই রায় প্রদান করেন।
জেলা প্রশাসকের ভিপি শাখা ও মামলার রায় সুত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ২নং মুধুহাটী ইউনিয়নের ৪টি মৌজায় বিপুল পরিমার ‘ক’ তফশীলভুক্ত অর্পিত সম্পত্তি ছিল। ২০১৩ সালে সদরের কালীচরণপুর গ্রামের প্রদ্যুত মিত্রের ছেলে স্মৃতি মিত্র নামে এক ব্যক্তি ভুয়া ওয়ারেশ সেজে অর্পিত সম্পত্তি আইনে দুইটি মামলা করেন, যার মামলা নং ৮১৮/১৩ ও ৮১৩/১৩। মামলায় বাদী দাবী করেন, সদর উপজেলার ২০ নং বসুপুর, ২১ নং মহামায়া, ২২ নং বামুনপাড়া পদ্মবিলা ও ৪৮ নং চান্দুয়ালী মৌজায় তার পুর্ব পুরুষরা ২৪.৪৪ একর জমির মালিক ছিলেন যা পরবর্তীতে ভিপি তালিকাভুক্ত (‘ক’ তফশীল) হয়। ওযারেশ প্রমানে জনৈক স্মৃতি মিত্র জাল কাগজপত্র ও ওয়ারেশ কায়েম সনদও যোগাড় করেন।
এদিকে এলাকাবাসি আজিজুর রহমান সালাম জানান, ১৯৪৬ সালে রায়টের সময় বসুপুর, মহামায়া ও বামুনপাড়া পদ্মবিলা এলাকার অনেক হিন্দু তাদের জমিজমা ও অস্থাবর সম্পত্তি ফেলে ভারতে চলে যান। ফলে বসুপুর ও বামুনপাড়া পদ্মবিলা মৌজা হিসেবে বহাল থাকলেও সেখানে কোন গ্রাম নেই। আগে এই দুইটি স্থানে গ্রাম ছিল। সেই জমিগুলো পরবর্তীতে ‘ক’ তফশীল হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়।
অন্যদিকে ৭ বছর মামলা চলার পর ২০২০ সালে ঝিনাইদহের নিম্ন আদালতের বিচারক কে এম আলমগীর হোসেন বাদী স্মৃতি মিত্রের পক্ষে রায় দেন। এ নিয়ে সে সময় ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনে হৈ চৈ পড়ে যায়।
মামলায় হেরে ২০২০ সালে জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথের নির্দেশে সরকার পক্ষ আবার আপীল করেন, যার মামলা নং ১৯/২০ ও ২০/২০। মামলার বাদী স্মৃতি মিত্রের পিতা ও উল্লেখিত ৮৩ বিঘা জমির প্রকৃত মালিকের পিতার নাম এক হলেও দাদার নাম ছিল ভিন্ন। জমির প্রকৃত মালিকের দাদার নাম ছিল হেমন্ত কুমার এবং তাদের কোন ওয়ারেশ বাংলাদেশে নেই। পক্ষান্তরে মামলার বাদীর দাদার নাম রঞ্জন কুমার মিত্র। আর এটাই আদালতে প্রমানিত হওয়ার পর সরকারের ‘ক’ তফশীলভুক্ত বিপুল পরিমান সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা ভেস্তে যায়।
সরকার পক্ষের ভিপি কৌশলী এ্যাড সুভাষ বিশ্বাস মিলন বৃহস্পতিবার বিকালে খবর নিশ্চিত করে জানান, সরকারের পক্ষে মামলাটি খুবই চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা প্রমান করতে সক্ষম হয়েছি বাদীর দাদার নাম এক এবং প্রকৃত জমির মালিকের নাম ভিন্ন ভিন্ন। ফলে বিজ্ঞ আদালত বিচক্ষনতার সঙ্গে রায় প্রদান করেন।
তিনি আরো জানান, এই মামলায় মধুহাটী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহম্মেদ জুয়েল ও বর্তমান চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেনসহ ৫ জন সরকারের পক্ষে সাক্ষ্য দেন। বাদী পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এ্যাডঃ মীর সাখাওয়াত হোসন।
মধুহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন জানান, মামলার বাদী স্মৃতি মিত্রের পিতার নাম ও ভারতে থাকা জমির বর্তমান ওয়ারেশদের পিতার নামের মিল থাকলেও দাদার নাম ভিন্ন ভিন্ন। আমি সাক্ষ্য প্রদানের সময় এ কথায় বলেছি।
তিনি আরো জানান, বসুপুর, মহামায়া, বামুনপাড়া পদ্মবিলা ও চান্দুয়ালী মৌজায় এখন ১০/১২ লাখ টাকা করে জমির বিঘা। সেই হিসেবে ৮৩ বিঘা জমির দাম আনুমানিক সাড়ে ৮ কোটি টাকা হবে। এ ব্যাপারে মামলার বাদী স্মৃতি মিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি রায় নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.