রাজগঞ্জ প্রতিনিধি : যশোরের মনিরামপুরে ধানখেতে পাওয়া লাশটি পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে মিসকাত হোসেনের (৩৬)। তিনি কয়েক বছর ধরে যশোরের পদ্মবিলায় ইলা অটো রাইস মিলে শ্রমিকের কাজ করতেন। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তারের পর তাঁকে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, পরকীয়া প্রবাসী প্রেমিকাকে মিসকাতের স্ত্রী অপমান করেন। এর জেরে ওই নারী দুই লাখ টাকা চুক্তিতে ভাড়াটে নারী খুনি দিয়ে মিসকাতকে হত্যা করেছে।
এই ঘটনায় পুলিশ ওই নারী ও পরকীয়া প্রেমিকার বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে। শনিবার দুপুরে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে ডিবি।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন—সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা গ্রামের চুন্নু গাজীর মেয়ে রিক্তা পারভীন (৩০) ও প্রেমিকার বাবা সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার নৈকাটি গ্রামের নিজাম সরদার (৬০)।
গ্রেপ্তার দুজনের বরাত দিয়ে ডিবি জানিয়েছে, হত্যার শিকার মিসকাত হোসেন পাবনা জেলার ভাঙ্গুরা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে। তিনি যশোরের পদ্মবিলায় ইলা অটো রাইস মিলে শ্রমিকের কাজ করতেন। এ সময় মিলের শ্রমিক সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার নৈকাটি গ্রামের নিজাম সরদারের মেয়ে নাজমা খাতুনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক হয়। একপর্যায়ে নাজমা মিলের কাজ ছেড়ে সৌদি আরব চলে যান। এরপরও মিসকাতের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাঁর।
ঘটনা টের পেয়ে মিসকাতের স্ত্রী জুলেখা মোবাইল ফোনে নাজমাকে গালমন্দ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিদেশে থেকে মিসকাতকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন নাজমা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) মফিজুল ইসলাম বলেন, বিদেশে থেকে নাজমা মিসকাতকে হত্যার জন্য গ্রেপ্তার রিক্তা পারভীনের সঙ্গে ২ লাখ টাকা চুক্তি করেন। সেই অনুযায়ী গত বুধবার রাতে রিক্তা তাঁর পরকীয়া প্রেমিক যশোরের শংকরপুরের শাহীন ড্রাইভারের মাধ্যমে কৌশলে মিসকাতকে ডেকে নিয়ে যান। এরপর তাঁরা চেতনানাশক খাইয়ে অচেতন করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মিসকাতকে হত্যা করে লাশ মনিরামপুরের জোঁকা গ্রামের একটি ধানখেতে ফেলে যায়।
এসআই মফিজুল বলেন, এই ঘটনায় নিহতের ভাই এরশাদ আলম বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মনিরামপুর থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এরপর সাতক্ষীরা অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে ভাড়াটে খুনি রিক্তা ও হত্যার পরিকল্পনাকারী নাজমা খাতুনের বাবা নিজাম সরদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় আসামিদের হেফাজতে থাকা খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে গ্রেপ্তার দুজনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবি।
নিহত মিসকাতের ছোট ভাই ও মামলার বাদী এরশাদ আলম বলেন, আমার ভাই চার থেকে পাঁচ বছর ধরে যশোরে একটি অটো রাইস মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। আট দিন আগে ভাই বাড়ি থেকে কর্মস্থলে গেছেন। বুধবার রাত ৮টার দিকে ভাই তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন। ফোনে ভাই জানিয়েছিলেন, তাঁরা ৬ জন মিলে একসঙ্গে অন্য এলাকায় ধান আনতে যাচ্ছেন। রাত ১০টায় বাসায় ফিরে তিনি স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চেয়েছিলেন। এরপর থেকে ভাইয়ের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ভোরে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা ইউনিয়নের জোঁকা ঈদগাহসংলগ্ন একটি ধানখেতে এক ব্যক্তির রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। পরে তাঁর পরিচয় নিশ্চিত করা হয় যে লাশটি মিসকাত হোসেনের।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.