ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ঝিনাইদহের বিভিন্ন ক্লিনিকে সিজারের পর লিভার ও কিডনি ফেল করে প্রসুতি মারা যাওয়ার ঘটনায় একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও তদন্ত কাজ চলছে ঢিমেতালে।
কচ্ছপ গতিতে চলা এই তদন্ত কর্যক্রম আদৌতেও আলোর মুখ দেখবে কিনা সন্দেহ আছে। এদিকে জেলায় গত এক মাসে সিজার অপারেশনের পর ৬ জন প্রসুতি মারা গেছেন। অপারেশনের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ তারপর প্রসুতির কিডনি ও লিভার অকেজো হয়ে মারা যাচ্ছেন।
ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিস সুত্রে বলা হয়েছে, ঝিনাইদহ শহরের শামীমা ক্লিনিকে দুইজন, কালীগঞ্জের দারুসশেফা ক্লিনিকে একজন, হাসান ক্লিনিকে একজন, আরাপপুর রাবেয়া হাসপাতালে একজন ও হামদহ প্রিন্স হাসপাতালে একজন প্রসুতি কিডনি ও লিভার ফেল করে মারা গেছেন। গত ২৬ মার্চ শৈলকুপা উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের শারমিন বেগম নামে এক প্রসুতি ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর এলাকার রাবেয়া হাসপাতালে ভর্তি হন। তাকে সিজার করা হয়। শিশু ও মা সুস্থ ছিল। কয়েক ঘন্টা পর প্রসুতির অতিরিক্ত রক্তক্ষণ শুরু হয়। রোগি দুর্বল হয়ে পড়ে ও প্রসাব বন্ধ হয়ে যায়। ্এরপর রোগী কোমায় চলে যায়। প্রসুতির স্বামী আল আমিন বলেন, এ্যম্বুলেন্সে করে যশোরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। চার দিন পর মারা যায়।
হালিমা খাতুন নামে হণিাকুন্ডু উপজেলার পার্বতীপুর গ্রামের এক প্রসুতিকে ৪ এপ্রিল শহরের প্রিন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তার স্বামী হাবিবুর রহমান জানান, বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সিজার করা হয়। সিজারের ৪/৫ ঘন্টা পর প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এরপর প্রসুতির কিডনি বিকল হয়ে ঢাকায় মারা যান।
গত ৩০ মার্চ হরিণাকুন্ডু উপজেলার তেলটুপি গ্রামের এনামুল কবিরের স্ত্রী লাভলী বেগমকে কালীগঞ্জ শহরের দারুসশেফা হাসপাতালে সিজার করা হয়। সিজারের পর মা ও শিশু সুস্থ ছিল। এরপর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে একই ভাবে মারা যায়।
গত ১২ এপ্রিল হরিণাকুন্ডু উপজেলার ভবিতপুর গ্রামের রিণা থাতুনকে শহরের শামিমা ক্লিনিকে সিজার করা হয়। প্রসুতির স্বামী আনারুল ইসলাম বলেন, দুপুর ১২টার দিকে সিজার করা হয়। এটি ছিল দ্বিতীয় সিজার। প্রসূতি সুস্থ ছিল। তিনি খবারও খান সিজারের ৪/৫ ঘন্টা পর প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হতে থাকে। পাঠানো হয় ঢাকায়। সেখানেই তিনি মারা যান।
১৬ এপ্রিল শামীমা ক্লিনিকে শৈলকুপা উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের লিপি খাতুনকে সিজার করা হয়। সিজারের কয়েক ঘন্টার পর তার কিডনি ও লিভার অচল হয়ে মারা যান। ২৫ এপ্রিল ঝিনাইদহ শহরের ডাক্তার হাসানুজ্জামানের ক্লিনিকে সিজারের পর আকলিমা খাতুন নামে এক প্রসুতির মৃত্যু হয়। তিনি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের একরামুল হোসেনের স্ত্রী।
মৃত প্রসুতির বাবা আকরাম হোসেন জানান, গত বুধবার সকালে তার মেয়েকে ডাঃ হাসানুজ্জামানের ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সিজার করা হয়। সিজারের পর মা ও শিশু ভাল ছিল। কয়েক ঘন্টা পর প্রসুতি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর হাসানুজ্জামান ক্লিনিকের সবাই গাঢাকা দেন।
গাইনি চিকিৎসায় অভিজ্ঞ ডাঃ শামীমা সুলতানা বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে সিজার করেন। রোগির কিডনি লিভার ফেল করে মৃত্যুর ঘটনা আগে ঘটেনি। এখন দেখি রোগির শ^াসকষ্ঠও হচ্ছে। তিনি বলেন সিজার কালে ইনজেকশন অক্সিটোসিন, ইনজেকশন ডুরাটোসিন, ট্যাবলেট সাইটোমিস ও স্যালাইন লিবরা দেওয়া হয়। এই সব ওষুধে কোন ভেজাল আছে কিনা এ নিয়ে প্রশান তোলেন তিনি।
জেলা বিএমএ’র সভাপতি ডাঃ রেজা সেকেন্দার বলেন, সিজার করার পর প্রসুতিদের অস্বাভাবিক রক্তরক্ষণ শুরু হচ্ছে। এরপর কিডনি ও লিভার অকেজো হয়ে যাচ্ছে। শুধু ঝিনাইদহে নয়, দেশের আরো কয়েক স্থানে এভাবে সিজারের পর কিডনি ফেল করে প্রসুতির মৃত্যু হচ্ছে বলে তিনি জানান। ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডাঃ শুভ্রা রানী দেবনাথ বলেন, কি কারনে সিজারের পর প্রসুতির অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা অজানা রয়েছে। তবে রোগিদের যে ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে তাতে কোন সমস্যা আছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর জানা যাবে।
সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মিথিলা ইসলাম জানান, তাকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা অপারেশন থিয়েটারে ব্যবহৃত ওষুধের ১৭টি স্যাম্পল ঢাকায় পাঠিয়েছি পরীক্ষার জন্য পাঠিিেছ। তাছাড়া ঢাকা ও খুলনার উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি জানান, ক্লিনিকে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা কাজ শুরু করেছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.