স্টাফ রিপোর্টার : যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার ৩ লক্ষ জনগণের চিকিৎসার সর্বোচ্চ আশ্রয়স্থল ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে অসন্তুষ্ট রুগী এবং তার স্বজনরা। ডাক্তারের অভাবে একদিকে যেমন রুগীরা কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না অন্যদিকে মেশিন নষ্ট থাকায় সার্জারী বিভাগ বন্ধ হয়ে গেছে। কবে নাগাদ সেটা চালু হবে সেটাও অজানা। এমতাবস্থায় সমালোচনার মুখে পড়েছে স্বনামধন্য এই প্রতিষ্ঠানটি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১২ সালে ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও এই শয্যার বিপরীতে কখনই ডাক্তার বা কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ১২ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের বিপরীতে আছেন ৫ জন এবং ১৫ জন মেডিকেল অফিসারের বিপরীতে আছেন মাত্র ২জন। ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির ৪৯ টি পদের বিপরীতে কর্মচারী আছেন মাত্র ২২ জন। ডাক্তার আর কর্মচারী সংকটে হাসপাতালে আগত রুগীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে তারপর লম্বা সময় অপেক্ষা করেও ডাক্তার দেখাতে পারছেনা অনেকে। প্রচন্ড গরমে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন সন্তান সম্ভব মায়েরা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ডাক্তারের কাছে পৌঁছাতে পারলেও তাদের প্রেসার বা ওজনটাও মাপা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন অনেকে। অন্যদিকে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে ডায়াথার্মি মেশিন নষ্ট থাকায় প্রায় মাসখানেক ধরে সিজারিয়ান সহ অন্যান্য সব ধরনের সার্জারী বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে গরীব রুগীদের ক্লিনিকের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে। ফলে তারা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কতদিনে এই মেশিন ঠিক হবে না নতুন মেশিন আসবে সেটা সবারই অজানা। ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি জেনারটর থাকলেও জ্বালানি তেল কেনার বরাদ্দ না থাকায় সেটাও চালু করা সম্ভব হয় না। ফলে এই প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যে বিদ্যুৎ চলে গেলে ফ্যান তো দুরের কথা একটা আলোরও ব্যবস্থা থাকছে না। ভ্যাপসা গরম আর অন্ধকারে চরম দুরাবস্থা বিরাজ করে রুগীদের ওয়ার্ড গুলোতে। এছাড়াও রুগীদের সাথে কর্তব্যরত নার্স দের দুর্ব্যবহারের অভিযোগও করেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রুগীরা।
ঝিকরগাছার ঐতিহ্যবাহী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেবার সভাপতি মাস্টার আশরাফুজ্জামান বাবু বলেন, ঝিকরগাছা হাসপাতালে পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই, যারা আছেন তারাও সময়মত আসেননা আবার সময়ের আগেই বের হয়ে যান, হাসপাতালে আগত রুগী ও তাদের স্বজনদের বসার জায়গা নেই, মাথার উপর প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফ্যান নেই, বিদ্যুৎ চলে গেলে আলো জ্বলেনা, বাথরুম গুলো নোংরা এবং দুর্গন্ধময়, সেখানে কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়, হাসপাতাল চত্বর এবং এর আশেপাশের এলাকাও অপরিচ্ছন্ন। এছাড়াও আছে মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভদের যন্ত্রণা। সব মিলিয়ে হাসপাতালটিতে এখন অস্বস্তিকর পরিবেশ বিরাজমান। সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে অতিদ্রুত এই সমস্যা গুলো সমাধান করতে হবে।
ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার রশিদুল আলম এই প্রতিবেদককে বলেন, বারবার চাহিদা দেওয়া স্বত্বেও এখানে ডাক্তার এবং কর্মচারী কোনোটাই দেওয়া হচ্ছে না। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হলেও এখানে সবসময় ৮০ থেকে ৯০ জন রুগী ভর্তি থাকে। অল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে এতসংখ্যক রুগীকে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। তবুও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ডায়াথার্মি মেশিনের জন্য আবেদন পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলে আবারও সার্জারী বিভাগ চালু হবে। কিন্তু কতদিন লাগতে পারে সেবিষয়ে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেন নি।
যশোর জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, মেশিনের জন্য আমি কয়েকবার আবেদন পাঠিয়েছি। অন্যান্য বিষয়গুলো দেখে আপনাকে জানাবো।
চৌগাছা ঝিকরগাছা আসনের সংসদ সদস্য ডাক্তার মো: তৌহিদুজ্জামান তুহিন বলেন, আমি নিজে এসকল বিষয় গুলো নিয়ে সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলেছি। তবে সরকারি বরাদ্দ পাওয়াটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.