মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি : ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট দীর্ঘ ৭ ঘণ্টা চেষ্টার পরও মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় হোসেন্দী ইউনিয়নের জামালদীতে টিকে গ্রুপের মালিকানাধীন সুপার বোর্ড কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এর মধ্যে আগুন নেভাতে গিয়ে এক আনসার সদস্যসহ ৭ জন আহত হয়েছেন। আহত অপর ৬ জন কারখানার শ্রমিক। তাদের গজারিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত ৭ জনের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে তিনজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- মাহিম (৩৫), শরিফুল ইসলাম (৩০) ও মো. হিরণ (৩২)।
২৪ মার্চ, রবিবার বেলা ১টার দিকে লাগা আগুন রাত ৯টা পর্যন্ত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি বলে গজারিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন অফিসার ইনচার্জ রিফাত মল্লিক জানিয়েছেন।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে সাতজন আহত হয়েছেন। বাতাসের কারণে আগুনের ফুলকি পড়ে কারখানার পাশে মেঘনা নদীতে রাখা তিনটি ট্রলার পুড়ে গেছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা রিফাত বলছেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে গজারিয়া ও নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করছে। পাশাপাশি দুটি জাহাজ চেষ্টা করেও আগুন নেভাতে পারেনি। আগুন নেভাতে গিয়ে কারখানার শ্রমিক ও স্থানীয় লোকজনসহ সাতজন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রবিবার দুপুর ১টার দিকে প্রতিষ্ঠানটির পাটের গোডাউনে আগুন দেখতে পান কর্মরত শ্রমিকরা। সেখান থেকে আগুন নদীতে নোঙর করে রাখা একটি পাটখড়িবোঝাই ট্রলারে লেগে যায়। প্রথমে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে তারা ঘটনাস্থলে এসে অগ্নিনির্বাপণের কাজ শুরু করে। তবে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে পার্টিকেল বোর্ড, পাটখড়ি, প্লাস্টিকের দরজা ও প্লাস্টিকের পাইপের মতো দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে সরু রাস্তা আর পানির অভাবে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের।
আবুল কাসেম নামে কারখানাটির এক কর্মী সাংবাদিকদের বলেন, ভেতরে প্রচুর পরিমাণে পাটখড়ি মজুদ ছিল। এগুলো দিয়েই সুপার বোর্ড তৈরি করা হয়। সকালে কাজ করার সময় একপাশে সামান্য আগুনের ফুলকি দেখি। সেটা অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র দিয়ে নেভানোর চেষ্টা করি। কিন্তু পাটখড়িতে লাগা আগুন মুহূর্তেই পুরো কারখানায় ছড়িয়ে যায়। কিন্তু আমরা যারা ভেতরে ছিলাম, তারা নিরাপদে বের হতে পেরেছি।
তিনি বলেন, মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষা এই ফ্যাক্টরিটি আগুন থেকে বাঁচানোর জন্য অনেক উপকরণ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়, পরে সেখানেও আগুন জ্বলতে থাকে। সন্ধ্যায় আকাশ ভেঙে বৃষ্টি শুরু হলে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে, তবে নেভানো এখনও সম্ভব হয়নি।
কারখানার আরেক শ্রমিক তরিকুল ইসলাম বলেন, কারখানার গোডাউনে অনেক পাটখড়ি রয়েছে। যদি কোনো কারণে আগুনের ফুলকি গোডাউনের পাটখড়িতে এসে পড়ে, তাহলে সেখান থেকে আবার আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।
ঢাকা বিভাগ ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক সালেহ উদ্দিন বলেন, দুপুর ১টা ১২ মিনিটে আমরা অগ্নিকাণ্ডের খবর পাই। প্রথমে আমাদের গজারিয়া স্টেশনের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে অগ্নিনির্বাপণের কাজ শুরু করে। ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে আরও ১০টি ইউনিট অগ্নিনির্বাপণের কাজে যোগ দেয়। বিকাল ৪টার দিকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বিশেষ ফোম টেন্ডার এবং রিমোট কন্ট্রোল ফায়ার ফাইটিং রোবট নিয়ে আসি আমরা। আমাদের ১২টি ইউনিট কাজ করছি, তবে এখনো পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। অগ্নিকাণ্ডের কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
টিকে গ্রুপের ডিরেক্টর মো. সফিউল আতাহার তাসলিম বলেন, কারখানার মালামালের যা অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে না, একদিনে এ আগুন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। ক্ষতির পরিমাণ এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না, কালকে জানতে পারব। ২০১৩ সালেও এই ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগেছিল, সেবার পুরোপুরি নেভাতে পাঁচদিন সময় লেগেছিল।
বিষয়টি সম্পর্কে হোসেন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু বলেন, কারখানাটিতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ ছিল না। এ ব্যাপারে আমরা একাধিকবার তাদের সতর্ক করলেও তারা বিষয়টি আমলে নেয়নি।
গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তার বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি। দুপুর আড়াইটা থেকে আমি ঘটনাস্থলে রয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাসুদুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাসুদুর রহমান বলেন, তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কীভাবে আগুন লেগেছে, তা জানার চেষ্টা করছি আমরা।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.