সানজিদা আক্তার সান্তনা : এক যুগ আগে শামিম নামে এক ইজিবাইক চালককে খুন করে পিচ্চি রাজার সন্ত্রাসের রাজত্ব শুরু। একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে এলাকা যশোরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল সে।
সব শেষে গত ৮ মার্চ মধ্যরাতে শহরের রেলগেট এলাকায় আরেক সন্ত্রাসীদের গুরু রমজান আলীকে খুন করা হয়েছে পিচ্চি রাজার নেতৃত্বে। এলাকাবাসী তথ্য দিয়েছেন, এই রমজান আলীর হাত ধরেই এক যুগ আগে পিচ্চি রাজার উত্থান হয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, পিচ্চি রাজার পিতা মজিবর রহমান ওরফে জাহাঙ্গীর খুলনার তেরখাদা এলাকা থেকে দেড়যুগ আগে যশোরে আসে। যশোর শহরের মুজিব সড়ক রেলগেট পশ্চিমপাড়ার একটি বস্তিতে বসবাস শুরু হয় তাদের। রাজার মা শ্যামলী এবং বাবা রেলগেট এলাকায় বসবাস করার কিছু দিন পর থেকেই জড়িয়ে পড়েন মাদক কারবারিতে। এক পর্যায়ে পিতা-মাতার মতো রাজাও শুরু করেন মাদকের কারবার। পাশাপাশি পিচ্চি রাজা রেলগেট পশ্চিমপাড়ার তৎকালীন শীর্ষ মাদক কারবারি দম্পতি রেখা-ফায়েকের ছেলে চিহ্নিত সন্ত্রাসী রমজান ও সাগরের সাথে চলাফেরা শুরু করে। বোমা তৈরি, বোমার ব্যবহার, ফেনসিডিল, হেরোইনসহ বিভিন্ন ধরণের অস্ত্র, বিকিকিনির কাজ শুরু করেন রাজা। এভাবে একের পর এক হত্যাকাণ্ড, ছিনতাই, ডাকাতি, অস্ত্রের ব্যবহার সহ নানা ধরণের অপরাধ অপকর্মে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
পিচ্চি রাজার নেতৃত্বে এক যুগ আগে শামিম নামে এক ইজিবাইক চালককে মুখে স্কচটেপ দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এরপর যশোর শহরের চাঁচড়া কবরস্থানে রেখে আসে রাজাসহ কয়েকজনে। এর একদিন পরই রাজা ও কালুসহ কয়েকজন পুলিশের হাতে আটক হয়। জামিনে বের হওয়ার পর থেকে আবারও রমজান-সাগরের শেল্টারে থেকে পিচ্চি রাজা সন্ত্রাসীর রামরাজত্ব কায়েম করার চেষ্টা করে।
২০২০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বোমা বিস্ফোরণ ও মাদকদ্রব্য আইনের অভিযোগে পিচ্চি রাজার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় দুইটি মামলা হয়। একই বছরের ৪ আগস্ট তার বিরুদ্ধে বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগে একটি মামলা হয়। ২০২১ সালেল ৩ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযোগে থানায় মামলা হয়। ২৬ নভেম্বর চাঁদাবাজির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়। ২০১৬ সালের ১১মে তার বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযোগে আরো একটি মামলা হয়। ২০২২ সালের ৬ জুন আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে দ্রত বিচার আইনে কোতোয়ালি থানায় মামলা করে পুলিশ। একই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর একটি মাদকের মামলা করে পুলিশ। ২৪ অক্টোবর অস্ত্র ও মাদকসহ আটকের পর তার বিরুদ্ধে থানায় দুইটি মামলা হয়।
২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর যশোরের মুজিক সড়কে রিপন নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে পিচ্চি রাজার বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। ৩ মার্চ হেরোইন উদ্ধার ঘটনায় পিচ্চি রাজা ও ট্যাটু সুমনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। এছাড়া ৫ মার্চ দ্রুত বিচার আইনে এবং ৮ মার্চ রমজান হত্যার ঘটনায় পিচ্চি রাজার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়। রেলগেটের ৩২ মামলার আসামি রজমানের শেল্টারে থেকে তিনি এ অপকর্ম করতে থাকেন। কিন্তু সম্প্রতি চিড় ধরে সম্পর্কে।
কারণ হিসেবে এলাকাবাসী জানায়, রাজাকে না জানিয়ে গোপনে তার দ্বিতীয় স্ত্রী রানীকে ইয়াবা আনার জন্য কক্সবাজারে পাঠায় রমজান ও তার স্ত্রী। কক্সবাজারে গিয়ে ৬ হাজার পিস ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে আটক হন রানী। এই নিয়ে রাজার মধ্যে ক্ষোভ কাজ করছিল। এছাড়া গত দুই মাসে যশোরে ছুরি-চাকু এবং খুনখারাবি বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক অপরাধে পিচ্চি রাজা সম্পৃক্ততা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হয়েছে। পিচ্চি রাজাকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে পারেন রমজান। তার বিষয়ে পুলিশে তথ্য দিচ্ছিলেন রজমান এমন কথা কানে যায় পিচ্চি রাজার।
স্ত্রী রানীকে কক্সবাজারে ইয়াবাসহ আটক এবং পুলিশ ধরিয়ে দেওয়ার তথ্য দেয়ার বিষয়ে রমজান ও তার স্ত্রীর উপর ক্ষুব্ধ হয় রাজা। গত ৮ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাড়ি থেকে স্ত্রীকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে কিছু দূরে শশুর বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে রমজান রেলগেট মুজিব সড়কের দিয়ে রওনা করে। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পিচ্চি রাজা রমজানের স্ত্রীকে মারপিট করতে ধাওয়া করে। এসময় তার স্ত্রীর চিৎকার শুনে রমজান ফিরে আসে। এসময় রাজার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে চলে যায়।
এভাবে এক যুগ ধরে একের পর এক যশোরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পিচ্চি রাজা। সব শেষে গত ৮ মার্চ রাতে শহরের রেলগেট এলাকায় আরেক সন্ত্রাসী রমজান আলীকে খুন করা হয়েছে পিচ্চি রাজার নেতৃত্বে। যদিও এক যুগ আগে রমজান আলীর হাতেই পিচ্চি রাজার উত্থান ছিল বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।
এই ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, পিচ্চি রাজা সহ সকল অপরাধীদের গ্রেপ্তারে জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে পিচ্চি রাজার বিরুদ্ধে ২০০২ সাল থেকে এই পর্যন্ত পুলিশের রেকর্ড অনুযায়ী ১৬টি মামলা থাকলেও পূর্বের সহ দেড় ডজন মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.