নিজস্ব প্রতিবেদক : এক লাফে প্রতি কেজি চালে প্রকারভেদে খুচরা পর্যায়ে ৩-৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায় গত মাসে। নতুন সরকার গঠন হতে না হতে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় অস্বস্তি দেখা দিলে কঠোর হুঁশিয়ারি দেয় সরকার। অভিযানে নামে খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে এতেও চালের দাম নিয়ন্ত্রণে না আসায় চাল আমদানির কথা ভাবা হচ্ছে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
শুক্রবার সরেজমিনে চালের বাজারে দেখা গেছে, গত ১৪ দিনের অভিযানে চালের দাম কেজিতে এক টাকা কমেছে। অর্থাৎ কোনো কারণ ছাড়াই এক লাফে পাঁচ টাকা বেড়ে যে চাল প্রতি কেজি ৭৪ টাকায় বিক্রি হয়েছিল, শুক্রবার তা ৭৩ টাকায় কিনতে হয়েছে ক্রেতাদের। তবে পুরনো দামে আর ফিরে আসেনি চাল।
এছাড়া কারসাজি করে চালের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার ঘোষণা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হলেও কারো বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
শুক্রবার রাজধানীর রামপুরা, শান্তিনগর ও হাতিরপুল বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক লাফে মোটা চালের দাম বেড়েছিল কেজিতে তিন টাকা, কিন্তু ১৪ দিনের চেষ্টায় দাম কমেছে মাত্র এক টাকা। আবার চিকন চালের দাম বেড়েছিল পাঁচ টাকা, কমেছে এক টাকা।
এদিকে চালের বাজারে অস্থিরতার পেছনে মিলমালিক ও আড়তদারদের যোগসাজশ পাওয়ার কথা জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আড়তদারদের সঙ্গে মিল মালিকদের একদম যোগসাজশ আছে, যা দৃশ্যমান। ধান, চালসহ খাদ্যদ্রব্য মজুদকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করা হবে। আমরা বসে নেই। এমনটা নয় যে মজুদকারীদের ধরছি না।’
ব্যবসায়ীরা কোনো ধরনের মজুদ করতে পারবে না বলেও ঢাকা টাইমসের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন খাদ্যমন্ত্রী।
শুক্রবার রামপুরা বাজারের খুচরা বিক্রেতা ফয়সাল মোল্লা ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমরা বেশি দামে চাল কিনে আনি। আমরা চাল কেনার পরে বাজারে অভিযান চালায়। আমরা খুচরা বিক্রেতারা বেশি দামে কিনে কি কম দামে লোকসানে বিক্রি করবো?
আরেক খুচরা চাল বিক্রেতা নাছির উদ্দীন ঢাকা টাইমসকে বলেন, চালের দাম যে বেশি কমছে তেমন তো না। আগের চেয়ে মোটা চালের দাম কেজিতে এক টাকা কমছে বড়জোর। সরু মিনিকেট চাল কেজিতে ৭০ থেকে ৭২ টাকা বিক্রি করছি যা ১৫ দিন আগে ৭২ থেকে ৭৪ টাকায় বিক্রি করতাম।
এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, খুচরা বিক্রেতারা চালের দাম বাড়ার কথা শুনলেই আর দাম কমাতে চান না। চালের দাম মিলের গেটে ও পাইকারী বিক্রেতাদের মাঝে প্রায় ৫০ টাকার ব্যবধান। তবে এই ব্যবধান থাকবে না। আরও কমে আসবে। কয়টা দিনের ব্যাপার মাত্র। খুচরা বিক্রেতারা অনিয়মটা বেশি করছেন। লাখ লাখ খুচরা বিক্রেতারাই সমস্যাটা বেশি করছেন। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। খুচরা বিক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণে আনলেই চালে দাম আরও কমে আসবে।
সচিব বলেন, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসতে বাধ্য, না আসার কোনো কারণই নেই। দেশজুড়ে খাদ্যের কোনো সংকট নেই। ভরা মৌসুমে চালের সংকট একদম নেই। দাম না কমালে চাল আমদানি করবে মন্ত্রণালয়।
মেসার্স সিকদার রাইস এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী পাইকারী চাল বিক্রেতা বিপ্লব সিকদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি কর্মকর্তারা এসেছিল। আমাদের দোকানের ভাউচার আর বিক্রির দর চেক দিয়ে দেখেছেন। তিনি দাম কমানোর মতো কোনো সুযোগ না পেয়ে চলে যান। সাগর রাইস এন্টারপ্রাইজ থেকে আমি চাল আনি। তারা দাম কমালে আমরাও দাম কমিয়ে বিক্রি করবো।
আরেক পাইকারী বিক্রেতা মোয়াজ্জেম হুসাইন ঢাকা টাইমসকে বলেন, দাম কমলেও যা বাড়লেও তা। আমরা খুচরা ব্যাবসায়ীরা অল্প লাভে বিক্রি করলেই বাঁচি। কারণ দাম কমলে আমাদেও বেশি দামাদামি করতে হয় না। তবে, দাম বাড়ার পেছনে মজুতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে আমি মনে করছি।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী ঢাকার চালের বাজারদর হিসাবে সর্বশেষ মোটা সিদ্ধ চালের দাম পাইকারী বাজারে কেজিপ্রতি ৪৪ থেকে ৪৬.৫০ টাকা এবং খুচরা বাজারে একই চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বাজারে এর সম্পূর্ণ বিপরীত দৃশ্য দেখা গেছে। কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা বেশিতে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.