নিজস্ব প্রতিনিধি, ডুমুরিয়া (খুলনা): প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। তবে পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে এখনো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন খুলনার ডুমুরিয়ার শতাধিক মৃৎশিল্পী পরিবার।
জানা গেছে, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ১২৬টি ওয়ার্ডে প্রায় শতাধিক পরিবার মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত। টিপনা, রান্নাই, চেচুড়ি, বুড়লি গ্রামের কুমার পরিবারগুলো শত অভাব-অনটনের মধ্যেও প্রজন্ম ধরে টিকিয়ে রেখেছেন এই পেশা। তবে বাজারে প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম ও সিলভারের পণ্যের দাপটে মাটির সামগ্রীর কদর কমে যাওয়ায় দুঃসময় পোহাচ্ছেন তারা।
পালপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, মৃৎশিল্পীরা বিভিন্ন মেলায় বিক্রির জন্য তৈরি করছেন ছোট ছোট পুতুল, মাটির খেলনা ও সাজসজ্জার সামগ্রী। পরিবারের নারী সদস্যরা রঙের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের তৈরি মাটির কলসি, হাঁড়ি-পাতিল, সরা, মটকা, দই-পাতিল, মাটির ব্যাংক, ফুলের টবসহ নানা সামগ্রী এখনো গ্রামীণ মেলার শোভা বাড়ায়।
টিপনা নতুন রাস্তা বাজারের একমাত্র মৃৎপণ্যের দোকানের বিক্রেতা জীবন পাল জানান, ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি এই ব্যবসা করছেন। স্থানীয়ভাবে পণ্য তৈরি কমে যাওয়ায় এখন বিভিন্ন জেলা থেকে পণ্য এনে বিক্রি করতে হচ্ছে। প্লাস্টিক ও সিলভারের জিনিসের দাপটে তাদের ব্যবসায় ধস নেমেছে বলে জানান তিনি।
এক সময় গ্রামে প্রতিটি গৃহস্থালি কাজে মাটির হাঁড়ি-পাতিল ব্যবহার হতো। আজ আধুনিকতার ছোঁয়ায় সে জায়গা দখল করেছে অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের পণ্য। তবে মানুষের রুচির পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিত্যনতুন নকশার মাটির পণ্য তৈরি করে মৃৎশিল্পীরা তাদের শিল্পকে আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ শহরেও মাটির তৈরি সাজসজ্জার সামগ্রী বিক্রি করে জীবনধারণ করছেন।
মৃৎশিল্পীদের দাবি, সরকারি সহায়তা পেলে এবং বাজারে পণ্যের প্রচার ও প্রদর্শনীর সুযোগ বাড়লে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে নতুনভাবে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। এ ঐতিহ্য রক্ষা করা গেলে হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ শিল্প ও সংস্কৃতির একটি বড় অংশ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা যাবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ , ই-মেইল: ই-মেইল নং : gsongbad440@gmail.com , মোবাইল-০১৭১১-৩৫৯৬৩১
Copyright © 2025 gramersongbad.com. All rights reserved.