স্টাফ রিপোর্টার: বিশ্বের একাধিক অঞ্চলে টানা বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। হিমাচল প্রদেশ, পাকিস্তানের পাঞ্জাব এবং যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে, টানা বৃষ্টিতে বাংলাদেশেও একাধিক নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় তৈরি হয়েছে শঙ্কা—তবে আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ বলছে, আপাতত বড় কোনো বন্যার সম্ভাবনা নেই।
বাংলাদেশে একটানা বৃষ্টিপাত, কিছু অঞ্চলে নদীর পানি বৃদ্ধি
সোমবার রাত থেকে দেশের প্রায় সব বিভাগেই টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। পটুয়াখালী, কক্সবাজার, ফেনী, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে একশ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শুধু মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ফেনীতে ২২২ মি.মি. বৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের কিছু স্থানে আরও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস এবং নগর এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতার সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। একইসাথে, সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়ার সম্ভাবনার কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আপাতত বন্যার আশঙ্কা নেই: পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের বড় নদীগুলোর পানি এখনো বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন,
“ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, গঙ্গা, পদ্মাসহ প্রধান নদীগুলোর পানি বিপদসীমার নিচেই রয়েছে। ফলে আগামী কয়েক দিনে বড় ধরনের বন্যার শঙ্কা নেই।”
তবে তিনি সতর্ক করেছেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের মুহুরি ও সাঙ্গু নদীর পানি সতর্কসীমার কাছাকাছি চলে এসেছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে এসব নদীর পানি স্বল্প সময়ের জন্য বিপদসীমা স্পর্শ করতে পারে।
আঞ্চলিক পরিস্থিতি: ভারতে ভূমিধস, পাকিস্তানে প্রাণহানি
ভারতের হিমাচল প্রদেশে গত ২০ জুন থেকে প্রবল বর্ষণ ও ভূমিধসে মারা গেছেন অন্তত ৭৮ জন। এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানা যায়, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মান্ডি জেলা।
পাকিস্তানের পাঞ্জাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ভারী বর্ষণে প্রাণ হারিয়েছেন ৭ জন। দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আরও দুই দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ভয়াবহ বন্যা, প্রাণহানি শতাধিক
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস রাজ্যে ভয়াবহ বন্যায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১০৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন আরও অন্তত ৪০ জন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্যারি কাউন্টি— যেখানে মারা গেছেন প্রায় ৭৫ জন। উদ্ধার কাজ এখনও চলমান রয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও ধ্বংসস্তুপে বিষধর সাপের উপস্থিতি উদ্ধারকাজকে ব্যাহত করছে।
বৃষ্টি কমবে কবে?
আবহাওয়া অফিসের তথ্যে জানা গেছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ওপর অবস্থানরত লঘুচাপটি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দূরে সরে যাওয়ায় বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত কমতে পারে। তবে সে পর্যন্ত চট্টগ্রামসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেন, “বর্তমানে বৃষ্টির প্রবণতা দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে বেশি— উত্তরাঞ্চলে নয়। ফলে বন্যার সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। তবে পাহাড়ি অঞ্চলে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।”
উপসংহার
বিশ্বজুড়ে বন্যা ও জলবায়ুজনিত দুর্যোগ বাড়লেও বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। তবে জুলাই মাস সাধারণত দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপ্রবণ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ , ই-মেইল: ই-মেইল নং : gsongbad440@gmail.com , মোবাইল-০১৭১১-৩৫৯৬৩১
Copyright © 2025 gramersongbad.com. All rights reserved.